পুরো বিষয়টি দাঁড়িয়ে রয়েছে কুন্তলের বিরুদ্ধে তাপসের অভিযোগ এবং তাপসের বিরুদ্ধে পাল্টা কুন্তলের অভিযোগের উপর। ফাইল চিত্র ।
ইডি এবং সিবিআই আধিকারিকদের নাম করে তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন তাপস মণ্ডল! স্বামী কুন্তল ঘোষের গ্রেফতারির পর বিবৃতি জারি করে অভিযোগ জানালেন স্ত্রী জয়শ্রী ঘোষ। জয়শ্রীর এই দাবির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তাপসের মত কী, তা-ও জানার চেষ্টা চলছে। তাপসের বক্তব্য মিললেই তা প্রতিবেদনের আকারে প্রকাশ করা হবে। ইডি যে ফ্ল্যাটগুলিতে শুক্রবার সকালে হানা দিয়েছিল, তার একটিতে দীর্ঘ সময় ধরে তাপস নিজেই থাকতেন বলে দাবি জয়শ্রীর। একই সঙ্গে তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে শিক্ষক পদপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার যে অভিযোগ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের ‘ঘনিষ্ঠ’ তাপস এনেছেন, তা-ও সর্বৈব ভাবে ‘মিথ্যা’ বলেই দাবি করেছেন তিনি। এ-ও জানিয়েছেন, ‘ন্যায়বিচার’ পেতে তিনি কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই এবং ইডির উপর আস্থা রাখছেন।
শনিবার সকালে কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) আধিকারিকদের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন হুগলির তৃণমূল যুবনেতা কুন্তল। স্বামীর গ্রেফতারির পর এ বার মুখ খুললেন জয়শ্রী। একটি বিবৃতি জারি করে জয়শ্রী লেখেন, ‘‘চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রার্থীদের কাছ থেকে কুন্তল ১৯ কোটি টাকা নিয়েছেন বলে যে দাবি তাপস করেছেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তাপস এবং তাঁর কয়েক জন সহযোগী ষড়যন্ত্র করে কুন্তলকে ‘বলির পাঁঠা’ বানিয়েছেন।’’
জয়শ্রী জানিয়েছেন, কুন্তল যে বিএড কলেজের মালিক, তাপস সেখানে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন এবং তাঁদের মধ্যে ‘সুসম্পর্ক’ ছিল। তাঁর দাবি, ‘‘শুক্রবার সকালে নিউ টাউনের যে দু’টি আবাসনে ইডি হানা দিয়েছিল, করোনা আবহে লকডাউন চলাকালীন তারই একটিতে থাকতেন তাপস এবং তাঁর সহযোগী তাপস মিশ্র। তাপস প্রায় দু’মাস সেখানে ছিলেন এবং ওই ফ্ল্যাট থেকেই নিজের যাবতীয় কাজকর্ম করতেন। তিনি যে ওই আবাসনে থাকতেন, তা প্রতিবেশী, নিরাপত্তরক্ষীদের বয়ানে সহজেও প্রমাণ করা যাবে।’’
যদিও তাপস দাবি করেছেন, কুন্তলের বাড়িতে যাতায়াত থাকলেও গত তিন-চার মাস তিনি ওই ফ্ল্যাটে যাননি।
জয়শ্রী আরও লেখেন, ‘‘গত পাঁচ মাস ধরে তাপস এবং তাঁর বন্ধু নীলাদ্রি ঘোষ ইডি আধিকারিকদের নাম করে অর্থ আদায় করছিল এবং সম্প্রতি তাঁরা সিবিআই আধিকারিকদের নাম করেও প্রতারণার চেষ্টা করেছিলেন।’’ তিনি ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে সিবিআইয়ের কাছে প্রমাণ জমা দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন।
তবে তাপসের সাহায্যে স্বামীর কলেজে ‘অবৈধ ভাবে’ বেশ কিছু অফলাইন রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল বলে স্বীকার করেছেন ধৃত যুবনেতার স্ত্রী। জয়শ্রীর দাবি, ‘‘বিএড কলেজ মালিকরা হামেশাই এই কাজ করে থাকেন।’’ এই নিয়মও তাপস এবং তাঁর মধ্যস্থতাকারীরাই শুরু করেছেন বলে জয়শ্রীর দাবি।
জয়শ্রী যোগ করেছেন, ‘‘তাপস এবং নীলাদ্রি ঘোষ বার বার ফোন করে হুমকি দিয়েছিলেন যে, টাকা না দিলে তাঁরা ইডি এবং সিবিআইয়ের কাছে অভিযুক্ত হিসাবে কুন্তলের নাম দেবেন এবং তারা এসে কুন্তলকে গ্রেফতার করবে। ভয় পেয়েছিলাম, কারণ সত্যি সত্যিই কলেজের বেশ কয়েকটি অফলাইন রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিল, যা বেআইনি। কুন্তল গ্রেফতারির আশঙ্কাও করছিল। এমনকি ইডি যখন তাপসের বাড়িতে এবং অফিসে তল্লাশি চালাচ্ছিল তখনও তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়া হয়েছিল। তাপস এবং তাঁর সহযোগীরা ইডি এবং সিবিআই আধিকারিকদের নাম ব্যবহার করায় গত কয়েক মাসে কয়েক লক্ষ টাকা দিয়েছি।’’
তবে শেষ পর্যন্ত তাপসদের চাহিদা ৫০ লক্ষ টাকায় দাঁড়ালে কুন্তল ‘অসহায়’ হয়ে পড়েন বলেও অভিযোগ জয়শ্রীর। তাঁর কাছে যে টাকা চাওয়া হয়েছিল, সেই সংক্রান্ত সব প্রমাণ রয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। জয়শ্রী জানিয়েছেন, দরকার হলে তিনি কুন্তলের ব্যাঙ্কের নথিও কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিতে পারেন।
জয়শ্রী লিখেছেন, ‘‘আমি নিশ্চিত যে কুন্তলই এক মাত্র কলেজের মালিক নন যিনি তাপস মণ্ডলের ফাঁদে পড়েছেন। কিন্তু অনেকেই এগিয়ে আসতে ভয় পান। আমি নিশ্চিত যে, এই ভাবে তোলাবাজির জন্য তাপস এবং নীলাদ্রির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে ইডি এবং সিবিআই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy