বিভাগীয় প্রধান এবং ডিনের সামনে ইন্টারনাল পরীক্ষার খাতা দেখছেন পড়ুয়ারা। ছবি: সংগৃহীত।
ইন্টারনাল পরীক্ষার খাতা না দেখেই নম্বর বসিয়ে দিয়েছেন শিক্ষক! কখনও আবার নম্বর বসানো হয়েছে ‘রাজনৈতিক রং’ দেখে! এমনই অভিযোগ উঠল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা এবং গণজ্ঞাপন বিভাগে। প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন এবং বিভাগীয় প্রধানের ঘরে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন যাদবপুরের ছাত্রদের একাংশ। বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে উপাচার্যের ভবনের সামনেও।
গত বেশ কিছু দিন ধরেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা এবং গণজ্ঞাপন বিভাগকে ঘিরে একাধিক জল্পনা চলছে। দিন কয়েক আগে অভিযোগ ওঠে, ওই বিভাগের ২০২৩-’২৫ ব্যাচের ‘ল অ্যান্ড এথিক্স’ বিষয়ের ৫০টি খাতা না দেখেই নম্বর বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরেই সরব হন ক্ষুব্ধ পড়ুয়াদের একাংশ। সোমবার উপাচার্যের দফতরে অনশন শুরু হয়। শেষে রাতের দিকে কর্তৃপক্ষ লিখিত ভাবে শুক্রবারের মধ্যে ফলপ্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিলে অনশন ওঠে। এর পরেও সন্দেহ হওয়ায় ২০২৩-’২৫ ব্যাচের ছাত্রেরা বৃহস্পতিবার বিভাগে গিয়ে তাঁদের ইন্টারনাল পরীক্ষার খাতা দেখতে চান। কিন্তু সেই খাতার বান্ডিল খুলে দেখা যায়, সেই খাতাগুলিতেও কোথাও কোনও কলমের আঁচড় নেই! এর পরেই ফের এক দফা বিক্ষোভ শুরু হয়েছে যাদবপুরে।
যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিভাগ। বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অধ্যাপক বলেন, ‘‘তৃতীয় সিমেস্টারের কয়েকটি খাতায় নম্বর নেই, পরীক্ষকের সই-ও নেই। কিন্তু বৃহস্পতিবার প্রথম ও দ্বিতীয় সিমেস্টারের ইন্টারনালের খাতা নিয়ে নতুন করে যে অভিযোগ উঠেছে, তা অসত্য।’’ তাঁর মতে, কোনও কোনও শিক্ষক খাতায় নম্বর বসান। কেউ আবার মূল্যায়নের পর প্রাপ্ত নম্বর সরাসরি ক্রমিক নম্বরের তালিকা অনুযায়ী বসিয়ে দেন। সেটা সম্পূর্ণ শিক্ষকের ব্যাপার। তাই কোনও কোনও ক্ষেত্রে ইন্টারনালের খাতায় প্রাপ্ত নম্বর না-ই থাকতে পারে। এ বিষয়ে বিভাগীয় প্রধান পার্থ মুখোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বুধবার ছাত্রেরা উপাচার্য়ের কাছে গিয়েছিলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি ছাত্রদের ইন্টারনাল পরীক্ষার খাতাগুলি দেখার অনুমতি দেন। সেই মতো আজ ছাত্রেরা এসেছে। দেখা গিয়েছে, কয়েকটি খাতায় প্রাপ্ত নম্বর এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের সই নেই। এই অভিযোগ নিয়ে ছাত্রেরা ফের উপাচার্যের কাছে গিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ডিনের তরফেও শীঘ্রই উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলা হবে।’’ তবে এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তী উপাচার্য ভাস্কর গুপ্তের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। ফোন তোলেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসুও।
এরই মাঝে আবার অভিযোগ উঠছে, ২০২২-’২৪ ব্যাচের ক্ষেত্রেও ইন্টারনাল পরীক্ষার বেশির ভাগ খাতা না দেখেই নম্বর বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অথচ ওই পড়ুয়ারা সমস্ত পরীক্ষার মার্কশিট আগেই হাতে পেয়ে গিয়েছেন! পেয়ে গিয়েছেন স্নাতকোত্তর স্তরের শংসাপত্রও। যাদবপুরের সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২২-’২৪ ব্যাচের এমনই এক ছাত্র দেবকুমার মল্লিক বলছেন, ‘‘বহু খাতা না দেখেই নম্বর দেওয়া হয়েছে। একই বিষয়ে ইচ্ছে মতো কাউকে বেশি, কাউকে কম নম্বর দেওয়া হয়েছে। কখনও আবার নম্বর দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক রং দেখে। যে সব ছাত্রছাত্রী দেশের সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ, তাঁদের খাতা কী ভাবে না দেখেই নম্বর বসিয়ে দেওয়া যায়?’’ একই কথা বলছেন যাদবপুরের তৃণমূল ছাত্রপরিষদের সভাপতি কিশলয় রায়। কিশলয়ের মতে, ‘‘এর আগেও বহু বার বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি। আসলে এ সবের নেপথ্যে যাদবপুরে শিক্ষকদের সংগঠন যাদবপুর ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (জুটা)-র হাত রয়েছে। এখানকার কিছু কিছু শিক্ষক মনে করেন, তাঁরা যা-ই করুন না কেন, কেউ তাঁদের কিছু করতে পারবে না। জুটার মদতেই যাদবপুরে এ সব অনৈতিক কার্যকলাপ ফুলেফেঁপে উঠেছে।’’
চলতি সপ্তাহের শুরুতে অভিযোগ ওঠে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা এবং গণজ্ঞাপন বিভাগের খাতা না দেখে নম্বর দেওয়া হয়েছে। বিভাগের দুই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠে। এর পরেই শুরু হয় জল্পনা। অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরেই সরব হয়েছেন পড়ুয়াদের একাংশ। সোমবার অরবিন্দ ভবনে উপাচার্যের দফতরের সামনে এক দফা বিক্ষোভ দেখান ছাত্রেরা। শেষে রাতের দিকে কর্তৃপক্ষের তরফে শুক্রবারের মধ্যে ফলপ্রকাশের প্রতিশ্রুতি পেয়ে ক্ষান্ত হন পড়ুয়ারা। আন্দোলনকারীদের দাবি, কর্তৃপক্ষের তরফে তাঁদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, যে শিক্ষকেরা খাতা না দেখে নম্বর দিয়েছেন বলে অভিযোগ, তাঁদের কারণ দর্শাতে বলা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy