Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
AITC

উপনির্বাচন কবে হবে, কবে নির্বাচিত হবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা, দিন গোনা শুরু তৃণমূলে

বাংলার দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রে সাধারণ নির্বাচন-সহ মোট চারটি কেন্দ্রে উপনির্বাচন হবে। একটি উপনির্বাচনে ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে লড়বেন মমতা।

নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২১ ১৭:১২
Share: Save:

রাজ্যের বকেয়া উপনির্বাচনগুলি কবে করাবে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন? দিন গোনা শুরু করেছে শাসক তৃণমূল। পশ্চিমবঙ্গের দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রে সাধারণ নির্বাচন-সহ মোট চারটি কেন্দ্রে উপনির্বাচন করাতে হবে। তার মধ্যে একটি উপনির্বাচনে ভবানীপুর বিধানসভা থেকে লড়বেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। যিনি গত ৫ মে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন। সাংবিধানিক আইন অনুযায়ী ছ’মাসের মধ্যে তাঁকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। মমতা যে ভবানীপুরে জিতবেন, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই তৃণমূলের। যেমন সংশয় নেই গোটা রাজ্যের। কিন্তু উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা করবে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। তৃণমূলের নেতাদেরএকটি অংশের উদ্বেগ, করোনা পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে না নির্বাচন অনির্দিষ্টকাল উপনির্বাচন ঝুলিয়ে রাখে নির্বাচন কমিশন। কারণ, ৫ নভেম্বরের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীকে ভোটে জিতে বিধায়ক হওয়ার শর্তপূরণ করতে হবে। ওইদিনই শেষ হচ্ছে ছ’মাসের মেয়াদ।

দলের প্রথমসারির নেতাদের একাংশ মনে করছে, কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ের ‘অজুহাত’ দেখিয়ে বিধানসভার উপনির্বাচন ঝুলিয়ে রাখা হতে পারে। দলের এক বিধায়কের কথায়, ‘‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় আমরা বারবার কমিশনকে কাঠগড়ায় তুলেছি। যুক্তিসম্মত ভাবেই তুলেছি। আমাদের মনে হয়েছে, আট দফায় বিধানসভা ভোট করানো গোটা রাজ্যে করোনা ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ। এখন নির্বাচন কমিশন যদি বলে করোনা নির্মূল না-হওয়া পর্যন্ত বাংলায় বিধানসভা উপনির্বাচন হবে না! কমিশন চাইলে তো মনে করতে পারে করোনার তৃতীয় ঢেউ থিতিয়ে না গেলে ভোট করানো যাবে না। তৃতীয় ঢেউ আসার কথা অক্টোবরে। আর ভোট করাতে হবে নভেম্বরের প্রথমে।’’ প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণের কারণে বিধানসভা উপনির্বাচন না হওয়ার নজির বাংলায় রয়েছে। ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর প্রয়াত হয়েছিলেন ফালাকাটার তৃণমূল বিধায়ক অনিল অধিকারী। কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণে সেখানে দেড় বছর ভোট হয়নি। সদ্যসমাপ্ত বিধানসভার ভোটে ওই আসনে ভোট হলে বিধায়ক হয়েছেন বিজেপি-র দীপক বর্মন। এমন নজিরই চিন্তায় রেখেছে তৃণমূল নেতৃত্বকে।

চিকিৎসক মহলের অভিমত, অক্টোবরে কোভিডের তৃতীয় ঢেউ আসতে পারে দেশে।সেই অনুয়াযী বিভিন্ন স্তরে প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে। কমিশন যদি করোনার কারণ দেখিয়ে উপনির্বাচন স্থগিত করে রাখে, তা হলে মুখ্যমন্ত্রীকে বিকল্প পথ খুঁজে নিয়ে প্রশাসন পরিচালনা করতে হবে। দলের নেতাদের বক্তব্য, সে ক্ষেত্রে মমতাকে মুখ্যমন্ত্রিত্বে ইস্তফা দিয়ে একদিন পর আবার শপথ নিতে হবে। ওই নেতার কথায়, ‘‘তাতে পরিস্থিতির খুব অদলবদল হবে না। কিন্তু একটা হেনস্থা হবে তো বটেই। তবে আমাদের আশা, কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন তেমনকিছু করবে না। ৫ নভেম্বরের আগেই রাজ্যে উপনির্বাচন হয়ে যাবে, মুখ্যমন্ত্রীও ভবানীপুরে জিতে যথাবিহিত পদ্ধতিতে প্রশাসন চালাবেন।’’প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর কাছে সামান্য ভোটে হেরে গিয়েছেন।

তৃণমূলের নেতাদের একাংশের বক্তব্য, উপনির্বাচন যদি নির্দিষ্ট সময়ে না-ও হয়, তা হলেও মমতা পদত্যাগ করে একদিন পরে আবার শপথ নিয়ে আরও ছ’মাস সময় পাবেন। তবে প্রাক্তন বিধায়ক তথা আইনজীবী অরুণাভ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘ছ’মাসের মধ্যে উপনির্বাচন করা না সম্ভব হলে নতুন মুখ্যমন্ত্রী করতে হবে। কারণ, জয়ললিতা ও পঞ্জাবের একটি মামলার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য ছিল, ছ’মাসের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হলেন। তারপর বিধায়ক নির্বাচিত না হয়েই পদত্যাগ করে একদিন পরেই আবার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন, এমন ঘটলে সংবিধানের ধারার যে আদর্শ, তা ব্যর্থ হয়। তাই সেটা করা যাবে না। শীর্ষ আদালত বলেছিল, মাত্র প্রথম ছ’মাসের জন্যই নির্বাচিত না হয়েও মন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী থাকা যাবে। মাত্র একবারই।নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিধায়ক না হতে পারলে পদ এমনিতেই চলে যাবে। তখন অন্য কেউ ওই পদে বসবেন।’’অরুণাভ আরও বলেন, ‘‘উপনির্বাচন কবে হবে, তা পুরোপুরি নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশনের ওপর। সেই উপনির্বাচন হলে মুখ্যমন্ত্রী জিতে এসে তবেই আবার মুখ্যমন্ত্রী হতে পারবেন।’’

প্রসঙ্গত, শুধু মুখ্যমন্ত্রীই নন। রাজ্য মন্ত্রিসভায় আরও দু’জন সদস্য রয়েছেন, যাঁদের আবার জিতে এসে মন্ত্রী থাকতে হবে। তাঁরা হলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র ও কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। শোভনদেব ভবানীপুর বিধানসভা থেকে জিতেও মুখ্যমন্ত্রীর জন্য ওই কেন্দ্র ছেড়ে দিয়েছেন। দলও তাঁকে খড়দহ বিধানসভা থেকে প্রার্থী করার কথা জানিয়ে দিয়েছে। অর্থমন্ত্রী অমিত উপনির্বাচনে সম্ভবত প্রার্থী হচ্ছেন না। উল্লেখ্য, জঙ্গিপুর ও সামশেরগঞ্জ আসনে প্রার্থীদের মৃত্যুর কারণে ভোট হয়নি। খড়দহ কেন্দ্রে বিজয়ী প্রার্থী কাজল সিংহ ফলাফল ঘোষণার আগেই করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন। ভবানীপুর থেকে শোভনদেবের পদত্যাগের কারণে উপনির্বাচন হবে। সাংসদ থেকে যাওয়ার দলীয় সিদ্ধান্তে দিনহাটা ও শান্তিপুর আসন থেকে পদত্যাগ করেছেন বিজেপি-র নিশীথ প্রামাণিক ও জগন্নাথ সরকার। তাই উপনির্বাচন হবে ওই দু’টি আসনেও।

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Election Commission AITC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy