Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal SSC Scam

কুন্তল আঙুল তুলেছেন তাঁর দিকে, কে এই নীলাদ্রি ঘোষ? সরাসরি কথা বলল আনন্দবাজার অনলাইন

বছর সাতচল্লিশের নীলাদ্রির বাড়ি গড়িয়ায়। প্রথমে তিনি একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নীলাদ্রির দাবি, ২০০০ সাল থেকেই তাপসের সঙ্গে তাঁর পরিচয় একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সূত্রে।

নিলাদ্রি স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন, কোন কোন সূত্রে তিনি জড়িয়ে ছিলেন তাপস-কুন্তলের সঙ্গে।

নিলাদ্রি স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন, কোন কোন সূত্রে তিনি জড়িয়ে ছিলেন তাপস-কুন্তলের সঙ্গে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ ।

সারমিন বেগম
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:৩২
Share: Save:

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁর নাম গত কয়েক দিন ধরে বার বার উঠে আসছে। কখনও গ্রেফতার হওয়া তৃণমূল যুবনেতা কুন্তল ঘোষের মুখে। কখনও বা তাঁর কথা বলেছেন তাপস মণ্ডল। কিন্তু যাঁর কথা তাঁরা বলছেন, সেই নীলাদ্রি ঘোষ বাকি দুনিয়ার কাছে অচেনা। ফলে নীলাদ্রি হয়ে উঠেছেন একটি ‘রহস্যময়’ চরিত্র। সোমবার বিকেলে সেই নীলাদ্রির সঙ্গেই সরাসরি কথা বলল আনন্দবাজার অনলাইন। তিনি স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন, কোন কোন সূত্রে তিনি জড়িয়ে ছিলেন তাপস-কুন্তলের সঙ্গে। কোথাকার টাকা, কী ভাবে কুন্তলের কাছ থেকে তাঁর হাত ঘুরে গিয়েছিল তাপসের কাছে।

বছর সাতচল্লিশের নীলাদ্রির বাড়ি গড়িয়ায়। প্রথম দিকে তিনি একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে এখন আয়ুর্বেদিক ওষুধের ব্যবসা করেন। নীলাদ্রির দাবি, ২০০০ সাল থেকেই তাপসের সঙ্গে তাঁর পরিচয় একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সূত্রে। সেই সুবাদেই তাপসের অফিসে তাঁর যাতায়াত ছিল। তবে কুন্তলের সঙ্গে গত বছর দুর্গাপুজোর আগে তাঁর পরিচয় হয় তাপসের মাধ্যমে। আনন্দবাজার অনলাইনকে নীলাদ্রি জানিয়েছেন, কুন্তলকে আগে তিনি চিনতেন না। গত বছর পুজোর আগে তাঁর সঙ্গে কুন্তলের পরিচয় হয়। কুন্তল নিউ টাউনের যে ফ্ল্যাটে থাকতেন, যেখানে গত সপ্তাহে ইডি হানা দিয়েছিল, সেখানেও তিনি কয়েক বার গিয়েছেন বলেও সোমবার জানিয়েছেন নীলাদ্রি।

তাপসের সঙ্গে বাঁকুড়ার একটি রিসর্টে নীলাদ্রি গিয়েছিলেন কুন্তলের সঙ্গে দেখা করতে। সেই প্রথম দেখা। একই সঙ্গে নীলাদ্রি জানিয়েছেন, টাকা লেনদেনের বিষয়ে তাপসের ডায়েরিতে কুন্তল নামে কারও সই ছিল। সেই ডায়েরিও তাঁকে তাপস দেখিয়েছিলেন। তাপসই তাঁকে জানিয়েছিলেন, কুন্তল চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়েছেন। সেই টাকা ফেরত পেতেই তাপসের সঙ্গে বাঁকুড়ার একটি রিসর্টে গিয়ে নীলাদ্রি দেখা করেছিলেন কুন্তলের সঙ্গে। টাকা কুন্তলের কাছ থেকে নিয়ে তা আবার চাকরিপ্রার্থীদের ফেরত দেওয়ার দাবিও করেন নীলাদ্রি। তাঁর কথায়, ‘‘চাকরিপ্রার্থীদের টাকা ফেরত পেতে তাপসের সঙ্গেই বাঁকুড়ার রিসর্টে কুন্তলের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। কুন্তল চাকরিপ্রার্থীদের টাকা ফেরত দেওয়ার নাম করে বাঁকুড়াতে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। সেই টাকা বিভিন্ন সময়ে দর কষাকষিও হয়। কুন্তল বলেছিলেন, তিনি কয়েক দফায় টাকা মিটিয়ে দেবেন। যদিও বাঁকুড়াতে টাকার লেনদেন হয়নি।’’

নীলাদ্রির দাবি, বাঁকুড়ায় টাকার লেনদেন না হলেও তার কয়েক দিনের মধ্যেই অর্থাৎ, পুজোর আগে এবং পরে দু’দফায় কুন্তল তাঁকে ছ’লক্ষ টাকা দেন। তাঁর কথায়, ‘‘তাপসের কথাতেই আমি কুন্তলের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে গিয়েছিলাম। নিউ টাউনের যে ফ্ল্যাটে ইডির তল্লাশি হয়েছে, সেখানেও কয়েক বার গিয়েছিলাম। পুজোর আগে এবং পরে দু’দফায় কুন্তল আমাকে ৬ লক্ষ দিয়েছে। দু’ লক্ষ টাকা নগদ। বাকিটা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।’’ ওই টাকা সংগ্রহ করে তাপস যে সব চাকরিপ্রার্থীদের ফেরত দিয়ে দিতে বলেছিলেন, নীলাদ্রির দাবি, তিনি তা তাঁদের দিয়েও দিয়েছিলেন।

আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে নীলাদ্রি দাবি করেছেন, তাঁর সঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার প্রত্যক্ষ কোনও যোগ নেই। তাপসের সঙ্গে পরিচয়ের খাতিরেই তিনি চাকরিপ্রার্থীদের টাকা কুন্তলের কাছ থেকে সংগ্রহ করছিলেন বলেও দাবি করেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাপস এর আগে দাবি করেছিলেন, নীলাদ্রিও দু’জন চাকরিপ্রার্থীর জন্য টাকা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘নীলাদ্রি আমার কর্মচারী নয়। ওরও দু’জন প্রার্থী ছিল।’’ সে প্রসঙ্গ তুলতেই এই মামলায় তাঁর ‘কোনও যোগ নেই’ দাবি করা নীলাদ্রি বলে ওঠেন, ‘‘সে বছর পাঁচেক আগের কথা। তাপসের কথাতেই দু’জন প্রার্থীর কাছ থেকে দু’লক্ষ টাকা নিয়ে গোপাল দলপতিকে দিয়েছিলাম।’’ তবে সেই টাকাও কুন্তলের কাছে গিয়েছিল কি না, তা তিনি জানেন না বলেই জানিয়েছেন নীলাদ্রি। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, যে প্রার্থীদের কাছ থেকে তিনি টাকা নিয়েছিলেন তা ফেরত দিয়ে দিয়েছিলেন। তাপসের দাবি, এই গোপাল দলপতিও তাঁর অফিসে যেতেন। যে চাকরিপ্রার্থীরা আসতেন, তাঁদের সঙ্গে গোপালের যোগাযোগ। যদিও গোপালের কোনও সন্ধান এখনও পর্যন্ত আনন্দবাজার অনলাইন পায়নি।

সত্যিই তিনি যদি কিছু না করে থাকেন, তা হলে কেন বার বার কুন্তল তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলছেন? নীলাদ্রির জবাব, ‘‘কুন্তল শাসকদলের যুবনেতা। আমার থেকে ওঁর ক্ষমতা অনেক বেশি। আমি কী করে ওঁকে হুমকি দেব?’’ ইডি-সিবিআইয়ের নাম করে নীলাদ্রি তাঁর কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন বলে যে অভিযোগ কুন্তলের স্ত্রী করেছেন, তা নিয়ে নীলাদ্রির বক্তব্য, ‘‘ওঁর স্ত্রী কি কোনও দিন আমাকে দেখেছেন?’’

প্রসঙ্গত, কুন্তলের স্ত্রী জয়শ্রী ঘোষ দাবি করেছিলেন, নীলাদ্রি ইডি-সিবিআই আধিকারিকদের নাম করে, হুমকি দিয়ে অনেক টাকা হাতিয়েছিলেন। নীলাদ্রিকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য-‘ঘনিষ্ঠ’ তাপসের ‘দালাল’ বলেও উল্লেখ করেন কুন্তল। অন্য দিকে তাপসের দাবি, নীলাদ্রি তাঁর পূর্ব পরিচিত। তাঁর অফিসেও নীলাদ্রির যাতায়াত ছিল। তিনি এ-ও জানান, চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে সংগৃহীত টাকা ফেরতের জন্যই তিনিই নীলাদ্রিকে কুন্তলের কাছে পাঠিয়েছিলেন।

নীলাদ্রি যদিও এ সব অভিযোগের প্রত্যেকটিকেই অসত্য বলে দাবি করে নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করেছেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy