প্রতীকী ছবি
করোনা-আবহে লকডাউনের জন্য স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও পড়ুয়াদের জন্য অনলাইনে পঠনপাঠনের কমবেশি উদ্যোগ চলছে। কিন্তু রাজ্যের সর্বত্র অনলাইনে পড়াশোনার পরিকাঠামো কতটা আছে, বিশেষত গ্রাম বা মফস্সলে ইন্টারনেট পরিষেবা কতটা ভাল, স্মার্টফোনই বা ক’জন পড়ুয়ার হাতে আছে— এই সব প্রশ্ন উঠছে।
বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস তো চলছেই। অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়েছে বেশ কিছু বেসরকারি স্কুল এবং সরকারি স্কুল, সরকার পোষিত স্কুল এবং কিছু সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলেও। বাংলা শিক্ষা পোর্টালের মাধ্যমে ‘অ্যাক্টিভিটি টাস্ক’ বা বাড়ির কাজও দেওয়া হচ্ছে। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো হচ্ছে এবিপি আনন্দে ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘প্রভূত সাড়া মিলেছে অনলাইন ক্লাসে। এই ভাবে ক্লাস করছে বহু স্কুল। স্কুল খোলার আগে পর্যন্ত এই পরিষেবা চালু থাকবে।’’ কিন্তু প্রশ্ন হল, রাজ্যর সব প্রান্তের সকলেই কি অনলাইন-পাঠের সুযোগ পাচ্ছে? বৈদ্যুতিন পরিকাঠামোর অভাবে বা আর্থিক কারণে যাদের হাতে সাইবার প্রযুক্তি নেই, এই ব্যবস্থায় তারা বঞ্চিত হচ্ছে না কি? তাদের সেই ঘাটতি পুষিয়ে দেওয়ার কী বন্দোবস্ত হচ্ছে?
পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে বীরভূম, বিভিন্ন জেলার বহু পড়ুয়াই এই সুযোগ পাচ্ছে না বলে জানাচ্ছে শিক্ষা শিবির। কেশপুরে ঘোষডিহা উচ্চতর বিদ্যালয়ের শিক্ষক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে অনেক আদিবাসী পড়ুয়ার পরিবারে মোবাইল ফোন নেই। তা হলে অনলাইনে ক্লাস করব কী ভাবে? কী ভাবেই বা বাংলা শিক্ষা পোর্টালের মাধ্যমে ওরা বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটি টাস্ক করবে?’’ বীরভূমের কীর্ণাহার শিবচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক দীপককুমার আচার্য বলেন, ‘‘বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রীর বাড়িতে স্মার্টফোন নেই।’’ ডোমজুড়ের কেশবপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর দাস জানাচ্ছেন, তাঁদের স্কুলে দশম শ্রেণির অনলাইন ক্লাস হচ্ছে জ়ুম অ্যাপের মাধ্যমে। তবে স্কুলটি গ্রামীণ এলাকায় হওয়ায় সব ছাত্রছাত্রীর হাইস্পিডের ইন্টারনেট সংযোগ নেই।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতার সাধনচন্দ্র মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষাবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান গুড্ডু সিংহ বলেন, ‘‘অনেক পড়ুয়ার গ্রামে ইন্টারনেট পরিষেবা এতটাই খারাপ যে, কোনও ‘স্টাডি মেটিরিয়াল’ বা পাঠ্যবস্তু ডাউনলোড করার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে ফাঁকা জায়গায় বসতে হয়।’’
দক্ষিণ ২৪ পরগনারই একটি কলেজের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক অধ্যক্ষা জানালেন, ল্যাপটপ দূরের কথা, গ্রামাঞ্চলের অনেক পড়ুয়ার স্মার্টফোনও নেই। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যেও প্রশ্ন উঠছে, এখন তাঁরা অনলাইনে যে-সব ক্লাস নিচ্ছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার কি সেগুলো নিতে হবে? স্মার্টফোন নেই যাদের, তারা ভাবছে, তাদের জন্য পরে আবার ক্লাস নেওয়া হবে তো?
খড়্গপুর আইআইটি-র কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষক, বর্তমানে এনআইটি দুর্গাপুরের অধিকর্তা অনুপম বসু জানান, ইন্টারনেট পরিষেবা আছে অনেক জায়গায়। কিন্তু দেশের বহু জায়গাতেই দ্রুত গতির ইন্টারনেট পরিষেবা নেই। টিভিতে পঠনপাঠন চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘উদ্যোগ ভাল। তবে এর জন্য আরও প্রস্তুতির দরকার ছিল।’’ শিক্ষকদের একাংশের আশা, করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতিতে অনলাইন-পাঠ বিষয়ে সরকার আরও বেশি প্রস্তুতি চালাবে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy