প্রতীকী ছবি।
প্রায় দু’দশক আগে বাঙালি সমাজের এক পরিচিত মুখ জলে ডুবে আত্মঘাতী হয়েছিলেন। তদন্তে জানা যায়, তিনি এইচআইভি-আতঙ্কে ভুগছিলেন। তিনি কি অপরাধী, নাকি মানসিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন?
রাজ্যের এক শীর্ষ প্রশাসনিক কর্তার বন্ধু সম্প্রতি মুম্বইয়ে বহুতলের ছাদ থেকে ঝাঁপিয়ে আত্মঘাতী হন। আইআইটির প্রাক্তনী, কর্মজীবনে সফল মানুষটি কি অপরাধী?
রবিবার এই সব প্রশ্নই তুলে দিল মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সংগঠনের একটি অনুষ্ঠান। মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা বিধি বলছে, আত্মহত্যার চেষ্টা করলে শাস্তি নয়, চিকিৎসা জরুরি। কিন্তু দেশের দণ্ডবিধিতে আত্মহত্যার চেষ্টা অপরাধ। তাতে জেল, জরিমানাও হতে পারে। চিকিৎসার সঙ্গে পুলিশি নীতির এই দ্বন্দ্ব কী ভাবে মেটানো যায়, তা নিয়েই এক টেবিলে বসলেন ডাক্তার, পুলিশকর্তা, আইন বিশেষজ্ঞেরা।
আলোচনাচক্রে রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিৎ করপুরকায়স্থ জানান, আত্মহত্যার চেষ্টায় বছরে ৩০% অভিযুক্তের শাস্তি হয়। অন্যান্য ক্ষেত্রে অভিযুক্তের বছরে শাস্তি হয় ১০%। আত্মহত্যার চেষ্টার প্রমাণ তদন্তকারীর সামনে থাকে। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে তিনি মনে করেন, মানসিক ভাবে দুর্বল মানুষকে শাস্তি দেওয়ার বদলে আত্মহত্যা ঠেকানোর উপরেই জোর দেওয়া উচিত। সেই কাজে পুলিশেরও ভূমিকা রয়েছে। পথ-দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে যেমন হাসপাতালকে চিকিৎসা দিতে বাধ্য করানো এবং উদ্ধারকারীকে আইনি জটিলতা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, এ ক্ষেত্রেও সেটাই উচিত।
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত অবশ্য আত্মহত্যার চেষ্টাকে অপরাধের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার পক্ষপাতী নন। তিনি যে আইন মানতে বাধ্য, তা জানিয়েও ব্যক্তিগত মতামত হিসেবে এজি বলেন, ‘‘শাস্তির ভয় থাকলে অনেকেই আত্মহত্যার চিন্তা থেকে দূরে থাকবেন।’’ তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘সুইসাইড প্রিভেনশন নেটওয়ার্ক’-এর সদস্য মনোরোগ চিকিৎসক লক্ষ্মী বিজয়কুমার জানান, আত্মহত্যার চেষ্টাকে অপরাধের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ায় বিভিন্ন দেশে আত্মহত্যা কমেছে। ব্রিটিশরা এ দেশে এই আইন চালু করলেও নিজেদের দেশে ১৯৬৪ সালেই আত্মহত্যার চেষ্টাকে অপরাধের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্তা ও চিকিৎসক সুজিত করপুরকায়স্থ জানান, ব্রিটেনে এই সব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রোগীকে মনোরোগ চিকিৎসকের কাছে পাঠানো হয় এবং সেই চিকিৎসকের ছাড়পত্র পেলে তবেই হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়।
চিকিৎসকেরা বলছেন, বহু ক্ষেত্রেই আত্মহত্যায় উদ্যত মানুষকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। সেই অবস্থায় আইন দেখা উচিত, নাকি দ্রুত চিকিৎসা— তা নিয়ে ধন্দে পড়েন অনেকেই। উদ্যোক্তাদের তরফে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সুজিত সরখেল বলেন, ‘‘আত্মহত্যার চেষ্টাকে অপরাধের তালিকা থেকে বাদ দিলে এমন ঘটনা আরও সামনে আসবে, সংশ্লিষ্ট মানুষটির চিকিৎসাও হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy