Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

গ্রামকে জুজু দেখিয়েই বিপদ, উৎসবের ‘শিকার’ লালগড়ের বাঘ

লালগড়ের জঙ্গলে আশ্রয়ের খোঁজে আসা বাঘটিকে শুক্রবার খুঁচিয়ে মেরে ফেলার পরে, বাঘ সংরক্ষণে দেশের সর্বোচ্চ সংস্থা, ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি’র (এনটিসিএ) এক কর্তা দিল্লি থেকে বলছেন, ‘‘সাকুল্যে হাজার দুয়েক বাঘ রয়েছে দেশে, রাজ্যের বন দফতর তা জেনেও নিরাপত্তাটুকু দিতে পারল না?’’

সবে-মিলে: বনকর্মীদের কাঁধে বাঘের দেহ। বাগঘোরায় শুক্রবার।— নিজস্ব চিত্র।

সবে-মিলে: বনকর্মীদের কাঁধে বাঘের দেহ। বাগঘোরায় শুক্রবার।— নিজস্ব চিত্র।

রাহুল রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৩০
Share: Save:

বাঁশের ডগায় তার ক্ষতবিক্ষত শরীরটা ঝুলিয়ে নিয়ে আসার সময় শাল চুড়োর দিকে গড় করেন মানুষটি। বিনোদ হেমব্রম, হরিণটুলির গাঁওবুড়া (সরপঞ্চ) বলছেন, ‘‘ইটো ঠিক হল নাই!’’

ঠিক যে হল না, লালগড়ের বিস্তীর্ণ বনাঞ্চলের আদিবাসী মানুষের একাংশের সঙ্গে তা মনে করছে খাস দিল্লিও। লালগড়ের জঙ্গলে আশ্রয়ের খোঁজে আসা বাঘটিকে শুক্রবার খুঁচিয়ে মেরে ফেলার পরে, বাঘ সংরক্ষণে দেশের সর্বোচ্চ সংস্থা, ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি’র (এনটিসিএ) এক কর্তা দিল্লি থেকে বলছেন, ‘‘সাকুল্যে হাজার দুয়েক বাঘ রয়েছে দেশে, রাজ্যের বন দফতর তা জেনেও নিরাপত্তাটুকু দিতে পারল না?’’ আগামী দু’দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে রিপোর্ট তলব করেছে এনটিসিএ। দিল্লি থেকে একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়ে এ ব্যাপারে ‘নিরপেক্ষ’ তদন্ত করতে চায় তারা।

বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ তা জানেন। বলছেন, ‘‘এই পরিণতিটা ঠিক হল না, তবে আমরা চেষ্টার ত্রুটি রাখিনি।’’ কী চেষ্টা করেছিল তাঁর বন দফতর?

রাজ্যের বন-উপদেষ্টামণ্ডলীর এক সদস্য ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘কিচ্ছু না। বাঘের মতো বিপন্ন প্রজাতির একটি প্রাণী আমাদের বনাঞ্চলে এসেছে শুনেও শীর্ষ বনকর্তাদের কেউই লালগড়ে যাননি।’’ তিনি মনে করেন, বাঘের গতিবিধির উপর নজর রাখা দূরে থাক, বরং লালগড়ের এক বন থেকে অন্য বনে, হাতি তাড়ানোর ঢঙে তাকে শুধু তাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছেন বনকর্মীরা। তার দেখভালের জন্য ‘মনিটরিং কমিটি’ও গড়ার প্রয়োজন মনে করেননি। বাঘ বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘দু’মাস ধরে প্রাণীটা একটা আশ্রয় খুঁজে গেল আর বনকর্মীরা গভীর জঙ্গলে তার একটা নিশ্চিন্ত ঠিকানা খুঁজে দেওয়ার বদলে গ্রামবাসীদের অযথা ভয় পাইয়ে দিলেন, ‘বাঘ আছে জঙ্গলে যাবেন না’ বলে।’’ বাঘ বিশেষজ্ঞ জয়দীপ কুণ্ডুর আক্ষেপ, ‘‘আদিবাসীদের একটু সংযত করার চেষ্টাও যদি করা যেত!’’ যায়নি, তারই পরিণতি আদিবাসীদের শিকার উৎসবের ‘শিকার’ লালগড়ের বাঘটি।

আরও পড়ুন: ড্রোন, ফাঁদ-খাঁচা কিছুই কাজে এল না, বল্লমে খুন দক্ষিণরায়

ঘুমপাড়ানি গুলিতে বাঘটিকে কাবু করতে যে দলটি সুন্দরবন থেকে এসেছিল, তাদের অভিজ্ঞতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন বন দফতরেরই এক কর্তা। বলছেন, ‘‘সুন্দরবনের গ্রামে গোয়ালে ঢোকে বাঘ, তাকে জাল দিয়ে ধরা হয়, ঘুমপাড়ানি গুলির ব্যবহার তারা শিখল কবে! অথচ বন দফতরেই ট্র্যাঙ্কুলাইজ করার পাকা শিকারি রয়েছে, তাঁকে ব্যবহারই করা হল না!’’ আশ্রয়ের খোঁজে এসে তাই গুম খুন হয়ে গেল ভিন্‌ দেশি দক্ষিণরায়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE