Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
West Bengal Lockdown

মানবিক দেওয়ালে ঝোলানো থলে, নিয়ে যাচ্ছেন দুঃস্থেরা

এমন মানবিক মুখের কথা তাঁদের কী ভাবে মনে এল?

প্রাক্তনীদের তৈরি সেই ‘মানবিক দেওয়াল’। দিনহাটায়। নিজস্ব চিত্র

প্রাক্তনীদের তৈরি সেই ‘মানবিক দেওয়াল’। দিনহাটায়। নিজস্ব চিত্র

সুমন মণ্ডল
দিনহাটা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২০ ০৪:০৬
Share: Save:

শুরুটা হয়েছিল জামাকাপড় দিয়ে। তখনও করোনা সংক্রমণ শুরু হয়নি দেশ জুড়ে। এই ভাইরাসবাহিত রোগের সঙ্গে যখন লকডাউন শুরু হয়ে গেল, তখন ‘কুড়িতে কুড়ি’র ঝুলিতে বদলে গেল সামগ্রী। কাপড়ের বদলে সেখানে তখন খাদ্য সামগ্রী। কোনও দিন চাল-ডাল, কোনও দিন আলু, কোনও দিন বা সয়াবিন, তেল। সেই ফেব্রুয়ারি থেকে স্কুলের এমনই একটি মানবিক দেওয়াল তৈরি করেছেন প্রাক্তনীরা। সঙ্গে রয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। রোজ কুড়িটি এমন প্যাকেট ঝোলানো থাকে। দুঃস্থ মানুষেরা এসে তা নিয়ে যান। স্কুল থেকেই জানা গেল, কোনও নজরদারি থাকে না। তবু এক জন একটাই প্যাকেট নেন। এই মানবিক দেওয়াল তৈরি হয়েছে কোচবিহারের প্রান্তিক এলাকা দিনহাটা-১ ব্লকের নিগমনগর নিগমানন্দ সারস্বত হাইস্কুলে।

এমন মানবিক মুখের কথা তাঁদের কী ভাবে মনে এল? স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনির্বাণ নাগ বলেন, ‘‘আমরা নিজেরাই ভেবেছিলাম। প্রথমে বস্ত্র, তার পরে খাদ্য।’’ সেই ভাবে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হল জামাকাপড়ের ব্যাঙ্ক। ব্যবহার না করা জামাকাপড় ঝুলিয়ে দেওয়া হত সেই থলিতে। যার প্রয়োজন, সে নিয়ে যেত। স্কুল কর্তৃপক্ষই জানাচ্ছেন, লকডাউনের সময়ে যখন মানুষের দৈনন্দিন ভাঁড়ারে টান পড়ল, তখন তাঁরা খাবার সামগ্রী রাখতে শুরু করলেন।

স্কুল কর্তৃপক্ষের পৃষ্ঠপোষকতায় হলেও এই কাজের পিছনে মূল লোকজন হল স্কুলের প্রাক্তনীরা। প্রাক্তনী সঙ্ঘের সঞ্জয় বিষ্ণু, সুজন চক্রবর্তী, সন্তোষ বর্মণ প্রমুখ জানান, এই সময়ে যাঁদের হাতে কাজ নেই, তাঁদের নিত্য খাদ্য জোগাতেই ‘কুড়িতে কুড়ি’র উদ্যোগ। কুড়িতে কুড়ি কেন? তাঁরা বলেন, ‘‘কুড়ি জনের জন্য সামগ্রী রাখা হয় রোজ। সঙ্গে সালটাকেও জুড়ে দিয়েছি। তাই কুড়িতে কুড়ি।’’

আরও পড়ুন: আক্রান্তের চেয়ে সুস্থের সংখ্যা বেশি, রাজ্যে এক দিনে মৃত ৪ চিকিৎসক

আরও পড়ুন: স্কুলের ফি ১৫ অগস্টের মধ্যেই, জানাল কলকাতা হাইকোর্ট

প্রাক্তনী ও স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানা গেল, চাল-ডাল, আলু, তেল, সয়াবিন, এমনকি চা পাতাও থাকছে থলিতে। তবে এক দিনে সবটা নয়। এক প্রাক্তনী জানান, এমন পরিমাণ থাকছে যাতে এক জনের চার-পাঁচ দিন চলে যায়। যাঁদের ক্ষমতা আছে, তাঁরা দান করছেন। এই দলে যেমন স্কুলের অনুদান আছে, তেমনই আছেন প্রাক্তনীরা। আছে দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ারাও।

স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, যাঁরা এই মানবিক দেওয়াল থেকে খাদ্যসামগ্রীর থলে নেবেন, তাঁদের জন্য দেওয়ালে লেখা রয়েছে— এক এক জনের জন্য একটা করে প্যাকেট। এই ব্যাপারে প্রথম দিকে কিছু নজরদারি থাকলেও এখন কেউ খুব একটা তাকিয়েও দেখেন না। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জানান, তা সত্ত্বেও কিন্তু এক জন একটা করেই প্যাকেট নিয়ে যান। দু’টো নিতে দেখা যায়নি কাউকেই।

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown Coronavirus Lockdown Dinhata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy