খণ্ডযুদ্ধে উত্তপ্ত নলহাটি। —নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন ঘিরে ফের আক্রান্ত বিরোধীরা। বীরভূমের নলহাটি থেকে বর্ধমানের কাটোয়া— কোথাও রক্তাক্ত হলেন সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ, কোথাও বা আবার বাধা দেওয়া হল বিজেপি প্রার্থীদের। পাশাপাশি চলল খণ্ডযুদ্ধ, বোমাবাজি, ভাঙচুর, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ভয় দেখানো। অভিযোগ উঠল শাসক দলের বিরুদ্ধে। রুটিনমাফিক সেই অভিযোগ অস্বীকার করলেন তৃণমূল নেত়ৃত্ব।
মনোনয়ন দাখিল করার প্রথম দিন থেকেই রাজ্য জুড়ে বিরোধীদের ঠেকাতে মারধর, ভাঙচুর, গুলি-বোমা চালানো— এমন নানা অভিযোগ উঠেছিল শাসক দলের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবারও সেই ছবিতে কোনও বদল ঘটল না। পেশী প্রদর্শনের সেই একই অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
এ দিন সকাল থেকেই নলহাটির ১ এবং ২ ব্লকের বিডিও অফিস চত্বর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সকাল ১০টা নাগাদ ওই এলাকায় জমায়েত হয় তৃণমূলআশ্রিত সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা। লাঠি-হাঁসুয়া হাতে শাসক দলের কর্মীদের উপস্থিতি ছাড়াও ছিল বাইক বাহিনীর দাপাদাপি। মাড়গ্রাম থেকে বহিরাগত দুষ্কৃতীদের হাতে দেখা গিয়েছে বোমা-পিস্তল। অভিযোগ, নলহাটির ১ ব্লকের বিডিও অফিসের সামনে এলাকা দখলের জন্য ব্যাপক বোমাবাজি করতে থাকে ত়ৃণমূল কর্মীরা। দুপুরে বিডিও অফিসের সামনের রাস্তায় সিপিএম এবং কংগ্রেসের যৌথ মিছিল ঘিরে ফের উত্তেজনা তৈরি হয়। দু’দলই যৌথ ভাবে মিছিল করে বিডিও অফিসে এসে মনোনয়ন দাখিল করবে বলে স্থির করেছিল। তির-ধনুক নিয়ে জনা চারেক আদিবাসীকে সামনে রেখে যৌথ মিছিল এগতে থাকে সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ রামচন্দ্র ডোম, প্রাক্তন বিধায়ক দীপক চট্টোপাধ্যায় এবং সিপিএম নেতা গৌতম ঘোষের নেতৃত্বে। অভিযোগ, তার আগে থেকেই ওই এলাকায় ফের এক দফা বোমাবাজি হয়। এর কিছু ক্ষণ পর বিডিও অফিস চত্বরে মিছিল এসে পৌঁছলে উত্তেজনা চরমে ওঠে। অভিযোগ, মিছিল লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়। পাল্টা হিসাবে মিছিল থেকেও ইট-পাটকেল ছোড়া শুরু করেন অনেকে। বিডিও অফিস চত্বরে দু’পক্ষের খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ভিড়ের মধ্যে থেকে রামচন্দ্রবাবুকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়। তাঁর মাথা ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। সংঘর্ষ চরম আকার নেয়। বোমা ও ইটের ঘায়ে পুলিশ-সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি-সহ অনেকেই অল্পবিস্তর জখম হন। নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে বিডিও অফিসের ভিতরে আশ্রয় নেন পুলিশকর্মীরাও। এর প্রায় আধ ঘণ্টা পরে সিআরপি কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। পাশাপাশি, শূন্যে গুলি চালিয়ে, কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে যুযুধান দু’পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। তবে এসপি নীলকান্তম সুধীর কুমারের দাবি, “বিডিও অফিস চত্বরে বোমাবাজির কথা সঠিক নয়। ব্লক অফিসের থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে দু’টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।” ঘটনায় শূন্যে গুলিচালনার কথাও অস্বীকার করেছে পুলিশ। এসপি-র দাবি, “কাঁদানে গ্যাস ছোড়া বা এয়ারগান ব্যবহার করা হলেও শূন্যে গুলি গুলিচালনা করা হয়নি।”
আরও পড়ুন: মনোনয়নপত্র তোলাকে ঘিরে বোমা-গুলি, রণক্ষেত্র রায়গঞ্জ
আরও পড়ুন: মারের মুখেও মনোনয়ন, তৃণমূলের ঠিক পরেই বিজেপি
নলহাটিতে সিপিএম এবং কংগ্রেসের যৌথ মিছিল। —নিজস্ব চিত্র।
এ দিনের ঘটনার পর রামচন্দ্রবাবু অভিযোগ, “সকাল থেকে নলহাটির বিভিন্ন রাস্তায় বোমাবাজি চালিয়েছে তৃণমূল।” খণ্ডযুদ্ধে জখম রামচন্দ্রবাবুকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে পরে তিনি বলেন, “গণতন্ত্র উদ্ধারে এই রক্তপাত ব্যর্থ হবে না।” যদিও এ দিনে বোমাবাজি থেকে শুরু করে অস্ত্র নিয়ে দাপাদাপি— সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। ব্লক তৃণমূল সভাপতি অশোককুমার ঘোষের দাবি, “রামচন্দ্র ডোম, প্রাক্তন বিধায়ক দীপক চট্টোপাধ্যায় এবং সিপিএমে গৌতম ঘোষের নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনী তৃণমূল কর্মীদের আক্রমণ করেছে। আমাদের কোনও লোকই বোমাবাজি করেনি। ওরা বহিরাগত হতে পারে।”
মনোনয়নের খতিয়ান
গ্রাম পঞ্চায়েত
পঞ্চায়েত সমিতি
জেলা পরিষদ
তৃণমূল - ৫,৯০০
বিজেপি – ৩,৯০০
সিপিএম – ১,৪০০
কংগ্রেস – ৫০০
মোট- ১২,৬০০
(বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত)
তৃণমূল – ৯১৬
বিজেপি - ৬০০
সিপিএম - ২৩০
কংগ্রেস - ৫৪
মোট- ১৯০০
(বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত)
তৃণমূল – ২৯
বিজেপি – ৪০
সিপিএম – ১৯
কংগ্রেস – ১৫
মোট ১৪৩
(বুধবার রাত পর্যন্ত)
নলহাটির মতোই মনোনয়ন ঘিরে সকাল থেকেই কাটোয়ার দাঁইহাটে ঝামেলা শুরু হয়। সকাল ১০টা নাগাদ কাটোয়া ২ ব্লক অফিসে মনোনয়ন দাখিল করার কথা ছিল বিজেপি প্রার্থীদের। সেই মতো কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ব্লক অফিসের কাছে যাচ্ছিলেন বিজেপি-র প্রার্থীরা। অভিযোগ, সেখানে আগে থেকেই শাসক দলের প্রায় কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থক জড়ো হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাও ছিল বলে অভিযোগ। বিজেপি প্রার্থীরা মনোনয়ন তুলতে বাধা পান। শুধু তাই নয়, তাঁদের বেধড়ক মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। পাশাপাশি, ভাঙচুর করা হয় একাধিক গাড়ি, মোটরবাইক।
শুধুমাত্র কাটোয়াতেই নয়, মঙ্গলকোট, মন্তেশ্বর, গলসি, আউশগ্রাম, কাঁকসা, সালানপুর, রানিগঞ্জ— রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তের মতোই গোটা বর্ধমান জুড়েই মনোনয়ন ঘিরে অশান্তি দেখা দিয়েছে। এর আগেও কাটোয়াতে মনোনয়ন তুলতে গিয়ে বাধা পেয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থীরা। মঙ্গলবার চার জন বিজেপি প্রার্থী আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ। সে দিন মনোনয়ন তোলার পরে কাটোয়া ২ পঞ্চায়েত সমিতি থেকে ফিরছিলেন শ্রীবাটী পঞ্চায়েতের বিজেপি প্রার্থী মানব ঘোষ, মমতা ঘোষ, ধানু ঘোষ ও প্রতিমা মণ্ডল। বিজেপি-র দাবি, তৃণমূলআশ্রিত দুষ্কৃতীদের কাছে আক্রান্ত হয়েছিলেন ওই চার জনই। তাদের মারে মাথা ফেটে যায় ধানু ঘোষের। তাঁকে সে দিনই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy