ফাইল চিত্র।
এত দিন বাদানুবাদ চলছিল সচিব পর্যায়ে। শনিবারের সকালে অসহযোগিতার নালিশ এনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ বার চিঠি দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর অভিযোগ, রাজ্য নারাজ বলে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফিরতে পারছেন না। নবান্নের দাবি, শুরু থেকেই সরকার ধাপে ধাপে শ্রমিক ফেরানোর পক্ষে। ইতিমধ্যেই শ্রমিকদের ফেরাতে বিভিন্ন রাজ্য থেকে ১০টি ট্রেন রাজ্যে প্রবেশে সম্মতি দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে একটি ট্রেন কাল মালদহ পৌঁছবে। রাজ্যের রেল দফতর থেকেও একটি তালিকা মিলেছে, যাতে তেলঙ্গানা, কর্নাটক, পঞ্জাব ও তামিলনাড়ু থেকে এ রাজ্যে অন্তত ৮টি ট্রেন আসার কথা বলা হয়েছে। মালদহে আসতে চলা ট্রেনটিও সেই তালিকায় রয়েছে। যদিও দিল্লির রেল মন্ত্রকের দাবি, বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাংলা অভিমুখী কয়েকটি ট্রেনের প্রস্তাব পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাত সাড়ে আটটার সময় জমা দিয়েছে। রাতে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব আবার দাবি করেন, রেলের তথ্য ভুল।
শ্রমিকদের ফেরানোর প্রশ্নে রাজ্য অনীহা দেখাচ্ছে বলে সরব কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী, বিজেপির দিলীপ ঘোষেরা। সেই সূত্র ধরেই মমতাকে চিঠি লিখে অমিত জানান, কেন্দ্র ইতিমধ্যে প্রায় দু’লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিককে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে। বাংলার শ্রমিকদের ফেরাতে কেন্দ্র চেষ্টা করলেও, রাজ্য সাড়া দিচ্ছে না। এর পরেই রাজ্যের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে শাহ লিখেছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ট্রেনগুলিকে রাজ্যের সীমানায় ঢুকতেই দিচ্ছে না।
অমিতের ওই চিঠির ভিত্তিতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের বক্তব্য, ২০২১-এর নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে বিজেপি তথা কেন্দ্র। বিকেলে নবান্নে স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিভিন্ন রাজ্য তাদের রাজ্য থেকে বাংলার মানুষকে ফিরিয়ে দিতে আমাদের সম্মতি চায়। তার পরে আমরা ইতিমধ্যেই আরও ১০টি ট্রেন আসার অনুমোদন জানিয়েছি।” তিনি জানান— কেরল, রাজস্থান, তেলঙ্গানা, তামিলনাড়ু, পঞ্জাব এবং কর্নাটক সরকারের সঙ্গে রাজ্যের আলোচনা চলছে। ওই রাজ্যগুলি থেকে একাধিক ট্রেন আসার সূচি তৈরি হয়েছে। স্বরাষ্ট্রসচিবের কথায়, “বৃন্দাবন, বারাণসী, মথুরায় আটকে পড়া তীর্থযাত্রীদের জন্যও ট্রেনের ব্যবস্থা করা হবে। কাল পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে তেলঙ্গানা থেকে একটা ট্রেন মালদহে পৌঁছবে।”
আরও পড়ুন: রেলের বক্তব্য অসত্য, টুইট আলাপনের, সঙ্ঘাতের পথেই রাজ্য
আরও পড়ুন: ট্রেনে পিষে এই মর্মান্তিক মৃত্যু কেন্দ্রের চরম অবজ্ঞারই ফল
রাজ্য প্রশাসনের ওই দাবির পরে রেল মন্ত্রকের এক কর্তা সন্ধ্যায় বলেন, “মালদহের উদ্দেশে এ রকম কোনও ট্রেন যাচ্ছে বলে জানা নেই। বেঙ্গালুরু থেকে ৩টি ট্রেন চালানোর খবরও রেল জানে না। রেল মন্ত্রক খুশি হবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ট্রেনগুলি খুঁজে দিলে।” পরে রাতে রেল মন্ত্রক জানিয়েছে, রাত সাড়ে আটটা নাগাদ পশ্চিমবঙ্গের একটি প্রস্তাব তাদের কাছে জমা পড়েছে। ৩টি ট্রেন কর্নাটক, ২টি করে ট্রেন পঞ্জাব ও তামিলনাড়ু এবং ১টি ট্রেন তেলঙ্গানা থেকে ছাড়বে। তবে দিনক্ষণ ঠিক হয়নি।
রেল মন্ত্রকের এই টুইটের পরেই রাত ১১টা নাগাদ পাল্টা টুইট করেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই টুইটে স্বরাষ্ট্রসচিব জানিয়েছেন, রেল মন্ত্রকের বক্তব্য বিভ্রান্তিকর এবং অসত্য। তার পরের লাইনেই উল্লেখ করা হয়েছে পঞ্জাব, তামিলনাড়ু, কর্নাটক ও তেলঙ্গানার যে ট্রেনগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে রেল মন্ত্রকের টুইটে তার প্রস্তাব গত কালই (৮ মে) অনুমোদন করেছিল রাজ্য। এবং সেই অনুসারে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলোর সঙ্গে প্রয়োজনীয় যোগাযোগও করা হয়েছে। অর্থাত্ স্বরাষ্ট্রসচিবের ইঙ্গিত খুব স্পষ্ট যে, অমিত শাহের চিঠি পেয়ে রাজ্য নড়েচড়ে বসেছে পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে, কেন্দ্রের এই প্রচার সম্পূর্ণ অসত্য। রাজ্য স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই ভিন্রাজ্যে আটকে পড়া শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সচেষ্ট। শুধু তাই নয়, এর জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা আগেই করা হয়ে গিয়েছে। স্বরাষ্ট্রসচিব এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন শনিবার (৯ মে) নতুন করে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
তবে অমিতের চিঠি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব। তার জবাব দেওয়া হয়েছে বা হবে, এমন খবরও নেই। সরকারি শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য— স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো চিঠি দিয়েছেন আজ। তার আগেই ৫টি রাজ্যের সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছে। ১০টি ট্রেনও চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরত নেবে না, পশ্চিমবঙ্গ কখনও বলেনি। প্রথম থেকেই রাজ্যের অবস্থান ছিল, যে যেখানে আছে, সেখানেই থাক। এক সঙ্গে বিপুল সংখ্যক মানুষ হাজির হলে রাজ্যকে তাদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে হবে। তাই রাজ্যের প্রস্তাব ছিল ধাপে ধাপে শ্রমিকদের পাঠানো হোক। পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রয়োজনে খরচ দিয়ে দেবে। ইতিমধ্যেই আটকে থাকা শ্রমিকদের জন্য খরচ হয়েছে ২৫ কোটি। ভেলোরে আটকে পড়াদের কাছে ৬০ লক্ষ টাকা পাঠিয়েছে রাজ্য। বিভিন্ন রাজ্য থেকে গাড়ি করেও লোকেদের ফেরানো হয়েছে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy