গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যের সব জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। সেই নির্দেশ না-মানার অভিযোগ নিয়ে বিজেপি এবং কংগ্রেসের পক্ষে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কলকাতা হাই কোর্টে আদালত অবমাননার আবেদন জানানো হয়েছে সোমবার। তবে কলকাতা হাই কোর্টের কেন্দ্রীয় বাহিনী সংক্রান্ত ওই নির্দেশ শেষ পর্যন্ত বহাল থাকবে কি না, তা নিয়ে মঙ্গলবার গুরুত্বপূর্ণ শুনানি হওয়ার কথা সুপ্রিম কোর্টে। শীর্ষ আদালতের রায়ের উপরেই রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটে নিরাপত্তা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নির্ভর করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়ার জন্য গত বৃহস্পতিবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শনিবার শীর্ষ আদালতে আবেদন করে কমিশন। হাই কোর্টের দেওয়া ‘চূড়ান্ত সময়সীমা’ অতিবাহিত হওয়ার পর সোমবার সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোটের নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়ার কাজ তাদের নয়।
কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চের দেওয়া ওই চূড়ান্ত সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরে সোমবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আবার হাই কোর্টে গিয়েছে বিরোধীরা। এ বার তাদের অভিযোগ, কমিশন আদালত অবমাননা করেছে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী ওরফে ডালুর আবেদন গ্রহণ করে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি সেই মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছেন। একই সঙ্গে, প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, কমিশন যে হাই কোর্টের নির্দেশ কার্যকর করেনি, তা সংবাদপত্র মারফৎ জানতে পেরেছেন তিনিও।
পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যের সব জেলাতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। গত বৃহস্পতিবার ওই রায় ঘোষণার পর কলকাতা হাই কোর্ট জানিয়েছিল, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী আনানোর ব্যবস্থা পাকা করতে হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। বাহিনী চেয়ে আবেদন করতে হবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই সোমবার সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। শীর্ষ আদালতকে কমিশন বলে, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়া আমাদের কাজ নয়। পঞ্চায়েত ভোটে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখে রাজ্য।’’ পরে রাজ্যের তরফেও এই একই বিষয়ে শীর্ষ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি এমএম সুন্দরেশের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি ওঠে। পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোট সংক্রান্ত ওই গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি মঙ্গলবারই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। যার দিকে আপাতত তাকিয়ে যুযুধান সব পক্ষ।
সুপ্রিম কোর্টে কমিশনের যুক্তি
কমিশনের আবেদন শুনে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ মন্তব্য করে, ‘‘৪৮ ঘণ্টার পরিবর্তে বেশি সময় লাগলে হাই কোর্টে গিয়ে বলুন। সেখানে সময় চান।’’ কিন্তু নিরাপত্তা নিয়ে তাদের এক্তিয়ারের বিষয়টি সম্পর্কে কমিশন পাল্টা যুক্তি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। ভোটের নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়ার কাজ যে তাদের নয়, কমিশনের আইনজীবী সে কথা শীর্ষ আদালতকে জানিয়েছেন সোমবার। সেই যুক্তিতে ‘কাজ’ হয়েছে কি না, মঙ্গলে তার ইঙ্গিত মিলতে পারে। পঞ্চায়েত মামলা নিয়ে যে রাজ্য এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন সুপ্রিম কোর্টে যেতে চলেছে তার আভাস আগেই পাওয়া গিয়েছিল। যদিও কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চের ওই রায়ের পর বৃহস্পতিবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহ জানিয়েছিলেন, চ্যালেঞ্জ নয়, কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ মেনেই চলবেন তিনি। তিনি বলেছিলেন, ‘‘হাই কোর্ট যা নির্দেশ দিয়েছে, তা কার্যকর করব।’’ শুক্রবার অবস্থান কিছুটা বদলে রাজীব জানান, সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেননি তিনি। যদিও বিরোধী নেতৃত্বের একাংশ গোড়া থেকেই মনে করছিলেন, হাই কোর্টের রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে রাজ্য সরকার। ঘটনাচক্রে, সেই ‘পূর্বাভাস’ মিলে গিয়েছে।
কমিশনের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আবেদন
বিজেপির তরফে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর আইনজীবী সোমবার বলেন, ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও নির্দেশ কার্যকর করেনি কমিশন। অন্য দিকে, কংগ্রেস সাংসদ ডালুর আইনজীবী জানান, মনোনয়ন পর্ব থেকেই সিসি ক্যামেরার নজিরদারিতে গোটাটা করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু কমিশন তা করেনি। দু’টি বিষয়েই দ্রুত শুনানির আর্জি জানিয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগে মামলা করে বিজেপি এবং কংগ্রেস। কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম তাঁদের মামলার অনুমতি দিলেও দ্রুত শুনানির আর্জি মঞ্জুর করেননি। আদালতে প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘‘নির্দেশ কার্যকর হয়নি, তা সংবাদপত্র মারফৎ জেনেছি। আপনারা মামলা করতে চাইলে অবশ্যই করুন। কিন্তু দ্রুত শুনতে হবে কেন? যে নিয়মে মামলার আর্জি করার পর শুনানি হয়, তা মেনেই শুনানি হবে।’’ আদালত সূত্রে খবর বুধবারই ওই মামলার শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা। প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত মামলা নিয়ে হাই কোর্টের বৃস্পতিবারের রায়ের প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে ‘ক্যাভিয়েট’ দাখিল করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু এবং দক্ষিণ মালদহের কংগ্রেস সাংসদ ডালু। তাঁদের নোটিস না-পাঠিয়ে এক তরফা শুনানির মাধ্যমে রাজ্য সরকার বা রাজ্য নির্বাচন কমিশন যাতে হাই কোর্টের রায়ের উপর স্থগিতাদেশ পাওয়ার চেষ্টা করতে না পারে, সেই উদ্দেশ্যেই এই ক্যাভিয়েট। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, কলকাতা হাই কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে, তা কার্যকর করা সম্ভব নয়। কারণ, ভোটে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখে রাজ্য। এ ব্যাপারে অনুরোধ করা তাদের কাজ নয়। ফলে রাজ্যের নিস্পৃহতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেই আবার হাই কোর্টে গিয়েছেন শুভেন্দু-ডালু। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়ে সময় বেঁধে দেওয়ার পরেও কমিশন পদক্ষেপ করেনি। এতে আদতে আদালতের অবমাননা করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy