Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Lok Sabha Election 2024

তৃণমূলের নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব দেখে লোকসভা ভোটের প্রার্থী বাছাইয়ে ‘তৃতীয়’ পন্থা পদ্মের, নির্দেশ কি শাহের?

গত বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থিতালিকা ঘোষণার পরেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল বিজেপিতে। লোকসভা ভোটের ক্ষেত্রে তার পুনরাবৃত্তি চাইছে না গেরুয়া শিবির। কেমন হবে ফর্মুলা, তা-ও ঠিক করে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

What will be the formula of candidate selection of BJP for Lok Sabha Election 2024.

অমিত শাহ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:২৫
Share: Save:

আগে থেকেই নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল তৃণমূলে। তবে লোকসভা ভোটের বছর শুরুর দিন থেকেই ধিকিধিকি সেই আগুন বহ্নিশিখা হয়ে দেখা যায়। দলের প্রতিষ্ঠাদিবসে মন্তব্যের লড়াই শুরু করে দেন প্রবীণ ও নবীনেরা। সেই মতপার্থক্য এখনও পুরোপুরি মেটেনি।

সেই বিতর্কের ছাপ লোকসভা নির্বাচনে দলের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পড়তে পারে বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতাদের একাংশ। ঘটনাচক্রে, রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপিতেও ‘আদি-নব্য’ বিবাদ অনেক পুরনো। সেই বিতর্ক এড়াতে লোকসভা ভোটে তৃতীয় পথের কথা ভেবেছে গেরুয়া শিবির। রাজ্য সফরে এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রার্থী বাছাইয়ের ফর্মুলা নিয়ে তাঁর তথা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অভিমত রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়ে গিয়েছেন বলেই বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। তিনি নাকি বলেছেন, ৩৫ আসনের লক্ষ্যে লড়াইয়ে নেমে কোনও ‘ঝুঁকি’ নেওয়া যাবে না। যে আসনে যে নেতার জেতার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, সেই আসনে তাঁকেই প্রার্থী করা হবে।

রাজ্য বিজেপিতে এখন যে ১৬ জন সাংসদ রয়েছেন, বয়সের নিরিখে তাঁদের মধ্যে ‘প্রবীণ’ এক জনকেই বলা যায়। তিনি সত্তরোর্ধ্ব সাংসদ এসএস অহলুওয়ালিয়া। বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনের বর্তমান সাংসদ ২০১৪ সালে দার্জিলিং থেকে জিতে কেন্দ্রে মন্ত্রীও হয়েছিলেন। এখনও পর্যন্ত বিজেপির যে পরিকল্পনার কথা জানা গিয়েছে তাতে ২০১৯ সালে নির্বাচিত সাংসদরা এ বারেও প্রার্থী হবেন। তবে আসন বদল হতেই পারে। যেমন ২০১৯ সালে হয়েছিল অহলুওয়ালিয়ার ক্ষেত্রে। ফলে বিজেপির ক্ষেত্রে প্রার্থীবাছাইয়ের জল্পনা মূলত গত বার হেরে যাওয়া আসনগুলি নিয়েই। সেই আসনগুলির পাশাপাশি উপনির্বাচনে তৃণমূলের দখলে যাওয়া আসানসোল এবং তৃণমূলে যোগ দেওয়া অর্জুন সিংহের ব্যারাকপুর নিয়েও রয়েছে জল্পনা। আসানসোল পর পর দু’বার বাবুল সুপ্রিয়কে জিতিয়েছিল। আসানসোল দখল বিজেপির কাছে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যে বাবুল দু’বারই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছিলেন। আবার গেরুয়া শিবিরের অনেকেই মনে করেন, অর্জুন প্রার্থী হওয়াতেই ব্যারাকপুরের মতো ‘কঠিন’ মাটিতে পদ্ম ফুটেছিল। আরও দু’টি আসনের প্রার্থী নিয়ে বিজেপির মধ্যেই কৌতূহল রয়েছে। হুগলির আরামবাগ এবং মালদহ দক্ষিণ। এই দু’টি আসনে বিজেপি হেরেছিল খুবই কম ভোটের ব্যবধানে। যথাক্রমে ১,১৪২ এবং ৮,২২২ ভোট। আরামবাগে তপন রায়কে আবার প্রার্থী করা হবে, না কি আদি নেতা মধুসূদন বাগকে, তা নিয়ে দলে জল্পনা থাকলেও মালদহ দক্ষিণে বর্তমানে ইংরেজবাজারের বিধায়ক শ্রীরূপাকেই যে প্রার্থী করা হবে তা অনেকটা নিশ্চিত। আবার দার্জিলিঙের বর্তমান সাংসদ রাজু বিস্তাকে অন্য রাজ্যে পাঠিয়ে সেই আসনে নতুন প্রার্থী আনা হতে পারে।

শাহ কলকাতায় এসে এ ব্যাপারে ঠিক কী নির্দেশ বা পরামর্শ দিয়েছেন, তা খোলসা করতে না চাইলেও দলের নীতি স্পষ্ট করেছেন সুকান্ত। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘জেতার ক্ষমতাই সব চেয়ে বড় যোগ্যতা বলে বিবেচিত হবে। অন্য কোনও কিছুই আমরা প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ভাবব না। শুধু বাংলা নয়, গোটা দেশেই এই নীতি নিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এ বার ৪০০ আসন পার করাই আমাদের লক্ষ্য।’’

গত বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে সদ্য দলে যোগ দিয়েই অনেকে টিকিট পেয়ে গিয়েছিলেন। তাতে ক্ষুব্ধ হন দীর্ঘ দিন বিজেপি করা প্রার্থী হতে ইচ্ছুকেরা। দলের খারাপ সময়ের সঙ্গীদের বাদ দিয়ে কেন নব্যদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে অনেক ক্ষোভের মুখেও পড়তে হয় বিজেপিকে। এ বারে কি আদিরা ‘বাড়তি সুবিধা’ পাবেন? এই প্রশ্নের জবাবে প্রত্যাশিত ভাবেই সুকান্ত বলেন, ‘‘বিজেপিতে আদি বা নব্য এমন কোনও ভাগ নেই। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এখন সবাই এককাট্টা লড়াই দিতে তৈরি। সবাইকে এটা মেনে নিতে হবে যে, জিততে পারেন এমন প্রার্থীকেই দল মনোনয়ন দেবে। কে কত দিন বিজেপি করছেন সেটা বিবেচ্য হবে না!’’

সুকান্ত মানতে না চাইলেও বিজেপির আদি বনাম নব্য বিবাদ প্রায়শই প্রকাশ্যে চলে আসে। অন্য দল থেকে বিজেপিতে যোগদান সবচেয়ে বেশি যাঁর সময়ে হয়েছে, সেই দিলীপ ঘোষই অনেক বার আদিদের ‘মুখপাত্র’ হয়ে উঠেছেন। যদিও বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘যোগদান মেলা’ চালানো নিয়ে দিলীপের যুক্তি ছিল, ‘‘দল বড় হচ্ছে। তাই আরও নেতা দরকার। কম সময়ে নেতা তৈরি করা যায় না। তাই অন্য দলের নেতাদের নেওয়া হয়েছে।’’ তখন বিজেপির চোখে ‘জেতার ক্ষমতা রয়েছে’ এমন অনেক অন্য দলের ‘নেতা’ অবশ্য বিজেপির টিকিটে হেরে গিয়েছিলেন।

তবে এ বার বিজেপি তেমন ভুল করতে চাইছে না। সুকান্ত স্পষ্ট করে দলের নীতির ব্যাখ্যা না দিলেও রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘জয়ের যোগ্যতা’ বলতে দল কী বোঝাতে চাইছে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতিটি আসনের আলাদা আলাদা জনবিন্যাস রয়েছে। স্থানীয় মানুষের এবং কর্মীদের ভাবাবেগ রয়েছে। সে সব বিবেচনা করেই প্রার্থী বাছাই হবে। আবার প্রতিপক্ষ কেমন, তার উপরেও অনেক কিছু নির্ভর করবে।’’

ওই নেতাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, বাংলার নেতারা যা-ই ভাবুন, প্রার্থী বাছাইয়ের আসল ‘রাশ’ থাকবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হাতেই। এই রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা এবং রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে যা ঠিক করার, তা হয়তো শাহ নিজেই করবেন। রাজ্যের থেকে তালিকা চাওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও তালিকা বানাবেন। পাশাপাশিই ‘নমো’ অ্যাপের মাধ্যমে প্রতিটি লোকসভা এলাকায় বর্তমান সাংসদ ছাড়াও বিকল্প তিন জন করে বিজেপি নেতার নাম জানতে চাওয়া হয়েছে দলের কর্মী-সমর্থকদের কাছে। সেটাও বিবেচনার অন্যতম মাপকাঠি হতে পারে বলে মনে করছেন বিজেপি নেতারা। তবে ইতিমধ্যেই বিজেপি নেতাদের কাছে তো বটেই, দলের রাজ্য দফতরেও প্রার্থী হতে ইচ্ছুকেরা ‘বায়োডেটা’ জমা দিতে শুরু করে দিয়েছেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE