ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজার মেলার মাঠে এখনও এ ভাবেই পড়ে রয়েছে পোড়া গাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।
পোড়া গাড়ির কঙ্কালগুলি এখনও রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়ে। পাশে ছিলেন দুই যুবক। গাড়ির ছবি তুলতে গেলে উদাসীন গলায় বললেন, ‘‘এমন আরও অনেক ছবি পাবেন ক’দিনের মধ্যে।’’ মানে? এক জন উত্তর করলেন, ‘‘ভোটটা যদি হয়, তা হলে দেখবেন আরও কত কাণ্ড বাকি!’’
কেন্দ্রীয় বাহিনী তো ঢুকল শনিবার থেকে। রুটমার্চ শুরু হবে। তার পরেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে? প্রশ্ন শুনে যুবক বলেন, ‘‘ভোটের দিন কী হয়, দেখবেন! আর গোলমাল তো শুধু ভোটের দিনে হয় না, তার আগে-পরেও তো দিন পড়ে আছে।’’
ভাঙড়-২ ব্লকে সব আসনে ভোট আদৌ হবে কি না, নাকি তৃণমূল সব আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হবে— তা এখনও আদালতের নির্দেশের অপেক্ষায়। মনোনয়ন জমার শেষ দিন বেলা ৩টের পরে মনোনয়ন জমা পড়েছিল আইএসএফের। সেই মনোনয়ন ইতিমধ্যে বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। তা নিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে আইএসএফ। মনোনয়ন যদি বাতিল হয় শেষমেশ, তা হলে ভোটাভুটির গল্প থাকছে না। আর যদি ভোটাভুটি হয়, তা হলে?
এখনও সন্ধ্যাবেলা ভাঙড়ের জয়পুর, শানপুকুর, কচুয়া, বেলেদোনা বাজার এলাকায় ঢুকলে দেখা যাবে, সব শুনশান। কিছু দোকান খোলা। তবে রাস্তাঘাটে লোকজন নেই বললেই চলে। টহল দিচ্ছে পুলিশের গাড়ি। ১৫ জুনের আগেও পরিস্থিতিটা এমন ছিল না। রাত পর্যন্ত জমজমাট থাকত এলাকা। কিন্তু ১৫ জুন, মনোনয়ন জমার শেষ দিন ভাঙড়-২ ব্লকে মনোনয়ন জমাকে কেন্দ্র করে যে উত্তাপ তৈরি হয়েছে, প্রাণহানি হয়েছে, তাতেই সবাই ফের সন্ত্রস্ত।
জয়পুর গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘প্রতি বারই ভোটের আগে ভাঙড়ে এমন সন্ত্রাস হয়। বেশির ভাগ আসনে ভোট হয় না। যদি বা হয়, তা হলে ভোট লুট, ছাপ্পা, রিগিং— এ সব দেখতে হয় চোখের সামনে।’’
এক সময়ে এই এলাকায় লড়াইটা ছিল মূলত পাওয়ার গ্রিড বিরোধী জমি কমিটি বনাম তৃণমূলের। এখন টক্কর তৃণমূলের সঙ্গে আইএসএফের।
বিজয়গঞ্জ এলাকার এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘যে যার স্বার্থে লড়াই করে যাচ্ছে। আমরা যারা ব্যবসা করে খাই, তাদেরই সমস্যা। সন্ধ্যা হলেই দোকান বন্ধ। ব্যবসা লাটে ওঠার জোগাড়।’’ কাঁঠালিয়া এলাকার এক কলেজ ছাত্রীর কথায়, ‘‘কলেজ সেরে প্রাইভেট টিউশন পড়ে বাড়ি ফিরতে রাত হয়। কিন্তু বাড়ির বড়রা বলেছেন, যত দিন না ভোট মিটছে, ফিরতে রাত করা চলবে না।’’
পোলেরহাটের এক তরুণ জানালেন, পাড়ায় সবাই কোনও না কোনও পক্ষ। তাই আড্ডা দেওয়াই মুশকিল। তর্কাতর্কি হামেশাই বদলে যায় উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়, ছোটখাট হাতাহাতিতেও।
তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম আর তাঁর বাহিনীই বরাবর ভাঙড়ে ‘ভোট করে’ বলে জানাচ্ছেন এলাকার অধিকাংশ মানুষ। আরাবুল অবশ্য গোলমালের দায় নিচ্ছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘আইএসএফের লোকজন প্রচুর অস্ত্র জোগাড় করেছে। বাইরে থেকে লোক এনে সে দিন হামলা চালিয়েছিল। ভোট হলে ওরা ফের সন্ত্রাস করতে পারে।’’
উল্টো দিকে, তৃণমূল এই এলাকায় লাগাতার সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর। তাঁর কথায়, ‘‘এখন যদি সত্যিই ভোট হয়, তা হলে তৃণমূল যে এখানে কী রক্তবন্যা বইয়ে দিতে পারে— তা কেউ জানে না। তবে ভরসা এটুকুই, মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন।’’ যদিও তৃণমূলের পাল্টা দাবি, তাঁদের দু’জন খুন হয়েছেন গোলমালে। তাই কারা পিছনে রয়েছে, বোঝাই যাচ্ছে।
এই চাপানউতোরে সব থেকে করুণ অবস্থা সাধারণ মানুষের। তাঁরা এখন তাই কেন্দ্রীয় বাহিনী আসার দিকেই তাকিয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy