বাবুলকে নিয়ে জোড়া জল্পনা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব হারানোর পরে এ বার কি রাজ্যের মন্ত্রী হতে চলেছেন বাবুল সুপ্রিয়? না কি রাজ্যসভায় অর্পিতা ঘোষের ইস্তফায় তৈরি হওয়া শূন্যস্থান পুরণ করবেন তিনি? বাবুল তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে শনিবার জোড়া সম্ভাবনার জন্ম হল।
বাবুলকে নিয়ে দুই সম্ভাবনার একটি তাঁর রাজ্যসভায় যাওয়া। গত বৃহস্পতিবারই রাজ্যসভার সাংসদ পদ ছেড়েছেন অর্পিতা। ২০২০ সালে সাংসদ হওয়া অর্পিতার সাংসদ পদের মেয়াদ রয়েছে ২০২৬ পর্যন্ত। অর্পিতার ইস্তফার পরে এক দিন যেতে না যেতেই বাবুলের আগমনে তাই নতুন জল্পনা তৈরি হয়েছে। কারণ, তৃণমূল সূত্রেই জানা গিয়েছিল, অর্পিতার জায়গায় কোনও ‘চমক’ দেওয়ার ভাবনা রয়েছে দলের। শনিবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে যোগদানের সময় ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ভাবে বাবুলের পাশে ছিলেন রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। পরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি রাজ্যসভায় যাচ্ছেন কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েও ডেরেককে দেখিয়ে দেন বাবুল। প্রশ্ন ছিল, তিনি কি রাজ্যসভায় যাবেন? ডেরেককে দেখিয়ে বাবুল বলেন, ‘‘সেটা দল ঠিক করবে।’’ ঘটনাচক্রে, তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, ডেরেকই প্রথম তৃণমূলের তরফে বাবুলকে দলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাবটি দিয়েছিলেন।
বাবুল জানিয়েছেন, তৃণমূলে যোগদানের প্রস্তুতি গত তিন-চার দিন ধরেই চলছিল। নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী বলেন, ‘‘এমন সুযোগ আসবে আমি ভাবতেও পারিনি। যা ঘটার সবটাই ঘটেছে গত তিন-চার দিনে। আমি খুবই উত্তেজিত।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু বাংলার মানুষের জন্য কাজ করার এত বড় সুযোগ ছাড়তে পারিনি।’’
বাবুলের এই ‘বাংলার মানুষের জন্য কাজ করার এত বড় সুযোগ’ বাক্যবন্ধ থেকেই তৈরি হয়েছে দ্বিতীয় সম্ভাবনা। তবে কি তিনি এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার সদস্য হতে চলেছেন? এমন সম্ভাবনা নিয়ে বাবুল কিছু বলেননি। তৃণমূলের কেউ প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করছেন না। তবে আলোচনা চলছে।
বাবুলের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্বের অভিজ্ঞতা রয়েছে। অন্য দিকে, রাজ্যে অন্তত দু’জন মন্ত্রী বদলের সম্ভাবনা তৈরি হয়েই রয়েছে। প্রথম অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তিনি বিধায়ক নন। আর রাজ্যে ভবানীপুর ছাড়া অন্য কোথাও উপনির্বাচন হচ্ছে না। ফলে ছ’মাসের মধ্যে অমিতকে মন্ত্রিত্ব ছাড়তেই হবে। আবার কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ভবানীপুরের বিধায়ক পদ ছেড়েছেন খড়দহ উপনির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন খড়দহে ভোটের দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা করেনি।তবে তৃণমূলের একাংশের আশা, পুজোর পর খড়দহের উপনির্বাচন হয়ে যাবে। অন্য দিকে, গুরুতর অসুস্থ রাজ্যের ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী তথা মানিকতলার বিধায়ক সাধন পাণ্ডে। সুতরাং, তিনি মন্ত্রিত্বের গুরুদায়িত্ব পালন করতে পারবেন কি না, পারলেও কবে পারবেন, তা অনিশ্চিত। শরীর অন্তরায় হলে সাধন মন্ত্রিত্বে এবং বিধায়ক পদে ইস্তফা দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ওই আসনে উপনির্বাচনের সম্ভাবনা তৈরি হবে। তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, বাবুলকে ওই আসনেও দাঁড় করানো হতে পারে। তবে তৃণমূলের অন্য অংশের বক্তব্য, সাধন মন্ত্রিত্ব এবং বিধায়ক পদে ইস্তফা দিলে তাঁর কন্যা শ্রেয়া পাণ্ডেকে ওই আসনে সুযোগ দেওয়া হতে পারে।
বাবুলের রাজ্যের মন্ত্রিত্বে যোগদানের সম্ভাবনার কথা ভাবছে বিজেপি-ও। দলের এক শীর্ষ রাজ্য নেতার বক্তব্য, ‘‘মন্ত্রিত্ব ছাড়া বাবুল জল ছাড়া মাছ। সম্ভবত রাজ্যের মন্ত্রিতেব কারণেই তিনি দল বদলালেন।’’ তবে দু’টি জল্পনাই এখনও পর্যন্ত জল্পনাই। শেষ পর্যন্ত কী হবে, সে সিদ্ধান্ত নেবেন মমতা এবং অভিষেক।
প্রসঙ্গত, রাজনীতি যে ‘সম্ভাবনার শিল্প’ তা ইদানীংকালে বারবার বুঝিয়েছেন বাবুল। সাম্প্রতিককালে তাঁর রাজনৈতিক জীবনে দু’টি তারিখ উল্লেখযোগ্য। ৩১ জুলাই এবং ১৮ সেপ্টেম্বর। প্রথমটি রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা। আর পরেরটি তৃণমূলে যোগদানের দিন।দু’টি তারিখের তফাত গুনে গুনে ৫০ দিন। মাঝের সময়ে নানা সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছেন গায়ক-অভিনেতা-সাংসদ বাবুল। প্রথমে বলেছিলেন রাজনীতি ছাড়ছেন। পরের বক্তব্য ছিল, বিজেপি-র সাংসদ পদও ছাড়বেন। এর পরে ক্রমান্বয়ে সাংসদ থেকে গিয়ে রাজনীতি ছাড়ার কথা এবং রাজনীতি না করে মানুষের জন্য কাজ করার শপথ নেওয়ার কথা লিখেছেন তিনি। তার পর ঘুরেফিরে আবার তিনি সেই রাজনীতিতেই।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে আগে রাজনীতিতে যোগ বাবুলের। তাঁর হয়ে প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসানসোলের ভোটারদের কাছে বলেছিলেন, ‘‘হামে বাবুল চাহিয়ে।’’ মোদীর কথা শুনেছিল আসানসোল। ৭০ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে তৃণমূলের শ্রমিকনেত্রী দোলা সেনকে হারান বাবুল। এর পরে বাবুলের মন্ত্রিত্ব। পাঁচ বছর পরে আরও ভাল ফল হয় আসানসোল কেন্দ্রে। ২০১৯ সালে বাবুল তৃণমূলের মুনমুন সেনকে হারিয়ে দেন প্রায় দু’লাখ ভোটে।
দু’বারই জয়ের পর মন্ত্রী হয়েছেন। দু’বারই অবশ্য প্রতিমন্ত্রী। প্রথমবার কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী। এর পরে ২০১৬ সালে দফতর বদলে হয় ভারী শিল্প এবং রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প। ২০১৯ সালে সাংসদ হওয়ার পরে বাবুল তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ দফতর (পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন)-এর মন্ত্রী হন। কিন্তু গত ৭ জুলাই মন্ত্রিসভার রদবদলে বাদ পড়েন বাবুল। এখন দেখার, নাকের (কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব) বদলে নরুণ (রাজ্যের মন্ত্রিত্ব) জোটে কি না বাবুলের ভাগ্যে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy