কুলটির রাস্তায় অবৈধ কয়লা নিয়ে যাতায়াত। ছবি: পাপন চৌধুরী
অভিযান চলছে কেন্দ্রীয় সংস্থার। নজর কোথায়? বেআইনি কয়লা ব্যবসার হাল কী
চণ্ডীচরণ বাউড়ি এলাকাছাড়া। নেই ‘লালা’ বা জয়দেব মণ্ডলেরাও। তা বলে পশ্চিম বর্ধমানে কয়লার অবৈধ কারবার কি থেমে রয়েছে? কারবারে জড়িতদের একাংশের দাবি, ‘‘না। তবে কম চলছে।’’
৯, ১৭ ও ২০ ফেব্রুয়ারি— কুলটির লছিপুরে ‘কাটা’য় (অবৈধ কয়লার ‘ডিপো’), চৌরঙ্গি ফাঁড়ি লাগোয়া বেসরকারি গুল কারখানায় পুলিশি হানা ও নিউ রোড এলাকায় কয়লাবোঝাই তিনটি ট্রাক আটক এবং বেআইনি কয়লা বাজেয়াপ্ত হয়েছে। জামুড়িয়ায় চোখে পড়েছে সাইকেলে বাঁধা ‘কালো’ বস্তা (অবৈধ কয়লায় ঠাসা) নিয়ে চলাচলও।
পুলিশ না মানলেও কারবারিদের দাবি, জামুড়িয়ার বৈজন্তীপুর, দেশেরমহান, পরিহারপুর, মিঠাপুর, আনন্দপুর, বারাবনির কাল্লা, ভানোড়া, গৌরাণ্ডি, লালগঞ্জ, রানিগঞ্জের তৃপ্তিগড়িয়া, অণ্ডালের ধান্ডাডিহি, জামবাদ, জামুড়িয়ার নিউ কেন্দা, পাণ্ডবেশ্বরের শোনপুর বাজারি, সালানপুরের সামডি, কুলটির দামাগড়িয়া, বিনোদবাঁধ এলাকায় বৈধ খাদান থেকে চুরি এবং অবৈধ খাদান থেকে কয়লা কাটা হচ্ছে। কাজ চলছে ‘ঝটকা’ পদ্ধতিতে। ওই পদ্ধতিতে এক রাতে কয়লা কেটে খনি বা কুয়ো-খাদেই মজুত রাখা হয়। পরের রাতে ভ্যান, মোটরবাইক, সাইকেলে বোঝাই করে সারা হয় পরিবহণ। তবে ‘রমরমা দিনে’ যে পরিমাণ কয়লা কাটা হত, এখন কাটা হচ্ছে কার্যত তার এক পঞ্চমাংশ। রাস্তাতেই ‘নিচুতলা’র পুলিশকর্মীদের একাংশের সঙ্গে ‘রফা’ (সাইকেল, মোটরবাইকের জন্য ২০ টাকা, মোটরচালিত ভ্যানের জন্য ৫০০-১০০০ টাকা) করে কারবার চালানো হচ্ছে।
পুলিশ অবশ্য এ সব দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তার পাল্টা দাবি, ‘‘কোথাও কয়লার কারবার চলছে না। পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা। নিয়মিত অভিযান চলে।’’ ইসিএলের মুখ্য নিরাপত্তা আধিকারিক মুকেশ কুমারও বলেন, ‘‘খবর পেলেই বেআইনি কয়লার কারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযান করি।’’
পুলিশ সূত্রের দাবি, ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া, নলা, বীরভূমের বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়লা কাটতে জেলায় আসেন শ্রমিকদের একাংশ (মালকাটা)। তাঁদের অনেককেই সিবিআই হানার ভয়ে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। যাঁদের দেখা যাচ্ছে, তাঁদের কয়েক জন জানান, এই মুহূর্তে কারবারের ‘দাদা’দের চালু করা ‘ব্যবস্থা’ কিছুটা ঘেঁটে গিয়েছে। অবৈধ কয়লা পরিবহণের বিশেষ সঙ্কেতবাহী ‘প্যাড-সিস্টেম’ (নির্দিষ্ট টাকা দিয়ে কেনা রশিদ, যা দেখালে অবৈধ কয়লা বোঝাই গাড়ির চলাচলে অসুবিধে হয় না) প্রায় চলছে না। ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ-সহ ভিন্ রাজ্যেও সিবিআই নজর থাকায় কয়লা সে ভাবে পাঠানো যাচ্ছে না।
তা হলে কয়লা তোলা হচ্ছে কাদের জন্য? কারবারিদের দাবি, জেলা ও লাগোয়া জেলার বয়লার চালিত কারখানা, ইটভাটা, ছোট হোটেল, চায়ের দোকানের একাংশ তাঁদের নিয়মিত ক্রেতা। কারণ, ইসিএলের কয়লার খোলা বাজারে দর, টন প্রতি সাত-আট হাজার টাকা। সেখানে অবৈধ কয়লার দর প্রতি টন পাঁচ হাজার টাকার আশেপাশে।
এই ‘চাহিদা’র উপরে নির্ভর করেই লালার ‘এজেন্টদের’ একাংশ কারবার চালাচ্ছেন। তাঁরা জানান, করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন চালু হওয়ার গোড়ার দিকে কয়লা তোলা বন্ধ থাকায়, অনেক শ্রমিক ভিন্ন পেশায় খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কয়লা কাটা চালু হতেই আবার ফিরে এসেছেন সে কাজে। সাইকেল নিয়ে কয়লা পরিবহণ করা এক জন বলেন, ‘‘৫০ কেজির একটা বস্তা চায়ের দোকানে দিতে পারলেই, দিনে দেড়শো থেকে তিনশো টাকা রোজগার। ছ’জনের পরিবার। কারবার না করলে, পেট চলবে না।’’
জেলায় দীর্ঘকাল কাটানো পুলিশকর্মীদের একাংশের ব্যাখ্যা, ‘‘কারবারে জড়িতদের অনেকেই বিশ্বাস করে, নিজের জমিতে দু’হাত খুঁড়লে যেখানে কয়লা ওঠে, সেখানে কয়লা পাচার অপরাধ হতে পারে না। বোঝালেও তারা বোঝে না। অন্য পেশার তুলনায় টাকা বেশি বলে, ওরা কারবার ছাড়তেও চায় না।’’ (চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy