রাজীব মিশ্র, প্রবীণ কুমার ত্রিপাঠী এবং ভোলানাথ পাণ্ডে।
রাজীব কুমারের পর আবার আইপিএস অফিসারদের নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সঙ্ঘাতে রাজ্য সরকার। দক্ষিণ ২৪ পরগনার শিরাকোলে বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডার কনভয়ে হামলার পর রাজ্যের তিন আইপিএস অফিসারকে কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে নিতে চেয়ে নবান্নকে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। কলকাতা থেকে ডায়মন্ডহারবারে নড্ডার কনভয় যাওয়ার সময় যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে ওই তিন আইপিএস ‘দায়’ এড়াতে পারেন না বলে মনে করছে কেন্দ্র। কিন্তু রাজ্য তাঁদের ‘নো অবজেকশন’ দিতে চাইছে না। অর্থাৎ, রাজ্য ওই তিন অফিসারকে কেন্দ্রের ‘হাতে’ ছাড়তে চাইছে না।
ওই ছাড়পত্র না পেলে তিন অফিসার ডেপুটেশনে কেন্দ্রে যেতে পারবেন না। কারণ, ইচ্ছুক হোন বা অনিচ্ছুক— যে কোনও রাজ্য থেকেই যে কোনও অফিসারকে কেন্দ্রীয় সরকারের ডেপুটেশনে যেতে গেলে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের থেকে ছাড়পত্র (নো অবজেকশন) পেতে হয়।
কারা এই তিন আইপিএস? তাঁরা হলেন রাজীব মিশ্র, প্রবীণ কুমার ত্রিপাঠী এবং ভোলানাথ পাণ্ডে। প্রসঙ্গত, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় প্রকাশ্যেই বলেছেন, রাজ্যের মোট ২১ জন আইপিএস অফিসারের তালিকা তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে পাঠিয়েছেন, যাঁরা তাঁর মতে, রাজ্য সরকারের ‘হয়ে’ কাজ করছেন। এই তিনজনের নাম সেই তালিকায় রয়েছে কি না, তা অবশ্য শনিবার রাত পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।
আরও পড়ুন: ভেন্টিলেশনে কত ঘণ্টা, কবে বাড়ি যাব? বুদ্ধদেবের প্রশ্ন চিকিৎসকদের
ওই তিন অফিসারের মধ্যে রাজীবই সবচেয়ে সিনিয়র। তিনি ১৯৯৬ ব্যাচের আইপিএস। তিনি আপাতত আইজি (দক্ষিণবঙ্গ) পদে রয়েছেন। আগে ছিলেন আইজি (পশ্চিমাঞ্চল)। কলকাতা পুলিশের বন্দর, সেন্ট্রাল বিভাগের ডেপুটি কমিশনারও ছিলেন। ছিলেন কলকাতা পুলিশের য়ুগ্ম কমিশনার (সদর)। আরও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন। পুলিশ মহলে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর ‘আস্থাভাজন’ বলেই পরিচিত। একবারই অনভিপ্রেত বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন রাজীব। দিঘার সমুদ্রসৈকতে মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে নিয়ে কেক খাওয়ার পর উর্দি পরেই রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেছিলেন রাজীব। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য ছিল, মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা জানানোটা স্বাভাবিক।
প্রবীণ ২০০৩ ব্যাচের আইপিএস অফিসার। আপাতত তিনি ডিআইজি (প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ)-এর দায়িত্বে। একটা সময়ে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান ছিলেন প্রবীণ। তখন তিনি বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলার কিনারা করেছেন। কাজের দিক দিয়ে তিনিও মুখ্যমন্ত্রীর ‘আস্থাভাজন’ প্রশাসনিক মহলে পরিচিত। বিভিন্ন বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতেন বলেও সহকর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন। গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি সশস্ত্র পুলিশের যুগ্ম কমিশনারের পদেও ছিলেন প্রবীণ।
ভোলানাথ হলেন ২০১১ব্যাচের আইপিএস। আপাতত তিনি ডায়মন্ড হারবারের পুলিশ সুপারের পদে রয়েছেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা বলেন, তরুণ এই আইপিএস ডায়মনন্ড হারবারের সাংসদ তথা শাসক তৃণমূলে দু’নম্বর নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আস্থাভাজন’। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি পুলিশমহলেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন।
আরও পড়ুন: অমিত-সফরের আগে শান্তনুর মান ভাঙাতে ঠাকুরনগরে কৈলাস
এখন দেখার, এই তিন আইপিএসকে নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে কতটা সঙ্ঘাতে যায় রাজ্য। কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে সিবিআই অভিযানের বিরুদ্ধে ধর্মতলায় ধর্নায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেই ধর্নায় আইপিএসদের কয়েকজনের যোগ দেওয়া নিয়ে তখন বিতর্ক শুরু হয়েছিল। রাজীব-সহ পাঁচ আইপিএস অফিসার সেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। সেই সময়েও কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে সংঘাতের আবহ তৈরি হয়। তবে শেষ পর্যন্ত সিবিআই রাজীবকে গ্রেফতার করেনি। গোটা বিষয়টিতে শীর্ষ আদালত তখন হস্তক্ষেপ করেছিল। মমতাও ধর্না তুলে নিয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy