শীর্ষ নেতৃত্ব প্রশ্ন করলে কী জবাব দেবেন? তা-ও ঠিক করে রেখেছেন দিলীপ ঘোষ।
পর পর তিন দিন। রাজ্যে সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে সরব দিলীপ ঘোষ। প্রথম দিন রবিবার কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের অনুষ্ঠানে। এর পরে সোম ও মঙ্গলবার প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে। কিন্তু কেন এত রাগ? দল এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে তিনি ‘অস্বস্তি’-তে ফেলেছেন অভিযোগে শীর্ষ নেতৃত্ব প্রশ্ন করলে কী জবাব দেবেন? সেটাও ঠিক করে রেখেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি। ঘনিষ্ঠ মহলে সে কথা জানিয়েছেনও তিনি।
মঙ্গলবার আনন্দবাজার অনলাইনকে দিলীপ বলেন, ‘‘আমি দল বা সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলতে কিছু বলিনি। আর আমি যেমন দলের কাছে দায়বদ্ধ, তেমন কর্মীদের কাছেও দায়বদ্ধ। সেটা আরও বেশি করে। তৃণমূলের সন্ত্রাসে মৃত কর্মীদের পরিবারের কাছেও আমি দায়বদ্ধ। তাঁদের মনের কথাই আমার মুখ থেকে বেরিয়েছে। আমি সমালোচনা করেছি স্বজন-হারানো বিজেপি পরিবারের প্রতিনিধি হিসাবে।’’
রবিবার কলকাতায় এক সরকারি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অধীন সিবিআইকে পরোক্ষে ‘পোষমানা কুকুর’ বলে ইঙ্গিত করেছিলেন দিলীপ। পাশাপাশিই প্রশংসা করেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের অধীনস্থ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর। বিজেপির এই সাংসদ প্রকাশ্যেই জানিয়েছিলেন, সিবিআই আধিকারিকদের একাংশ টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়ে যান! বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে তাঁদের ‘সেটিং’ রয়েছে বলেও মন্তব্য করেছিলেন। এমন ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন যে, ইডির উপর তাঁর ভরসা আছে। কারণ, তারা বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করেছে। পরে সোম ও মঙ্গলবার সকালে নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে একই কথার পুনরাবৃত্তি শোনা যায় তাঁর মুখে।
রবিবারের মন্তব্যের পরেই দিল্লি থেকে ‘কড়া বার্তা’ পেয়েছেন দিলীপ। তবু তিনি চুপ থাকছেন না। একই সঙ্গে শীর্ষ নেতৃত্ব জানতে চাইলে কী বলবেন, সে জবাবও তৈরি করে রেখেছেন বলে ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, ‘‘দিলীপ’দা সোজা কথা সোজা ভাবে বলতে ভালবাসেন। এই কারণে তাঁর বক্তব্য নিয়ে বার বার বিতর্ক হয়। এ বারেও সেটাই হয়েছে। কিন্তু শীর্ষ নেতৃত্ব এটাও জানেন যে, দিলীপদা দলকে কতটা ভালবাসেন।’’ তবে দিলীপ-গোষ্ঠীর নেতাদেরই অনেক মনে করছেন, সিবিআই-ইডির তদন্ত নিয়ে রাজ্য রাজনীতি যখন উত্তপ্ত, তখন কিছু বলার আগে ‘স্থান-কাল-পাত্র’ বিবেচনা করা উচিত ছিল। ‘সত্যি কথা’ বলতে গিয়ে বিরোধীদের হাতে রাজনৈতিক অস্ত্র তুলে দেওয়াটাও ঠিক নয়। সতর্ক থাকাও দরকার।
রাজ্য নেতৃত্বের অনেকেই যে তাঁর বলা কথা পছন্দ করছেন না, সেটাও দিলীপের কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তিনি কোন প্রেক্ষিতে কী বলেছেন, তা জানতে চেয়ে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে দিল্লি। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাজ্যের সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয় একান্ত বৈঠকে দিলীপ যাতে এমন মন্তব্য না করেন, তা নিয়ে কথাও বলেছেন। তবে দিলীপ তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, কয়লা পাচার, গরু পাচার বা নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত নিয়ে তাঁর কোনও অভিযোগ নেই। সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে তাঁর মূল আপত্তি ‘ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস’-এর তদন্তের বিষয়ে।
দিলীপ বলেন, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনের পরে রাজ্য জুড়ে আমাদের কর্মীদের উপরে অত্যাচার হয়েছে। ৫০-এর বেশি কর্মী খুন হয়েছেন। হাজারে হাজারে কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া হয়েছেন।মহিলাদের সম্মানহানি হয়েছে। সেই সময় আমি রাজ্যের সভাপতি ছিলাম। তাই আমার উপরেই বিচার চাওয়ার দায় বর্তায়।’’ একনিশ্বাসে দিলীপ বলে যান, ‘‘সেই সময় কর্মীদের সুবিচারের জন্য অনেক লড়তে হয়েছে। নড্ডা’জি (বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা) নিজে কলকাতায় এসেছিলেন। মানবাধিকার কমিশন বলেছিল, রাজ্যে আইনের শাসন নয়, শাসকের আইন চলছে। আদালত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওই তদন্তে সত্যিই কেউ সুবিচার পেয়েছেন? তদন্তের কোনও অগ্রগতি কি দেখা যাচ্ছে?’’
তিনি কি এই কথাগুলো শীর্ষ নেতৃত্বকে বলবেন? জবাবে দিলীপ বলেন, ‘‘আমার কাছ জানতে চাওয়া হবে কি না জানি না। জানতে চাইলে নিশ্চয়ই বলব। ছেলের খুনের সুবিচার মিলবে, দোষীরা সাজা পাবে বলে যে মা’কে কথা দিয়েছিলাম, এখন আমি সেই মায়ের সামনে কোন মুখে দাঁড়াব? যে স্বামী হারানো বা নির্যাতিত বোনকে বিচার মিলবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলাম, তাঁদেরই বা কী বলে সান্ত্বনা দেব?’’ আবেগঘন গলায় দিলীপের আরও দাবি, ‘‘কর্মীদের, স্বজনহারানো মা-বোনেদের কষ্ট দেখে আমার বুক ফাটে। আর তাতেই আমার মুখ ফোটে। সেটা কারও অপছন্দ হতে পারে। কিন্তু আমার কাছে ওই কথাগুলো খুব সত্যি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy