শুভেন্দু যে ভাষায় টুইট করেছেন তা ‘অসংবেদনশীল’ বলেও অভিযোগ ওঠে। ফাইল চিত্র।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর গত বছরের ১৩ নভেম্বরের টুইটে উল্লেখ থাকা ‘কয়লা ভাইপো’ কে? টুইটে উল্লেখ থাকা ‘লেডি কিম’ই বা কে? সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাই কোর্ট। বুধবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মামলার শুনানি চলছিল বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্যের এজলাসে। শুনানি চলাকালীন বিচারপতি ভট্টাচার্যের পর্যবেক্ষণ, ‘‘যে টুইটের কথা বলা হচ্ছে সেখানে ‘কয়লা ভাইপো’র কথা বলা হয়েছে! ইনি কে? মামলকারী টুইটে তো কারও নাম ব্যবহার করেননি।’’
বিচারপতি ভট্টাচার্য যোগ করেন, ‘‘লেডি কিম! তিনি কে? কিম জং উন উত্তর কোরিয়ার শাসক বলে জানি। তাঁকেই কি বলা হয়েছে? না কি মজা ছিল?’’
গত বছর ১৩ নভেম্বর অভিষেকের ৩ বছরের ছেলে আয়াংশের জন্মদিনের কথা উল্লেখ করে একটি টুইট করেছিলেন বিরোধী দলনেতা। সেই টুইটেই ‘কয়লা ভাইপো’ এবং ‘লেডি কিমের’ উল্লেখ করেছিলেন শুভেন্দু। শুভেন্দুর এই টুইট ঘিরেই ঘনায় বিতর্ক।
শুভেন্দু লিখেছিলেন, ‘‘কলকাতার একটি হোটেলে মহা ধুমধাম করে অভিষেকের ছেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠান হচ্ছে। সেখানে ৫০০ পুলিশ, এমনকি বম্ব স্কোয়াড ও ডগ স্কোয়াড নিয়োগ করা হয়েছে। বসানো হয়েছে মেটাল ডিটেক্টর। আর এই গোটাটাই হচ্ছে মমতার নিয়ন্ত্রিত পুলিশের তত্ত্বাবধানে।’’
শুভেন্দুর টুইট সামনে আসার পরই তৃণমূল জানিয়ে দেয়, ওই তথ্য ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিকর। শুভেন্দু যে ভাষায় টুইট করেছেন তা ‘অসংবেদনশীল’ বলেও অভিযোগ ওঠে।
শুভেন্দুর করা টুইটকে কেন্দ্র করে তাঁকে শোকজ় নোটিস পাঠিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন। তিন বার নোটিস পাঠানো হয়েছিল বিরোধী দলনেতাকে। কমিশনের এই নোটিস খারিজের আবেদনে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন বিরোধী দলেনতা। বুধবার সেই মামলারই শুনানিতে শুভেন্দুর আইনজীবী জানান, শিল্পা দাস নামে এক মহিলা কমিশনে অভিযোগ করেন। তার ভিত্তিতেই নোটিস পাঠিয়েছিল কমিশন।
এর পর বিচারপতি ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, ‘‘যিনি অভিযোগ করেছেন তাঁর সঙ্গে এই টুইটের কী সম্পর্ক রয়েছে? তাঁর কি কোনও ক্ষতি হয়েছে বা স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়েছে?’’
অন্য দিকে কমিশনের আইনজীবী জানান, ‘‘অভিযোগকারিণী একজন মা। বিরোধী দলনেতার ওই মন্তব্য শিশু অধিকার লঙ্ঘন করে। একটি শিশুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানকে কটাক্ষ করার অভিযোগ রয়েছে। আর সেই কারণেই তিনি মামলা করেছেন।’’
অভিযোগ সত্যি হলে কমিশনের কোনও পদক্ষেপ করার ক্ষমতা রয়েছে কি না, তা-ও জানতে চান বিচারপতি ভট্টাচার্য।
জবাবে কমিশনের আইনজীবী জানান, অভিযোগের গুরুত্ব বুঝে অনুসন্ধান করা হয়। কমিশন নিজেও শুনানি করে। তার পর আইন অনুযায়ী অভিযুক্তকে জেলা দায়রা বিচারকের কাছে পাঠানো হতে পারে বলে জানান কমিশনের আইনজীবী।
শুনানি চলাকালীন কমিশনের আইনজীবী হলফনামা দিয়ে উত্তর দেওয়ার জন্য আদালতে সময় চেয়ে নেন। শুভেন্দুও এ বিষয়ে অতিরিক্ত হলফনামা জমা দিতে চান বলে আদালতে তাঁর আইনজীবী জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার আবার এই মামলাটির শুনানির দিন ধার্য হয়।
এই প্রসঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র বিশ্বজিৎ দেব বলেন, ‘‘এই বিষয়টি বিচারাধীন। তাই আমার কোনও মন্তব্য করা উচিত হবে না। কিন্তু এটুকু বলতে পারি, যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলে অপপ্রচার করে চলেছেন। যেখানে অভিষেকের দু’বছরের শিশুকেও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। বাংলার মানুষ শুভেন্দুকে যথাসময়ে জবাব দেবে। আসলে ওঁনার সাহস নেই অভিষেকের নাম করার। সর্বদা ভাববাচ্যে কথা বলেন। একবার নাম করলে যে উনি মামলার সম্মুখীন হবেন, তা শুভেন্দু ভাল বোঝেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy