‘অস্বাভাবিক’ গ্রীষ্ম এ বার বর্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
চলতি মরসুমে গ্রীষ্মকে তার চিরাচরিত রুদ্রমূর্তিতে পাওয়াই যাচ্ছে না। শেষ-বৈশাখেও তেমন তাপপ্রবাহের গল্প নেই। এই কিছুটা ‘অস্বাভাবিক’ গ্রীষ্ম এ বার বর্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
গ্রীষ্মের দহনজ্বালা যতই দুঃসহ হোক, তার তীব্রতাই বর্ষার স্বাভাবিক ছন্দকে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু এ বার শুধু রাঢ় বাংলা নয়, রাজস্থান-সহ পশ্চিম ভারতেও গ্রীষ্ম খুব খানিকটা মিইয়ে রয়েছে। যে-রাজস্থানে এপ্রিলের শেষ থেকেই চড়চড়িয়ে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে, মে-র মাঝামাঝি যে-রাজস্থান পড়ে তাপপ্রবাহের কবলে, পশ্চিমি ঝঞ্ঝার রেশ কাটিয়ে সেখানে এখনও গা-ঝাড়াই দেয়নি গ্রীষ্ম। প্রশ্ন উঠছে, নিজেকে গুটিয়ে রেখে গ্রীষ্ম কি বর্ষার পথেই কাঁটা ছড়াতে চাইছে?
মৌসম ভবন এ বারের বর্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে এপ্রিলে যে-পূর্বাভাস দিয়েছিল, তাতে কৃষকদের খুশি হওয়ার যথেষ্ট কারণ ছিল। দেশ জুড়ে স্বাভাবিকের ৯৭% বৃষ্টি হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন আবহবিদেরা। আরব সাগরে বায়ুপ্রবাহের গতিপ্রকৃতি দেখে আবহবিদদের মনে হয়েছে, বর্ষা কেরল উপকূলে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পৌঁছে যাবে। কিন্তু গ্রীষ্মের দাপট তেমন নেই বলেই সংশয় বাড়ছে। মৌসুমি বায়ু মে-র শেষ সপ্তাহে কেরলে পৌঁছে গেলেও সেখান থেকে তা দ্রুত ভারতের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়বে, এমন সম্ভাবনা দেখছেন না আবহবিদদের অনেকেই।
কেন? ওই আবহবিদেরা জানান, কেরল উপকূল থেকে মৌসুমি বাযু মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে কত দ্রুত ঢুকবে, তা নির্ভর করে কয়েকটি প্রাকৃতিক শর্তের উপরে। অন্যতম প্রধান শর্ত হল উত্তর-পশ্চিম ভারতের উপরে গরম বাতাসের তীব্রতা। এ বার ঘনঘন পশ্চিমি ঝঞ্ঝার ফলে উত্তর-পশ্চিম ভারতে চলতি মাসে ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। মে-র প্রথম সপ্তাহে দেশের ওই অংশে ৫.৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা। কিন্তু এ বার হয়েছে ১৩ মিলিমিটার। এর দাপটেই উত্তর-পশ্চিম ভারতে তাপমাত্রা তেমন বাড়তে পারেনি। আগামী কয়েক দিনে ওই অঞ্চলে তাপমাত্রা কতটা বাড়ে, তার উপরে বর্ষার গতিপ্রকৃতি নির্ভর করবে বলে মনে করছেন আবহবিদদের একাংশ।
একই ভাবে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতেও মে-র প্রথমার্ধে বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের থেকে বেশি। কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় তেমন বৃষ্টি হয়নি ঠিকই। কিন্তু দেশের এই অংশে যে-এলাকার তাপমাত্রা বৃদ্ধির উপরে বর্ষার গতিপ্রকৃতি অনেকটা নির্ভরশীল, সেই রাঢ় বাংলায় লাগাতার ঝড়বৃষ্টি হয়ে চলেছে। চলতি গ্রীষ্মের মরসুমে ওই অঞ্চলে এক বারও তাপপ্রবাহের সৃষ্টি হয়নি। গ্রীষ্মের এই স্থানিক ‘অস্বাভাবিকতা’ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বর্ষার স্বাভাবিক ছন্দকে কতটা প্রভাবিত করে, সে-দিকে নজর রাখছেন আবহবিদেরা।
আশার কথা, পশ্চিম রাজস্থান এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতের অন্যত্র পারদ চড়তে শুরু করেছে। শুক্রবার পশ্চিম রাজস্থানের বিভিন্ন এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে। তাপপ্রবাহের নিরিখে এ বার পশ্চিম রাজস্থানকে টেক্কা দিয়েছে বিদর্ভ এলাকা। কিছু আবহবিদের আশা, বর্ষা কেরলে পৌঁছতে পৌঁছতে রাজস্থানের উপরে তাপবলয় তৈরি হয়ে যাবে। কিন্তু বর্ষা যদি আগেভাগে কেরলে পৌঁছে যায়, তা হলেই সমস্যা দেখা দেবে।
আবহবিদদের বড় একটি অংশের মতে, যে-ছ’টি আবহাওয়া শর্তের উপরে বর্ষার স্বাভাবিক আচরণ নির্ভর করে তার মধ্যে রাজস্থানের উপরে তাপবলয় একটি। বাকি পাঁচটি শর্ত, বিশেষ করে প্রশান্ত মহাসাগর ভারত মহাসাগর, আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগরের জলস্তরের তাপমাত্রা যদি অনুকূল থাকে, তা হলে বর্ষার স্বাভাবিক আচরণ ব্যাহত হওয়ার কথা নয়। মৌসুমি বায়ু কেরল উপকূলে পৌঁছতে পৌঁছতে ওই সব শর্তের কোন কোনটি কতটা অনুকূল বা প্রতিকূল থাকে, তার উপরেই নির্ভর করছে বর্ষার ভাগ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy