ফাঁকা: সংক্রমণ রুখতে সপ্তাহে দু’দিনের সার্বিক লকডাউন ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার, তার প্রথম দিনে সুনসান ধর্মতলা চত্বর। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
এমন লকডাউন দূরে থাক, বন্ধেও এমন ছবি রাজ্য শেষ কবে দেখেছে, বলা কঠিন! সাগর থেকে পাহাড়, কলকাতা থেকে কোচবিহার— সর্বত্রই পথঘাট সুনসান। জরুরি পরিষেবা ছাড়া প্রায় সবই বন্ধ। যে দু’চার জন বাইরে বেরিয়েছিলেন, তাঁদের বারবার পুলিশি জেরার মুখে পড়তে হয়েছে। জবাবে সন্তুষ্ট না-হলে কোথাও পুলিশ গ্রেফতার করেছে, কোথাও আটক। তা ছাড়া লাঠিপেটা, কানমলা বা কান ধরে ওঠবোসের মতো শাস্তি তো ছিলই। সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজ্যে দু’হাজারের বেশি লোককে গ্রেফতার বা আটক করা হয়েছে। কলকাতায় সেই সংখ্যা ৮৮৬।
চার মাস ধরে দফায় দফায় লকডাউন এবং তার পরে আনলক পর্বে নিত্যদিনই দেখা গিয়েছে বিধি ভাঙার দৃশ্য। পুলিশের ‘নরম’ মনোভাব নিয়েও সমালোচনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ফের সার্বিক লকডাউনের প্রথম দিন যেন সেই সব অভিযোগ ভুলিয়ে দেওয়ার পণ করেই পথে নেমেছিল পুলিশ।
কলকাতায় পুলিশের সক্রিয়তা ছিল চোখে পড়ার মতো। রাস্তার মোড়ে মোড়ে গাড়ি তল্লাশি হয়েছে। চালককে প্রশ্ন করে সদুত্তর না পেলে তাঁকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোথাও চোরাগোপ্তা দোকান খোলা থাকলেও পুলিশ জানতে পেরেই তা বন্ধ করে দেয়। পুলিশের দাবি, লকডাউন মানার জন্য লাগাতার প্রচারে বড় অংশের মানুষ সাড়া দিয়েছেন। সল্টলেক সেক্টর ফাইভও ছিল এ দিন ফাঁকা।
লকডাউনে সুনসান রাসবিহারী অ্যাভিনিউ। বৃহস্পতিবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
তবে মাস্ক না-পরা, জটলা করা বা স্রেফ অভ্যাসের বশে রাস্তায় বেরনোর ঘটনা দেখা গিয়েছে কোথাও কোথাও। হাওড়া স্টেশনে মুম্বই থেকে ভুবনেশ্বর হয়ে আসা ট্রেনের যাত্রীদের বাসে উঠতে অকারণ হুড়োহুড়ি নজরে পড়ে।
উত্তর ২৪ পরগনায় দোকান-বাজার থেকে কলকারখানা, কিছুই সে ভাবে খোলেনি। তবে হাওড়ার বাউড়িয়া ও চেঙ্গাইলে তিনটি চটকল খোলা ছিল। উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক অরণ্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় জরুরি পরিষেবা বাদে প্রায় সবই ছিল বন্ধ। সর্বত্রই পুলিশি নজরদারি ছিল চোখে পড়ার মতো। নিয়ম ভেঙে যাঁরা বাইরে বেরোন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয় পুলিশ। অনেক জায়গাতেই কান ধরে ওঠবোস, এমনকি লাঠিপেটাও করা হয়েছে বলে অভিযোগ। গ্রেফতার ও আটক করা হয়েছে অনেককে। পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে বিকেলে ভাঙড়ের সাতুলিয়া বাজারে হাট বসে। পুলিশ যেতেই অবশ্য ফাঁকা হয়ে যায়।
অন্যান্য জেলাতেও কোথাও কোথাও পথে বেরিয়েছেন লোকজন। ছোটখাটো দোকানও খোলার চেষ্টা হয়েছে। কালনায় সকালে সাইকেল, মোটরবাইকে বেরিয়েছিলেন অনেকে। পুলিশ রাস্তা আটকালে নানা জন নানা অজুহাত দেন। এক জন প্রেসক্রিপশন বার করলে দেখা যায়, সেটি আট মাস আগের। আর এক জন দাবি করেন, আদালতে যাচ্ছেন। আদালত বন্ধ জানানোর পরে তাঁর জবাব, ‘‘ভুলে গিয়েছিলাম।’’ প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে বেরোতে দেখা গিয়েছে জলপাইগুড়িতেও। রায়গঞ্জে লুকিয়ে খাবারের দোকান খোলা হয়। মালদহের ইংরেজবাজার ও মানিকচকে পুলিশের তাড়া খেয়ে পুকুরে ঝাঁপ দেন কয়েক জন যুবক। শিলিগুড়িতে সামান্য গোলমাল হয়। পুলিশ গ্রেফতার করতে শুরু করলে রাস্তা ফাঁকা হয়ে যায়। মুর্শিদাবাদে মাস্ক না-পরা ও অকারণে বাইরে বেরনোয় শ’তিনেক লোককে আটক করে পুলিশ। পরে অবশ্য ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁদের।
বাসে উঠতে মরিয়া ভুবনেশ্বর ফেরত যাত্রীরা। বৃহস্পতিবার হাওড়া স্টেশন চত্বরে। ছবি: রণজিৎ নন্দী
হুগলির বৈদ্যবাটি, চুঁচুড়ায় অকারণে বাইরে বেরনোয় কয়েক জনকে কান ধরে ওঠবোস করানো হয়। ব্যারাকপুর, বনগাঁ, বসিরহাটেও ধরপাকড় চালিয়েছে পুলিশ। বাঁকুড়া শহরে কিছু জায়গায় মাস্ক ছাড়া জটলা বা আড্ডা চলেছে বলে অভিযোগ। পুলিশের তাড়া খেয়ে কিছু ক্ষণ লুকোচুরিও খেলেন তাঁরা।
পুরুলিয়া, রঘুনাথপুর, ঝালদা, মানবাজারে পথ ছিল কার্যত জনশূন্য। তবে দু’এক জায়গায় পথে তাসের আড্ডা বসেছিল। পুলিশ সেগুলি সরিয়ে দেয়। বীরভূমেও তিন মহকুমার রাস্তাঘাট ছিল সুনসান। লকডাউনের কথা আগাম না-জানায় ভিন্ রাজ্য থেকে আসা অনেকে এ দিন আসানসোল স্টেশনে নেমে বিপাকে পড়েন। আসানসোল ডিভিশনের জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী জানান, বাড়ি ফিরতে না-পারা যাত্রীদের রাতে থাকার জন্য বিশ্রামাগার খুলে দেওয়া হয়েছে।
নদিয়া পুলিশ জানিয়েছে, লকডাউন সফল করতে সব স্তরের অফিসারদের পথে নামানো হয়েছিল। কড়া ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। টানা বৃষ্টি আবার সুবিধা করে দিয়েছে দুই মেদিনীপুরের পুলিশকে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার বলেন, ‘‘নজরদারির জন্য ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy