ময়না কেন ছাড়তে চায় না বিজেপি? ২১ ভোটের অঙ্ক কষেই কি? —ফাইল ছবি।
পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নায় দলীয় নেতার মৃত্যু নিয়ে লাগাতার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পাশাপাশি, ময়নায় নিহত বিজেপি বুথ সভাপতি বিজয়কৃষ্ণ ভুঁইয়ার স্ত্রীর হাতে পাঁচ লাখ টাকার চেক তুলে দিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বুঝিয়ে দিয়েছেন, পরিবারের পাশেই রয়েছে দল। তিনিও জানিয়েছেন, বুথ সভাপতির মৃত্যু নিয়ে শেষ দেখে ছাড়বে বিজেপি। অর্থাৎ, বিজেপি ময়নার ময়দান ছাড়তে রাজি নয়। কারণ, প্রাক্তন ক্রিকেটার অশোক দিন্দার জেতা ময়না বিধানসভা আসন আগামী লোকসভা নির্বাচনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
সোমবার রাতে বিজেপির বুথ সভাপতি বিজয়কৃষ্ণকে খুনের অভিযোগ ওঠে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। ময়নার বাকচা পঞ্চায়েতের গোরামহল এলাকার ওই ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। মঙ্গলবারই এলাকায় পৌঁছন শুভেন্দু। সেখানেই তিনি দাবি করেন, বিজয়কৃষ্ণের দেহের দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্ত করাতে হবে। এবং তা করাতে হবে কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত হাসপাতালে। বুধবার সেই মর্মে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। হাইকোর্ট সেই দাবি মেনেও নিয়েছে। শুভেন্দু ওই গ্রামে দাঁড়িয়েই মঙ্গলবার ১২ ঘণ্টার ময়না বন্ধের ডাক দিয়েছিলেন। সেই বন্ধ নিয়েও বুধবার উত্তেজনা ছড়ায়। বুধবার সেই গ্রামে পৌঁছন সুকান্ত।
বুধবারের বন্ধের পর বৃহস্পতিবার ময়নায় বড় আকারে মিছিলের ডাক দিয়েছেন শুভেন্দু। পাশাপাশি আরও বড় মাপের আন্দোলনের ইঙ্গিত দিয়েছেন শুভেন্দু। বৃহস্পতিবারের মিছিলের পরে তিনি তা ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন। মঙ্গলবারেই শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘‘আপনাদের সবাইকে সাক্ষী রেখে বলে গেলাম, বিজয়কৃষ্ণ খুনের ঘটনায় আপনারাও স্থায়ী শান্তি পাবেন। ছাড়ার কোনও সিন নেই। কী করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর পুলিশকে আটাকাতে হয়, শুভেন্দু অধিকারী তা জানে।’’
প্রসঙ্গত, শুভেন্দু এবং সুকান্ত নিহত বিজয়কৃষ্ণকে ‘নমঃশূদ্র’ সম্প্রদায়ের বলে উল্লেখ করেছেন। এই পরিচয় প্রকাশ্যে আনা এবং বিজেপির ময়নার মাটি আঁকড়ে থাকার পিছনে রয়েছে রাজনীতির অঙ্ক।
ময়না বিধানসভা তমলুক লোকসভার অন্তর্গত। গত লোকসভা নির্বাচনে এই আসনে তৃণমূলের দিব্যেন্দু অধিকারী জিতেছিলেন ১,৯০,১৬৫ ভোটে। বিজেপি ৩৭.২ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছিল। কিন্তু দিব্যেন্দুর দাদা শুভেন্দু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য তমলুকের হিসাবও বদলে যায়। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে তমলুকে বিজেপি পিছিয়েছিল মাত্র ২১ ভোটে। ওই লোকসভা এলাকার সাতটি বিধানসভা মিলিয়ে তৃণমূল ভোট পেয়েছে ৭,১৪,৩৯৮টি। সেখানে বিজেপির প্রাপ্তি ৭,১৪,৩৭৭ ভোট। দুই দলের ভোটপ্রাপ্তির হার যথাক্রমে ৪৬ শতাংশ এবং ৪৫.৯ শতাংশ।
বিজেপির এই এগিয়ে থাকায় ‘অবদান’ রয়েছে ময়নার। তবে খুব বেশি ভোটে নয়। দিন্দা জিতেছিলেন ১,২৬০ ভোটে। তমলুক লোকসভা আসনের নন্দীগ্রামে শুভেন্দু জেতেন ১,৯৫৬ ভোটে। তৃতীয় আসন হলদিয়ায় বিজেপির তাপসী মণ্ডল জেতেন ১৫,০০৮ ভোটে। বাকি চারটিতে বিজেপি হারলেও ব্যবধান খুব বেশি ছিল না। তৃণমূল তমলুকে ৭৯৩, পাঁশকুড়া পূর্বে ৯৬৬০, নন্দকুমারে ৫৪০৬ এবং মহিষাদলে ২৩৮৬ ভোটে জিতেছিল।
এই অঙ্কেই বিজেপির চোখে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের জন্য তুলনামূলক ‘সহজ’ আসন তমলুক। বিজেপি সূত্রে খবর, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে শুভেন্দু কথা দিয়ে রেখেছেন, কাঁথি এবং তমলুক আসনে লোকসভায় পদ্ম ফোটানোর দায়িত্ব তাঁর। তাতে ময়না গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই আসনটি ‘সংরক্ষিত’ না হলেও এখানে বড় সংখ্যায় তফসিলি জাতির মানুষের বাস। সেই সঙ্গে বড় সংখ্যায় রয়েছেন অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষও। যেমন ছিলেন সদ্যমৃত ৬০ বছরের বিজয়কৃষ্ণও।
ময়নার গা-ঘেঁষা আরও দু’টি বিধানসভা আসনের জনবিন্যাসও এই এলাকার মতোই। পূর্ব মেদিনীপুরেরই চণ্ডীপুর এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং। এই দু’টি আসন এখন তৃণমূলের দখলে। কিন্তু বিজেপি মনে করে ময়নার মানুষকে কাছে পেলে সবং এবং চণ্ডীপুরেও তার সুফল মিলবে। গেরুয়া শিবির আরও মনে করে যে, এই অঙ্কের কথা মাথায় রেখেই ময়নায় বিজেপিকে দুর্বল করতে চায় তৃণমূল। সেই দাবির সত্যতা নিয়ে জল্পনা এবং বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু যা নিয়ে বিতর্ক নেই— তমলুক লোকসভা ধরে রাখতে হলে ময়নায় দলের শক্তি ফেরাতে হবে তৃণমূলকে। ফলে দুই শিবিরের ‘পাখির চোখ’ হয়ে যাওয়া ময়না খুব সহজে শান্ত হবে, এমন কথা হলফ করে কেউই বলতে পারছেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy