দিল্লির যন্তরমন্তরে শুরু হল চাকরিহারাদের অবস্থান বিক্ষোভ। বুধবার দুপুর ২টো নাগাদ অবস্থানে বসলেন প্রায় ৭০ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি গিয়েছে তাঁদের। বুধবার দুপুরে দেখা গেল, যন্তরমন্তরে বসে থাকা সকলেরই হাতে রয়েছে প্ল্যাকার্ড, কারও হাতে ইংরেজি কিংবা হিন্দিতে লেখা পোস্টার। তার সবেতেই লেখা রয়েছে নিয়োগ দুর্নীতি ও তাঁদের বঞ্চনার কথা। চাকরিহারারা জানিয়েছেন, তাঁদের এই কর্মসূচি চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। এই প্রতিবাদের মাধ্যমে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং সাংসদদের দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে পাশে থাকার আহ্বানও জানিয়েছেন তাঁরা।
যন্তরমন্তরের অবস্থান বিক্ষোভে ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা ঐক্য মঞ্চের’ ৭০ জন চাকরিহারা রয়েছেন। তাঁদের তরফে আহ্বায়ক চিন্ময় মণ্ডল বলেন, ‘‘পরিস্থিতি এমন যে, রাস্তায় নেমেই আমাদের আন্দোলন করতে হবে। কারণ, কোথাও গিয়ে দেখা যাচ্ছে, যারা দুর্নীতি করে চাকরি পেল আর যারা দুর্নীতি না করে চাকরি পেল, তাদেরকে এক করে দেওয়া হচ্ছে।’’ চাকরিহারাদের একাংশ এখনও আশাবাদী যে রিভিউ সাবমিশনের মাধ্যমে তাঁরা তাঁদের চাকরি পুনরায় ফিরে পাবেন। তবে শুধু মাত্র আইনি পথেই যে জয় আসবে, এমনটাও মনে করছেন না তাঁরা। তাঁদের কথায়, আইনি পথে এগিয়ে থেকেও শেষমেশ প্রধান বিচারপতির নির্দেশে চাকরি বাতিল হয়েছে ২৫,৭৩৫ জনের। তাই আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি সমানতালে আন্দোলনও চলবে। চাকরিহারারা বলেন, ‘‘আমরা যোগ্য, তা সত্ত্বেও আমরা বেকার হয়েছি। সেটা আমরা শুধু বাংলা নয়, গোটা দেশের মানুষকে বোঝাতে চাই। তাই কলকাতা থেকে রাজধানীর বুকে আমাদের এই আন্দোলন।’’
আরও পড়ুন:
কলকাতার ধর্মতলা থেকে বাসে চেপে সোমবার দুপুরেই দিল্লির উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন প্রায় ৬০ জন চাকরিহারা। মঙ্গলবার সকালে তাঁদের বাস প্রয়াগরাজে পৌঁছোয়। ৩০ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে বাস যাত্রার পর শেষমেশ বুধবার ভোর ৪টে নাগাদ দিল্লি পৌঁছোন ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা ঐক্য মঞ্চের’ সদস্য শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা। এর মাঝে পথে যেখানেই বাস দাঁড়িয়েছে, সেখানেই পথচলতি মানুষকে দাঁড় করিয়ে নিজেদের বঞ্চনা আর লড়াইয়ের গল্প শুনিয়েছেন তাঁরা। বার্তা দিয়েছেন, পাশে থাকুন। যাত্রাপথে বিভিন্ন জায়গায় বিলি করা হয়েছে হিন্দিতে লেখা লিফ্লেট।
বুধবার সকালে মাথাপিছু ৩৫০ টাকা দিয়ে একটি আশ্রমে কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নেন চাকরিহারারা। তার পর যন্তরমন্তরে গিয়ে অবস্থানে বসেন নতুন উদ্যমে। বুধবার গভীর রাতে ফের দিল্লি থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেবে চাকরিহারাদের বাস। তবে দু’-তিন জন থেকে যাবেন দিল্লিতেই। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের করা ক্লারিফিকেশন পিটিশনের শুনানি রয়েছে। সেখানেই পরিষ্কার হবে, চলতি মাস থেকে বাতিল হওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা বেতন পাবেন কি না। ওই শুনানির জন্য দিল্লিতেই থেকে যাবেন চাকরিহারাদের কয়েক জন। বাকিরা ফিরে আসবেন কলকাতায়। প্রতিবাদী চাকরিহারাদের একটা বড় অংশ ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে এখনও অবস্থান বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। ফিরে এসে সেখানে যোগ দেবেন তাঁদের সতীর্থেরা।