Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Royal Bengal Tiger

Tiger in Village: গ্রামে হানা কেন, চিন্তা বন দফতরে

স্থানীয় সূত্রের খবর, শীতের এই সময়ে মাঝে মধ্যে মিষ্টি জলের টানে লোকালয়ের দিকে চলে আসে বাঘ। এ বার সেই সংখ্যাটাই অনেক বেড়েছে।

কুমিরমারিতে ধরা পড়া বাঘিনি।

কুমিরমারিতে ধরা পড়া বাঘিনি। ছবি: প্রসেনজিৎ সাহা।

সমীরণ দাস 
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২২ ০৫:২১
Share: Save:

মাসখানেকের মধ্যে বার চারেক লোকালয়ে দেখা মিলেছে বাঘের। ধান জমি, বাড়ির উঠোনেও ঢুকে পড়েছে দক্ষিণরায়। এই পরিস্থিতিতে সুন্দরবনের গ্রামে গ্রামে আতঙ্কিত মানুষজন।

গত বছর দেড়েকে সুন্দরবনের নদী-খাঁড়িতে মাছ-কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের হানায় প্রাণ হারিয়েছেন জনা কুড়ি মানুষ। জখম হয়েছেন আরও অনেকে। সে সব ক্ষেত্রে বাঘের ডেরায় ঢুকে পড়ায় আক্রমণ চালায় সে। কিন্তু হঠাৎ লোকালয়ে কেন ঢুকছে বাঘ, তা ভাবাচ্ছে বন দফতরকে?

স্থানীয় সূত্রের খবর, শীতের এই সময়ে মাঝে মধ্যে মিষ্টি জলের টানে লোকালয়ের দিকে চলে আসে বাঘ। এ বার সেই সংখ্যাটাই অনেক বেড়েছে।

লকডাউনের পর থেকে জীবিকা হারিয়ে অনেকে ফিরেছেন সুন্দরবনের গ্রামে। তাঁদের অনেকে বিকল্প পেশা হিসেবে জঙ্গলমুখী হয়েছেন। বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ অনুরাগ দণ্ড বলেন, “হতে পারে, এত মানুষ মাছ ধরতে বাঘের ডেরায় ঢুকে পড়ছেন বলেই বাঘের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সে জন্য হয়তো ওরা জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ের দিকে চলে আসছে। তা ছাড়া, লোকালয় থেকে ধরা পড়া বাঘগুলিকে অনেক সময়ে তার নিজস্ব পরিবেশের বাইরে অন্যত্র ছেড়ে দেওয়া হয়। হতে পারে, সেখানে কোনও প্রতিকূলতার মুখে পড়ে ফের লোকালয়ের দিকে চলে আসছে বাঘ।”

পর্যটনের বাড়বাড়ন্ত জঙ্গলের পরিবেশ নষ্ট করছে কি না, সে প্রশ্নও উঠছে। সুন্দরবন গবেষক উজ্জ্বল সর্দার বলেন, “আজকাল কিছু পর্যটন ব্যবসায়ী কার্যত বাঘ দেখানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে পর্যটকদের জঙ্গলে আনছেন। পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ার ফলে জঙ্গলের পরিবেশে প্রভাব পড়ছে।” এর ফলেও বাঘ স্বাভাবিক পরিবেশ ছেড়ে লোকালয়ে চলে আসতে পারে বলে তাঁর অনুমান।

একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরে সুন্দরবনের উপকূল এলাকাকে রক্ষা করতে কয়েক কোটি ম্যানগ্রোভ বসানো হয়েছে। গ্রামের ধারে, নদীর পাড় বরাবর নতুন ম্যানগ্রোভের জঙ্গল তৈরি হয়েছে। কুলতলির যে জায়গায় সম্প্রতি বাঘ ঢুকে পড়েছিল, সেখানে প্রচুর নতুন ম্যানগ্রোভ তৈরি হয়েছে। এক বনকর্তার কথায়, “বাঘ সব সময়েই চায়, তার এলাকা বাড়িয়ে নিতে। সে জন্য হয়তো এই সব গ্রাম-লাগোয়া জঙ্গলকে নিজের ডেরা মনে করে সেখানে চলে আসছে।”

সম্প্রতি শুরু হয়েছে বাঘশুমারি। ২০১৮ সালের গণনায় সুন্দরবনে ৯৬টি বাঘের সন্ধান মেলে। পরবর্তী পরিসংখ্যান এসে না পৌঁছলেও বাঘের সংখ্যা গত বারের থেকে বেড়েছে বলে বনকর্তাদের একাংশের অনুমান। এই পরিস্থিতিতে জঙ্গলের গভীরে বাঘেদের নিজেদের গোলমালের ফলে কেউ কেউ লোকালয়ের দিকে সরে আসছে কি না, তা-ও ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের। গোসাবায় ঢুকে পড়া বাঘটির চরিত্র দেখে তেমনটাই অনুমান করছে বনদফতর।

সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর জোন্স জাস্টিন বলেন, “এটা বাঘেদের প্রজননের সময়। তা নিয়ে জঙ্গলে লড়াই বাধে। মনে হচ্ছে, অন্য বাঘের সঙ্গে লড়াইয়ে পেরে না উঠে বাঘটি নদী পেরিয়ে গোসাবার গ্রামে চলে এসেছে।”

স্থানীয় মৎস্যজীবীদের মতে, বাংলাদেশের দিক থেকেও নানা কারণে বাঘ এ দিকে চলে আসতে পারে। অনুরাগ দণ্ড বলেন, “কিছু একটা সমস্যা যে হচ্ছে, সেটা স্পষ্ট। আমরা নানা কিছু অনুমান করছি। কিন্তু আসল কারণ খুঁজে বার করতে গেলে সঠিক তদন্ত দরকার।”

সহ প্রতিবেদন: প্রসেনজিৎ সাহা

অন্য বিষয়গুলি:

Royal Bengal Tiger village
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy