গাজলের সভা মঞ্চে এক আদিবাসী উপভোক্তার হাতে মঙ্গলবার ধামসা ও মাদল তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: স্বরূপ সাহা
দুর্নীতি আর আর্থিক অনিয়ম নিয়ে বিজেপি-তৃণমূলের তরজা রাজনীতি থেকে প্রশাসনিক স্তরে পৌঁছে গিয়েছে বহু দিন। একাধিক বিষয়ে দেনা-পাওনা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েনও চলছে। সোমবার তাতেই ঝাঁঝালো মাত্রা যোগ করে পাল্টা আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথা, ‘‘আমরা চোর যদি হই তোরা তা হলে ডাকাত!’’ নাম না করলেও তাঁর নিশানায় যে বিজেপি, তা-ও স্পষ্ট করেছেন তিনি।
এ দিন মালদহে সরকারি পরিষেবা বিলির কর্মসূচির মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা বিনামূ্ল্যে রেশনের চাল পৌঁছে দিচ্ছি। এর পরেও এরা সব চোর বলতে লজ্জা করে না? তুই তো বড় ডাকাত।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘বাবুরা, নিজেরা লুকিয়ে লুকিয়ে কী কী করেছ?’’ চুরির অভিযোগে নির্দিষ্ট কারও নাম করেননি মমতা। তবে ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘‘আমি এক দিক থেকে খুশি। কারণ কয়েকটা ডাকাত, গদ্দার আমার দল থেকে বিদায় নিয়েছে। এই ডাকাত, গদ্দাররাই এই কাজগুলি করেছিল।’’
রাজনৈতিক মহলের ধারণা, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে চলে যাওয়া শুভেন্দু অধিকারীকেই বারবার ‘গদ্দার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তিনি। এই প্রসঙ্গেই পুরুলিয়া জেলার ‘কোটা’য় বরাদ্দ সরকারি চাকরি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূলে থাকাকালীন বেশ কিছু দিন এই জেলার দায়িত্বে ছিলেন শুভেন্দুই। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আদালতকে দু’পায়ে প্রণাম করে বলব, এক বার খোঁজ নিয়ে দেখুন। অন্যরা অন্যায় করলেও নিশ্চয় ব্যবস্থা নেবেন।’’
এই মন্তব্য নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে পাল্টা বিঁধেছে বিরোধীরাও। রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আগেও ‘আমরা সবাই চোর’ লেখা প্ল্যাকার্ড গলায় ঝুলিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মিছিল করেছেন। তবে তৃণমূলের লুটের টাকা কোথায় কোথায় উদ্ধার হয়, এ রাজ্যের মানুষ জানেন।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল চোর হলে বিজেপি ডাকাত! এটাই তো আমরা বলছি। মুখ্যমন্ত্রী স্বীকার করুন, তাঁর দল চোর! বিজেপি ডাকাত। সেই ডাকাতকে বাংলায় এনেছে তৃণমূলই!’’
কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন আরও বলেন, ‘‘কেন্দ্র টিম পাঠিয়ে অশ্বডিম্ব প্রসব করছে। ডিমডিমাডিমডিম বাজিয়ে বেড়াচ্ছেন।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে ঘটনা ঘটলে ক’টা টিম যায়? গুজরাতের নিয়োগ কেলেঙ্কারি, মধ্যপ্রদেশে একগাদা কেলেঙ্কারি, কটা টিম যায়?’’ রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘যদি কোনও গোলমাল না থাকে, তা হলে তো কেন্দ্রীয় দলকে ওঁর স্বাগত জানানো উচিত। আসলে উনি জানেন, রাজ্য জুড়ে ওঁর সোনার টুকরোরা কী করেছেন।’’
বিজেপি-সহ বিরোধীদের দিকে আঙুল তুললেও নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যখন শিক্ষক নিয়োগ হয়েছিল, আমি কোনও দিন কিছু বলিনি। আমার বলা শোভা পায় না।’’ এ সংক্রান্ত মামলা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘আদালতে মামলা চলছে। আশা করছি, ভাল বিচার হবে। কেউ অন্যায় করলে তার দায় আমরা নেব না।’’ কেন্দ্রের কাছে প্রাপ্য ১০০ দিনের টাকা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ফের বলেন, ‘‘এই টাকা দিল্লি দয়া করে দেয় না। পাওনা দেয় না, গাল দেয়। গালি দিলে আপত্তি নেই, গাল দেওয়ার সঙ্গে টাকাও দাও।’’ জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু হওয়ায় কারণে তাদের বঞ্চনা করতে গিয়ে রাজ্যকেই বঞ্চনা করা হচ্ছে, এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy