প্রতীকী ছবি।
ঠিক যেন শরৎচন্দ্রের মহেশের গল্প। আদরের কালী গাইয়ের কথা বলতে গিয়ে মেটিয়াবুরুজের ময়লা ডিপোয় সর্দার খানের গলা ধরে আসছে।
দুধ ঝরছিল অবিরত। কেনার লোক নেই। নর্দমায় বয়ে যাচ্ছে দুধসাগর। কিছুটা দুধ নিরুপায় হয়ে গরুকেই খাইয়ে দিয়েছিলেন মেটিয়াবুরুজের ময়লা ডিপোর সর্দার খান। খাটালের ৪৫০ গরুমোষের মধ্যে চাঙ্গা কালী গাইটা তাতে পেট ফুলে হঠাৎ মারা গিয়েছে।
লকডাউনের দেশে আবশ্যিক সামগ্রীর তকমাপ্রাপ্ত দুধের জোগান অটুট রয়েছে। কিন্তু মিষ্টির দোকান বন্ধ থাকায় সেই দুধের বারো আনাই নষ্ট হচ্ছে। দুধ না দোয়ালে গরুর শরীর খারাপ হয়। গরুর বিচালি খড়, দানা, ভুসি, খোলের ঘোর অভাব।
অভুক্ত গরুর প্রায় জীবনসঙ্কট। ফলে বাজারের মতো মিষ্টি বিপণিগুলিও অন্তত কিছু সময়ের জন্য খোলার দাবি জোরালো হচ্ছে। ছোট থেকে বড় মিষ্টির দোকানে ২০০-১০০০ লিটার দুধ লাগে রোজ।
একই ছবি হুগলি জেলাতেও। এখানকার গো-পালকেরা কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় দুধ এবং ছানা সরবরাহ করেন। লকডাউনের জেরে কলকাতার বড় বড় মিষ্টির দোকানে সেই সব দুধ এবং ছানা সরবরাহ এখন বন্ধ। পূর্ব রেলের হাওড়া-বর্ধমান কর্ড শাখায় দুপুরে একটি ট্রেন আছে, যেটা ‘ছানা-গাড়ি’ নামেই পরিচিত। লকডাউনে ট্রেন বন্ধ।
মেটিয়াবুরুজের সর্দার খান বলছেন, ‘‘দুধ না-বেচলে কী খাওয়াব গরুকে! খিদেয় অবলা প্রাণীর ডাকে বুকটা ফেটে যায়।’’ ডানকুনির বাপি ঘোষ বা হাবড়ার শঙ্কর বিশ্বাসেরাও এক সুর, ‘‘গরু আর আমরা এক সঙ্গেই মরতে বসেছি।” ভাঙড়ের পাগলাহাটে বিভিন্ন খাটালে ১০ হাজার গরু সঙ্কটে।
পোলবার গো-পালক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘প্রতিদিন ৭০ লিটার করে দু’বেলায় ১৪০ লিটার দুধ হয়। আমি গ্রামের সেন্টারে সেই দুধ সরবরাহ করি। কিন্তু গত দু’-তিন দিন সেই দুধ যাচ্ছে না। এ দিকে দুধ না দুয়ে নিলে গরুর শরীর খারাপ হয়। জ্বর হয়। সংক্রমণে গরু মারা পর্যন্ত যেতে পারে। কিন্তু এত দুধ নিয়ে আমরা করব কী? ফেলে দিতে হচ্ছে।’’ গো-পালক লক্ষ্মী খাঁ বলেন, ‘‘গরুকে খাওয়াতে প্রতিদিন ১৪০০ টাকা খরচ হয়। কিন্তু দুধ বিক্রি না হলে তো বিপদ।’’
বিচালি খড়ের দাম কোথাও ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকা কেজি। গরুর খাবারের প্যাকেট ৮০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা। খড়ের জোগানদার বলছেন, দূরত্ব, পুলিশকে দেওয়া ঘুষ, সব হিসেব করলে দাম বাড়ছে। না-হলে আমাদের কী করে চলবে? উদ্বৃত্ত দুধের দাম তলানিতে ঠেকেছে। পশ্চিমবঙ্গ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির কর্তা রবীন্দ্রকুমার পালের আর্জি, এই সঙ্কটে মিষ্টির দোকান খোলা থাকুক। অন্তত ছানা, পনির তৈরি করতে দিক সরকার।
মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে ইমেলও করা হয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন, রাত দিন গোমাতার মহিমা কীর্তন করলেও
কেন গরুদের জীবন নিয়ে ভাবে না দেশের সরকার?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy