শমীক লাহিড়ী। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাজ্য কমিটির বর্ধিত অধিবেশন থেকে সিপিএম যে রাজ্য কমিটির প্রভাতী দৈনিক মুখপত্রের সম্পাদক বদল করতে পারে, সেই সম্ভাবনার কথা শুক্রবার প্রথম লিখেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। রবিবার বর্ধিত অধিবেশন শেষে সেটাই হয়েছে। দেবাশিস চক্রবর্তীর জায়গায় বঙ্গ সিপিএমের দৈনিক মুখপত্রের সম্পাদক হচ্ছেন দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী তথা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শমীক লাহিড়ী। দেবাশিসকে ‘জ্যোতি বসু স্টাডি অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার’-এর দায়িত্ব দেওয়া হল। একই সঙ্গে সিপিএমের রাজ্য কমিটিতে ‘কো-অপ্ট’ করা হল নতুন তিন জনকে। হিন্দি ও উর্দুভাষীদের কোটায় রাজ্য কমিটিতে গেলেন কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ ফৈয়জ় আহমেদ খান। এ ছাড়া স্থায়ী আমন্ত্রিত সদস্য করা হল রাজ্যসভার সাংসদ তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং দলের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই-এর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিমঘ্নরাজ ভট্টাচার্যকে।
শমীক রাজ্য সিপিএমের দৈনিক মুখপত্রের আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নেবেন আগামী ১ ডিসেম্বর। প্রশ্ন হল, ঠিক কী কারণে শমীককে এই দায়িত্ব দিলেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতারা? নেপথ্যে কাজ করল কোন ‘শমীক-করণ’?
সিপিএম সূত্রের খবর, মুখপত্রের প্রাক্তন সম্পাদক অভীক দত্তের প্রয়াণের পর থেকেই সেখানে ডামাডোল শুরু হয়। অভ্যন্তরীণ ডামাডোলে বীতশ্রদ্ধ হয়ে অনেক সর্বক্ষণের কর্মীও দলের মুখপত্র থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন। এজেসি বোস রোডে মুখপত্রের দফতর নিয়ে বিস্তর অভিযোগ জমছিল ৩১ নম্বর আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে। শেষ পর্যন্ত কাগজের সম্পাদক বদলই করতে হল সিপিএমকে।
মুখপত্র নিয়ে বর্তমান রাজ্য সিপিএমের এক শীর্ষ স্থানীয় নেতার সঙ্গে বয়সের কারণে কমিটি থেকে সরে যাওয়া এক নেতার সংঘাত বেধেছিল বলে সূত্রের খবর। দলীয় দৈনিককে ওয়েব মাধ্যমে আরও ‘সময়োপযোগী’ অবতারে দেখতে চেয়েছিলেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতারা। কিন্তু তা হচ্ছিল না। সেই সঙ্গে ছিল অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ। শমীক ডিজিটাল বিষয়ে পারদর্শী বলে দলীয় নেতাদের একটি বড় অংশ মনে করেন। সেই সূত্রেই তাঁকে দায়িত্ব দিলেন মহম্মদ সেলিমরা। প্রসঙ্গত, সিপিএমের একটি ত্রৈমাসিক মুখপত্র সদ্যই ডিজিটাল আর্কাইভ করেছে। যা দলের মধ্যে সমাদৃত হয়েছে। ঘটনাচক্রে, ওই দায়িত্ব আবার পালন করেছেন দৈনিক মুখপত্র ছেড়ে আসা এক সর্বক্ষণের কর্মী।
আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, সেলিমের সঙ্গে শমীকের ‘বোঝাপড়া’ ভাল। দলীয় কোনও নথির বয়ান প্রস্তুত করা, অনুবাদ করা ইত্যাদি কাজে শমীকের উপর অগাধ ভরসা করেন সেলিম। গত কয়েক মাস ধরে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে শমীক, পলাশ দাস এবং কলকাতা জেলার সম্পাদক কল্লোল মজুমদার মুখপত্রের কাজ দেখাশোনা করতেন। সিপিএম সূত্রে এ-ও জানা গিয়েছে, মুখপত্রের উৎসব সংখ্যার প্রস্তুতি নিয়েও অভ্যন্তরীণ মতানৈক্য বড় আকার নিয়েছিল।
সিপিএম নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, দলীয় মুখপত্র নিয়ে অনেক দিন ধরেই পদক্ষেপ করার প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু মঞ্চ পাওয়া যাচ্ছিল না। মধ্যবর্তী সময়ে রাজ্য কমিটির বর্ধিত অধিবেশনকেই সেই মঞ্চ হিসাবে বেছে নেওয়া হয়। সিপিএমে মুখপত্রের সম্পাদক বদল হয় কেবল সম্মেলন মঞ্চ থেকে। আর কেউ প্রয়াত হলে তখন মাঝে বদল হয়। কিন্তু এই রকম ‘অকাল বদল’ বঙ্গ সিপিএমের ইতিহাসে রয়েছে বলে কেউ মনে করতে পারছেন না।
শমীক মুখপত্রের সম্পাদক হওয়ায় আরও একটি জল্পনা তৈরি হয়েছে— এ বার কে হবেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক। এমনিতেই শমীকের সেই পদ ছাড়ার কথা ছিল। কারণ, তিনি জেলা সম্পাদকের পাশাপাশি রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী ও কেন্দ্রীয় কমিটিরও সদস্য। সিপিএমের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেউ একসঙ্গে তিনটি স্তরে থাকতে পারেন না। থাকতে গেলে পলিটব্যুরোর বিশেষ অনুমতি লাগে। যেমন অতীতে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক হওয়ার সময়ে গৌতম দেবকে সেই অনুমতি দিয়েছিল পলিটব্যুরো। সূত্রের খবর, শমীক জেলা সম্পাদক পদ ছাড়লে সেই পদে পরবর্তী হিসাবে দৌড়ে রয়েছে রাহুল ঘোষের নাম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy