Advertisement
E-Paper

শহর জুড়ে ‘বিরাট’ হোর্ডিং, রাত পোহাতেই জন্মদিনের মমতা-শুভেচ্ছা! ডিজিটাল পথই রাজনীতির ভবিষ্যৎ?

রবিবার দিনটা ক্রিকেটের। রবিবার দিনটা বিরাট কোহলির। মাঠে নামার আগেই জন্মদিনে বিরাটকে শুভেচ্ছা জানাতে ‘বিরাট’ আয়োজন মুখ্যমন্ত্রীর। সঙ্গে ব্যবহার সমাজমাধ্যমকেও। রাজনীতি কি পথ বদলাচ্ছে?

Virat Kohli birthday: Wish of Mamata Banerjee & Politics in Social Media.

বিরাটকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা মমতার। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৩ ১২:৪৩
Share
Save

এই রবিবারটা ক্রিকেটের। গোটা দেশের কাছে তো বটেই, বেশি করে কলকাতার। বিশ্বকাপের পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে থাকা ভারতের সঙ্গে দ্বিতীয় জায়গায় থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার খেলা ইডেন গার্ডেন্সে। এই দিনটা বিরাট কোহলিরও। মাঠে নামার আগেই দিনটা তাঁর। আজ তাঁর ৩৬তম জন্মদিন। কলকাতা মুখিয়ে রয়েছে ‘বার্থ ডে বয়’-এর পারফরম্যান্স দেখার জন্য। বিশ্বকাপ ফাইনাল আমদাবাদে হবে বটে, কিন্তু কলকাতার ইডেনে কার্যত ফাইনাল ম্যাচের উত্তাপের বিরাট মহাযজ্ঞে স্পর্শ পড়ে গেল স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীরও।

রবিবার ভোরের কলকাতা দেখল অন্য এক ‘পারফরম্যান্স’। শহরের নানা জায়গায় বিরাটকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে হোর্ডিং। হোর্ডিং পড়েছে কলকাতায় যে হোটেলে বিরাট রয়েছেন তার সামনেও। ঘুম থেকে উঠে তিনি হয়তো দেখেও ফেলেছেন ইতিমধ্যে। না হলেও, মাঠে যাওয়ার পথে তো দেখবেনই। তবে এই হোর্ডিং পড়ার আগেই, রাত ঠিক ১২টায় এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে এবং ফেসবুকে বিরাটকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মমতা। ক্রিকেট নিয়ে তিনি রাজনীতি করতে চাইছেন কি না, বিরোধীদের তোলা এমন প্রশ্নের চেয়েও বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে, মাঠে-ময়দানে লড়াই করে উঠে আসা মমতাও কি বুঝতে পারছেন, মানুষকে ছুঁতে সমাজমাধ্যমের পথেও নামতে হবে! তবে কি সেই পথেই পথ চিনবে আগামীর রাজনীতি?

Virat Kohli birthday: Wish of Mamata Banerjee & Politics in Social Media.

বিরাটদের হোটেলের সামনে মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছাবার্তার হোর্ডিং। ছবি: সংগৃহীত।

যে কোনও ক্ষেত্রের খ্যাতনামী ব্যক্তির জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানো মমতার কাছে নতুন কিছু নয়। কিন্তু সেটা হয় দিনের দিনে। কিন্তু বিরাটের ক্ষেত্রে শনি-রবির সন্ধিক্ষণে, ঠিক রাত ১২টায় পোস্ট করেছেন মমতা। চমকেছেন অনেকেই। কিন্তু কেনই বা করবেন না? এর আগে জন্মদিনে বিরাট কলকাতায় এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মাঠে নেমেছেন কি না, তা গবেষণার বিষয়। তবে বিরাট, ভারতীয় ক্রিকেট দল এবং রবিবারের কার্যত ফাইনাল ম্যাচ ঘিরে যে উন্মাদনা, তাতে মধ্যরাতে শুভেচ্ছা পোস্ট এবং শহরকে হোর্ডিংময় করাটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তো কর্তব্যই। এমনটাই মনে করছেন রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা। তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘এই সময়ে ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্রিকেটার আমাদের রাজ্যে। আমাদের শহরে খেলতে নামবেন তাঁর জন্মদিনে। ফলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শুভেচ্ছা জানানোটাই তো উচিত। রাজনীতিকে দূরে রেখেই বিষয়টা দেখা উচিত।’’

শশী বললেও রাজনীতিকে দূরে রেখে দেখতে চাইছেন না বিরোধীরা। অনেকেই মনে করছেন, শুভেচ্ছা জানিয়ে আসলে মমতা বিরাটভক্তদের কাছে টানার কাজটাই করলেন। বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘এটা ওঁর কাছে নতুন কিছু নয়। এর আগে আইপিএল ফাইনালে কলকাতা নাইট রাইডার্স জেতায় উনি কী কী করেছিলেন সব মনে রয়েছে। ক্রীড়ামোদী মানুষের আবেগকে রাজনীতির স্বার্থে কাজে লাগাতেই এ সব করা।’’ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘উনি কী করবেন আর কী করবেন না তা সব সময়ে যুক্তি দিয়ে বিচার করা যায় না। এ ক্ষেত্রেও তাই।’’ আর সিপিএমের নতুন প্রজন্মের নেত্রী মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘উনি সব পারেন, শুধু রাজ্যের মানুষকে কাজ দিতে পারেন না। বিরাটের জন্মদিনে আমরাও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী পারলে চাকরির দাবিতে আন্দোলনে বসে থাকা মানুষদের মঞ্চের সামনেও একটা হোর্ডিং লাগান চাকরি দেওয়া হবে জানিয়ে।’’

কিন্তু রাজনীতির আগামী কী? মাঠে-ময়দানের লড়াই কি ক্রমেই সমাজমাধ্যমে পোস্ট নিয়ে ঠোকাঠুকিতে পরিণত হবে? শশীর দাবি, ‘‘এটাই সময় চাইছে। একসঙ্গে অনেক মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে। সেটা দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও।’’ তাঁর দাবি, করোনাকালের পরে তাঁর মতো প্রবীণ রাজনীতিকরাও বুঝেছেন আধুনিক না-হলে চলবে না। বলেন, ‘‘আর একটা সুবিধা হল, বক্তব্য নিয়ে বিভ্রান্তি ও বিতর্ক কম হয়। সবটা সরাসরি বলা যায়। মানুষের কাছে যেতে তো হবেই। তার কর্মসূচি থাকবে। কিন্তু প্রতি মুহূর্তে মানুষকে নিজের কথা, নিজেদের কথা, মানুষের কথা জানানোর সহজ উপায় সমাজমাধ্যম। তাই দিনদিন নির্ভরতা বাড়ছে, বাড়বে।’’

দিলীপও ‘সময়ের দাবি’ নিয়ে একমত। তাঁর দল এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তো অনেক দিন থেকেই রাজনীতিকে সমাজমাধ্যমের দিকে নিয়ে চলেছেন। তবে নির্ভরতা বাড়তেই থাকবে বলে দিলীপ বিশ্বাস করেন না। তিনি বলেন, ‘‘মানুষ যে পথ চায় সেই পথেই হাঁটতে হয় রাজনীতিকদের। ডিজিটাল ইন্ডিয়ার দৌলতে মানুষের হাতে হাতে ফোন। টিভি দেখাও কমছে। তাই রাজনীতি ওই পথ নিচ্ছে।’’ একই সঙ্গে দিলীপের দাবি, ‘‘সময় বদলায়। এখন যেমন বদলেছে। আবার বদল আসবে। এটাই নিয়ম। তখন রাজনীতিও বদলাবে। যা জীবন্ত তা কখনও স্থায়ী হতে পারে না। পরিবর্তনের নামই জীবন।’’ তবে সমাজমাধ্যমে রাজনীতি একেবারেই পছন্দ নয় মান্নানের। যদিও একটা সময়ে তিনিও শুরু করেছিলেন। বললেন, ‘‘আমি সরাসরি কথা বলা পছন্দ করি। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও। একটা কিছু লিখে দিলাম আর হয়ে গেল সেটা নয়। সরাসরি কথা বলাতেই দূরত্ব কমে মানুষের সঙ্গে।’’

Virat Kohli birthday: Wish of Mamata Banerjee & Politics in Social Media.

রবিবারের ভোরে ঘুম ভেঙেই কলকাতা দেখল এই দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত।

সিপিএম তো প্রচারের ক্ষেত্রে এখন অনেকটাই সমাজমাধ্যম নির্ভর। তবে কি তাঁরা সেখানে গলা ফাটানোই বেশি পছন্দ করে? নতুন প্রজন্মের মিনাক্ষীর বক্তব্য, ‘‘আসলে কী বলছি সেটা জরুরি। মানুষের কথা, কাজের কথা বলতে হবে। কোথায় আর কোন মাধ্যমে বলছি সেটা বড় কথা নয়। আমরা মানুষের সঙ্গে থাকতে পছন্দ করি। সেটি মিছিলে হেঁটেও, আবার সমাজমাধ্যমেও।’’

নানা দলের নানা মত থাকলেও সকলেই সময়ের দাবিকে মান্যতা দিচ্ছেন। যেটা স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও। মঞ্চের সামনে মানুষ টানার জন্য তাঁর খ্যাতিই তাঁকে ‘জননেত্রী’ তকমা দিয়েছে। তবে তিনি ইদানীং জনতার কাছে থাকতে সাংবাদিক বৈঠক থেকে প্রশাসনিক সভা সবেতেই সমাজমাধ্যমকে সংযোগের মাধ্যম করেন। প্রশাসনিক বৈঠক বা পুজোর উদ্বোধনেও তাই। বিরাটের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানোও তারই অঙ্গ। আর সমাজমাধ্যম যে ক্রমেই রাজনৈতিক লড়াইয়ের ময়দান হয়ে উঠছে তার বড় প্রমাণ সাম্প্রতিক ‘অর্থের বিনিময়ে প্রশ্ন’ অভিযোগে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে নিয়ে বিতর্ক। যাঁর দু’টি অংশ। একটি এথিক্স কমিটিতে। যার বেশিটাই অজানা। আর বেশিটাই সমাজমাধ্যমে। যার সবটাই সকলের জানা।

Politics Social Media and Politics Virat Kohli Mamata Banerjee

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।