হাতের লেখার নমুনার জন্য হেফাজতে নিতে হবে শান্তিপ্রসাদ সিন্হাকে? প্রশ্ন করেন বিচারক। নিজস্ব চিত্র।
শান্তিপ্রসাদ সিন্হার জামিন নিয়ে আদালতে বাগযুদ্ধ দু’পক্ষের আইনজীবীর। এসএসসির নিয়োগ সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান শান্তিপ্রসাদের বিরুদ্ধে ‘আরও বড় চক্রান্তে’ জড়িত থাকার অভিযোগ এনে তিন দিনের হেফাজত চেয়েছিল সিবিআই। জবাবে শান্তিপ্রসাদের আইনজীবীরা পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, এতদিন হেফাজতে রেখেও কি সেই তথ্য আহরণ করতে পারেনি সিবিআই? সত্তরোর্ধ্ব মানুষটিকে আর কতদিন হেফাজতে রাখা হবে? উনি একজন শিক্ষাবিদ। কট্টর অপরাধী নন। সিবিআই বরং তাঁদের সঙ্গে কথা বলুক যাঁরা ওঁর মাথার উপর থেকে নির্দেশ দিয়েছেন।
গত শুক্রবার থেকেই নিজাম প্যালেসে সিবিআই হেফাজতে রয়েছেন এসএসসির নিয়োগ কমিটির উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ এবং অশোক সাহা। বুধবার তাঁদের সিবিআই হেফাজতের মেয়াদ ফুরোলে আদালতে তোলা হয়। শান্তিপ্রসাদ এবং অশোককে তিন দিনের জন্য হেফাজতে চায় সিবিআই। সিবিআইয়ের আইনজীবীর এই আবেদনের পাল্টা শান্তিপ্রসাদ এবং অশোকের জামিন চান তাঁদের আইনজীবীরা। তার পরই শুরু হয় দু’পক্ষের যুক্তি তর্ক। যা শোনার পর আদালত এই মামলায় পরবর্তী নির্দেশ দান স্থগিত রেখেছে। কিন্তু কী কথা হয়েছিল দু’পক্ষের?
সিবিআইয়ের আইনজীবীরা বলেছিলেন, শান্তিপ্রসাদের হাতের লেখার নমুনা নেওয়া দরকার। নিয়োগের সুপারিশের চিঠিতে যে হাতের লেখা আছে তা মিলিয়ে দেখার জন্যই ওই নমুনা প্রয়োজন। এই মর্মে আদালতের কাছে তিন দিনের হেফাজত চায় সিবিআই।
পাল্টা যুক্তি হিসেবে শান্তিপ্রসাদদের আইনজীবী জানান, শুধু হাতের লেখার নমুনা নেওয়ার জন্যই কি পুলিশ হেফাজতে রাখতে চাইছে? তা যদি হয় তবে কারণটি যথাযথ নয়। কারণ, অভিযুক্ত তাঁদের জানিয়েছেন, সেই নমুনা ইতিমধ্যেই নিয়েছে সিবিআই।
সিবিআইয়ের আইনজীবী— শুধু হাতের লেখার নমুনা সংগ্রহের জন্য নয়। ওঁরা তদন্তে সহযোগিতা করেননি। অনেক তথ্যও গায়েব। একজন দায়িত্বপূর্ণ আসনে বসা ব্যক্তি কীভাবে অযোগ্যদের নিয়োগ করেন? বাগ কমিটির রিপোর্টেও ওঁর নাম উঠে এসেছে। যাঁদের নিয়োগ হয়েছে, তাঁদের কী ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে তার প্রমাণ রয়েছে। যত চিঠি ইস্যু করা হয়েছিল সেগুলো কে করল? তা-ও জানতে হবে। তাই হেফাজতে নিয়ে প্রশ্ন করা দরকার।
শান্তিপ্রসাদের আইনজীবী— উনি শুধু উপদেষ্টা ছিলেন। যিনি ওঁকে নিয়োগ করেছিলেন, তাঁর নির্দেশেই কাজ করেছেন। উনি শিক্ষাবিদ। কোনও পোড় খাওয়া অপরাধী নন। ওঁকে ওঁর প্রোফাইল দেখে নিয়োগ করা হয়েছিল। উনি যা করেছেন নিয়োগকারীর কথা মতো করেছেন। কারও নির্দেশে এই দুর্নীতি হয়ে থাকলে তাঁকে ধরুক সিবিআই।
সিবিআই আইনজীবী— যদি ওঁরা উপদেষ্টাই হবেন, তবে নিয়োগ নিয়ে সুপারিশ দিলেন কী ভাবে। তবে কি সেগুলো ভুয়ো নিয়োগ হয়েছিল? এত চাকরিপ্রার্থী নিয়োগ হয়েছে, তা কি ভুয়ো নিয়োগ হয়েছে? তা হলে তো আরও বড় ষড়যন্ত্র। আরও অনেকে জড়িত রয়েছে।
বিচারক— আগের সাবমিশনেও তো একই কথা বলেছিলেন। তার ভিত্তিতেই হেফাজত হয়েছিল। আবার তা হলে হেফাজতে কেন চাইছেন?
সিবিআই আইনজীবী — উনি সহযোগিতা করেননি। কোনও প্রমাণ দেখে কিছু বলেননি। এ ব্যাপারে উঠে আসা নানা তথ্য প্রসঙ্গেও মুখ খোলেননি। তা ছাড়া নতুন কিছু নাম এবং তথ্য উঠে এসেছে তা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। তাই হেফাজত চাই।
এই সময়ে সিবিআই একটি সিডি জমা দেয় আদালতে। তারা জানায় নিয়োগ সংক্রান্ত জরুরি তথ্য গায়েব করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত বহু তথ্যই আর এখন ব্যাক-আপে নেই।
শান্তিপ্রসাদের আইনজীবী— শান্তিপ্রসাদের এমন কিছু সম্পত্তি নেই। ৬২৫ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে থাকেন। ৭০ বছরের বেশি বয়স। অসুস্থও। হেফাজতে না রাখাই ভাল। তা ছাড়া অশোক সাহাও উপদেষ্টাই ছিলেন। ওঁরও বিশেষ সম্পত্তি নেই। ওঁদের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করা হোক।
সিবিআই— অসুস্থতার কথা মেডিক্যাল রিপোর্টে বলা হয়নি। হঠাৎ এখন কোথা থেকে এ কথা উঠছে।
শান্তিপ্রসাদের আইনজীবী— আপনি অত্যন্ত দামি কথা বলেছেন...
তাঁকে থামিয়ে দিয়ে সিবিআই আইনজীবী বলেন, এখানে দামি কথা বলে কিছু হয় না। আমরা তদন্ত করছি। এটি তদন্তেরই অংশ। নিয়ম মেনে তদন্ত হবে। এখানে আরও বড় ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই হেফাজত জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy