Advertisement
E-Paper

দে ভাইয়েরা মঙ্গলবার রাতে বাড়ি ছাড়ার আগে কী কী ঘটেছিল, ৩ খুনের সিদ্ধান্ত কখন, কেন? খুঁজছে পুলিশ

ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, হাতের শিরা কেটে ৩ জনকে খুন করা হয়েছিল। সেই খুনের সিদ্ধান্ত কখন নেওয়া হল? কারাই বা নিলেন? এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:৩০
Share
Save

এখনও রয়েছে অনেক জট! ট্যাংরার অটল শূর রোডে দে পরিবারের বাড়িতে মঙ্গলবার সকালে কয়েক ঘণ্টা ঠিক কী ঘটেছিল? সে সবেরই এখন সন্ধান করছে পুলিশ। এই প্রশ্নের জবাব মিললে হতে পারে তিন খুনের সমাধান।

প্রণয় দে, প্রসূন দে এবং প্রণয়ের পুত্র প্রতীপ দে এখনও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। প্রণয় পুলিশের জেরায় দাবি করেছেন, ১৭ ফেব্রুয়ারি, সোমবার রাতে পরিবারের সকলে ঘুমের ওষুধ মেশানো পায়েস খেয়েছিলেন। সূত্রের খবর, দে ভাইয়েদের প্রাথমিক দাবি ছিল, ওই পায়েস মেশানো ওষুধ খেয়েই মৃত্যু হয়েছে সুদেষ্ণা দে, রোমি দে এবং প্রসূনের কন্যা প্রিয়ম্বদা দের। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই তিন জনের দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। সেই রিপোর্ট বলছে, তার ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা আগে মৃত্যু হয়েছিল ওই তিন জনের। সেই হিসাবে মঙ্গলবার দুপুর থেকে রাতের মধ্যে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। প্রণয়ের দাবি ঠিক হলে দেখা যাচ্ছে, সোমবার রাতে ঘুমের ওষুধ খাওয়ার পরে মঙ্গলবার সকালেও তাঁরা বেঁচে ছিলেন। তা হলে ওই সকাল থেকে তাঁদের মৃত্যুর আগে পর্যন্ত কী চলেছিল দে পরিবারের বাড়িতে? প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কখন ঘুম ভেঙেছিল তিন মহিলার? ঘুম ভাঙার পরে কি আবার ওষুধ খেয়েছিলেন তাঁরা? ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, হাতের শিরা কেটে খুন করা হয়েছে তাঁদের। সেই খুনের সিদ্ধান্ত কখন নেওয়া হল? কারাই বা নিলেন? এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ।

মৃত সুদেষ্ণার ভাই দাবি করেছেন, সোমবার রাতেও দিদির সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। রোমির মা দাবি করেছেন, ওই সোমবারই মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি। তখন কোনও ইঙ্গিতই পাননি। প্রণয় হাসপাতালে বসে দাবি করেছেন, ওই রাতেই পরিবারের সকলে মিলে ঘুমের ওষুধ মেশানো পায়েস খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, মঙ্গলবার দুপুর থেকে রাতের মধ্যে মৃত্যু হয়েছিল সুদেষ্ণা, রোমি, প্রিয়ম্বদার। ওই রাতে ১২টা ৫১ মিনিট নাগাদ দে পরিবারের চার তলা বাড়ি থেকে প্রণয়, প্রসূন, প্রদীপকে বার হতে দেখা গিয়েছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে। তার পরে রাত ৩টের পরে অভিষিক্তা মোড়ের কাছে একটি স্তম্ভে ধাক্কা দেয় তাঁদের গাড়ি। তার আগে কোন কোন রাস্তায় গাড়ি নিয়ে ঘুরেছিলেন দে ভাইয়েরা, তা-ও সিসিটিভি ফুটেজ-সহ বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে পুলিশের কাছে। কিন্তু স্পষ্ট হয়নি, মঙ্গলবার সকালে ঠিক কী ঘটেছিল দে বাড়িতে।

পারিপার্শ্বিক প্রমাণ বলছে, তিন মহিলা মঙ্গলবার সকালেও বেঁচে ছিলেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে, মৃত্যুর তিন থেকে ছ’ঘণ্টা আগে খেয়েছিলেন ওই তিন জন। মঙ্গলবার দুপুর থেকে রাতে তাঁদের মৃত্যু হলে হিসেবমতো ওই দিন সকালেও তাঁরা খেয়েছিলেন। অন্য দিকে সূত্রের খবর, পুলিশের কাছে প্রণয় দাবি করেছেন, সোমবার রাতে ঘুমের ওষুধ মেশানো পায়েস খেয়েছিলেন তাঁরা। তা হলে সেই পায়েস খাওয়ার পরে কখন ঘুম থেকে উঠলেন? উঠে কী দেখলেন? কখন আবার খেলেন? সে সবের উত্তর খুঁজছে পুলিশ। পুলিশ এ-ও জানতে চাইছে যে, কখন তাঁদের খুনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কারা নিয়েছিলেন? জীবিত তিন জনের বয়ানে সঙ্গতি-অসঙ্গতি নিয়েও পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে বলে খবর।

রক্ত মাখা ছুরি

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অটল শূর রোডের বাড়ির তিনতলায় পাওয়া গিয়েছে রক্ত মাখা একটি ছুরি। কিন্তু পুলিশ গিয়ে দেখেছিল, তিন মহিলার দেহ পড়ে রয়েছে দোতলায়। দে বাড়ির তিনতলা থেকে বুধবার একটি কাগজ কাটার ছুরি উদ্ধার করে পুলিশ। তাতে রক্ত মাখা ছিল। রোমি এবং সুদেষ্ণার হাতের শিরা কাটার পরেই ছুরিটি নিয়ে তিনতলায় যাওয়া হয় বলে মনে করা হচ্ছে। রক্তের নমুনাও পরীক্ষা করেছেন তদন্তকারীরা। বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় রক্ত ছড়িয়েছিটিয়ে ছিল। রক্ত পাওয়া গিয়েছে দে ভাইয়েদের গাড়িতেও। তবে গাড়িটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। প্রণয়, প্রসূন এবং ১৪ বছরের প্রতীপ— তিন জনই তাতে গুরুতর জখম হয়েছেন। ফলে গাড়িতে রক্ত থাকা স্বাভাবিক। দুর্ঘটনার আগে থেকে গাড়িতে রক্ত ছিল কি না, পুলিশ তা জানার চেষ্টা করছে।

সিসি ক্যামেরা ‘বন্ধ’

দে পরিবারের বাড়িতে রয়েছে অসংখ্য সিসি ক্যামেরা। বাড়ির বাইরে থেকেই ছ’-সাতটি সিসি ক্যামেরা চোখে পড়ে। বাড়ির ভিতরেও আরও কিছু ক্যামেরা রয়েছে। সব মিলিয়ে সিসি ক্যামেরার সংখ্যা প্রায় ২০। কিন্তু সেই সিসি ক্যামেরার ফুটেজ হাতে পাননি তদন্তকারীরা। মনে করা হচ্ছে, ক্যামেরাগুলি বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। বিশেষ পাসওয়ার্ড দিয়ে দে বাড়ির সিসিটিভির ফুটেজ সংরক্ষণ করে রাখা হয়। এখনও তদন্তকারীরা তা দেখতে পাননি। একসঙ্গে সব সিসি ক্যামেরা খারাপ হতে পারে না। ফলে কেউ বা কারা ইচ্ছাকৃত ভাবে সেগুলি নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিলেন বলে মনে করছে পুলিশ। শুক্রবার অটল শূর রোডের বাড়িতে গিয়েছে ফরেন্সিক দল। ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দে পরিবারের তিন সদস্যের দেহ ময়নাতদন্ত করেছিল যে বিশেষজ্ঞ দল, তারাই শুক্রবার ট্যাংরার বাড়িটি পরিদর্শন করেছে। ময়নাতদন্তের সময়ে ওই ফরেন্সিক মেডিসিনের সদস্যদের কিছু খটকা লেগেছিল। সেই সব বিষয়ে নিশ্চিত হতে গিয়েছিলেন তাঁরা।

হাতে বোতল

দে পরিবারের পাশের বাড়ি থেকে পাওয়া সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, রাত ১২টা ৫১ মিনিটে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন প্রণয়, প্রসূন, প্রতীপ। সেই ফুটেজেই দেখা গিয়েছে, বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়ে এক ভাইয়ের হাতে ছিল একটি বোতল। সেটি কিসের বোতল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ফুটেজে ওই কিশোরকে কিছুটা টলমল পায়ে গাড়ির দিকে হেঁটে যেতে দেখা গিয়েছে। তবে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে জেনেছে, কিশোরের কিছু শারীরিক অসুস্থতা ছিল। সেই কারণেও সে টলে টলে হাঁটতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হত ওই কিশোর। দুই ভাইয়ের বয়ান অনুযায়ী, বাকিদের সঙ্গে সোমবার রাতে তাকেও পায়েসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানো হয়েছিল। ফলে তার উপর দিয়ে শারীরিক এবং মানসিক ধকল গিয়েছে, সেটাও হতে পারে টলে যাওয়ার কারণ। কিশোরের হাতেও কাটা দাগ পাওয়া গিয়েছে।

সংক্ষেপে
  • ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত ৩টের পরে অভিষিক্তা মোড়ের কাছে একটি স্তম্ভে ধাক্কা দিয়েছিল তাঁদের গাড়ি। প্রণয় এবং প্রসূন দাবি করেছিলেন, আত্মহত্যা করার জন্যই ওই পদক্ষেপ করেছিলেন তাঁরা। প্রণয়ের বয়ানও খতিয়ে দেখতে চায় পুলিশ।
  • সোমবার রাতে প্রসূনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁর দাদা প্রণয় দে এবং প্রণয়ের কিশোর পুত্র প্রতীপ এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রতীপ জানিয়েছে, কাকা তাকেও খুন করার চেষ্টা করেছিলেন। মঙ্গলবার প্রসূনকে আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। ৬ মার্চ পর্যন্ত তাঁকে পুলিশি হেফাজতে থাকতে বলা হয়েছে।
Tangra Tangra Murder Case unnatural death

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}