এক, দুই, তিন। মামলা অন্তত তিনটি। তার মধ্যে একটি মামলা দায়ের করার পরে ৯০ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। অন্য দু’টির সেই সময়সীমা পেরোতে কয়েক দিন বাকি। কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাক্তন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের বিরুদ্ধে ওই সব মামলায় চার্জশিট জমা পড়েনি।
প্রতারণা ও সোনা লুটের মামলায় মূল অভিযুক্ত ভারতী সিআইডি-র কাছে এখনও অধরা। ওই মামলায় যাঁরা গ্রেফতার হয়েছেন, ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট জমা না-পড়ায় তাঁরাও এ বার একে একে জামিন পেয়ে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন আইনজীবীদের একাংশ।
ওই মামলায় অভিযুক্ত বিমল ঘড়ুই নামে যে-সোনা ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, শুক্রবারেই ঘাটাল মহকুমা আদালত থেকে তিনি জামিন পেয়েছেন। ভারতীর আনন্দপুর এলাকার আবাসন থেকে গ্রেফতার করা হয় কেয়ারটেকার রাজমঙ্গল সিংহকে। তিনিও ঘাটাল মহকুমা আদালতে জামিন পেয়ে গিয়েছেন।
সিআইডি-র খবর, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর ও খড়্গপুর লোকাল থানায় ভারতী-সহ ছ’জন পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে সোনা লুট ও প্রতারণার মামলা দায়ের করে সিআইডি। ভারতী-ঘনিষ্ঠ সিআই শুভঙ্কর দে, ওসি প্রদীপ রথ, কনস্টেবল সঞ্জয় মাহাতো, প্রাক্তন ওসি চিত্ত পাল এবং পুলিশকর্মী দেবাশিস দাসকে গ্রেফতার করা হয়। আইনজীবীদের একাংশের কথায়, ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৬৭ ধারা অনুযায়ী মামলা শুরুর ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট পেশ না-করলে অভিযুক্তদের জামিন পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
সময়মতো চার্জশিট পেশ করা হল না কেন? এই বিষয়ে মুখে কলুপ এঁটেছেন সিআইডি-কর্তারা। এক গোয়েন্দাকর্তা জানান, মূল অভিযুক্ত ভারতী ধরা না-পড়ায় ঘটনার তদন্ত শেষ করা যায়নি। তাই চার্জশিট জমা দেওয়া হয়নি। আইনজীবীদের পাল্টা যুক্তি, ভারতীকে পলাতক দেখিয়েও তো চার্জশিট জমা দেওয়া যেত! সেটা করা হল না কেন? জবাব মেলেনি।
তদন্তকারীদের একাংশ জানাচ্ছেন, চার্জশিট পেশের বিষয়ে প্রশাসনের শীর্ষ স্তরকে সে-ভাবে উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি। ভারতী এক সময় রাজ্য সরকারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। আচমকাই তাঁর নামে মামলা রুজু করে সিআইডি। তাঁর ঘনিষ্ঠ অফিসারদের গ্রেফতার করে, ভারতীর বাড়ি-সহ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে নগদ টাকা ও গয়না বাজেয়াপ্ত করা হয়। সেই সময়ে ‘ভয়েস মেসেজ’ মারফত ভারতী বারবার সিআইডি-র কাজকর্মের নিন্দাও করেন।
মাস দুয়েক হল ভারতী ‘ভয়েস মেসেজ’ বন্ধ করে দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে তদন্তকারীদেরও দৌড়ঝাঁপ স্তিমিত হয়ে এসেছে। পুলিশ শিবিরেই সন্দিগ্ধ প্রশ্ন শোনা যাচ্ছে, তা হলে কি ভারতীর সঙ্গে ‘সমঝোতা’র সূত্র পাওয়া গিয়েছে?
এই প্রশ্নের সরাসরি জবাব মিলছে না। তবে ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট পেশ না-করাটা সম্ভাব্য সমঝোতারই সঙ্কেত বলে মনে করছেন আইনজীবীদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, ওই মামলায় ধৃতেরা একে একে জামিন পেয়ে গেলে, তার পরে আত্মসমর্পণ করে অনায়াসে জামিন পেয়ে যেতে পারেন ভারতীও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy