Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Ayurveda Medicine

পরীক্ষাগার, তবু আয়ুর্বেদ ওষুধে স্বনির্ভর নয় রাজ্য

রাজ্যের একমাত্র সরকারি আয়ুর্বেদিক ফার্মেসি ও ল্যাবরেটরি রয়েছে নদিয়া জেলার কল্যাণীতে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২০ ০৬:২৬
Share: Save:

নিজস্ব আয়ুর্বেদিক ফার্মেসি ও ওষুধ পরীক্ষাগার থাকা সত্ত্বেও ভিন রাজ্য থেকে আয়ুর্বেদিক ওষুধ কিনে রাজ্যের চাহিদা মেটাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য দফতর।

রাজ্যের একমাত্র সরকারি আয়ুর্বেদিক ফার্মেসি ও ল্যাবরেটরি রয়েছে নদিয়া জেলার কল্যাণীতে। একই ক্যাম্পাসে রয়েছে ওষুধ পরীক্ষাগারও। সেখানে তৈরি ওষুধ রাজ্যের ২৯৪টি আয়ুষ ডিসপেন্সরি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের ২০০ আয়ুর্বেদ ডিসপেন্সরিতে সরবরাহ হওয়ার কথা। কিন্তু ২০২০-২১ অর্থবর্ষের জন্য দরপত্র ডেকে ভিন রাজ্যের একাধিক সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে বেশির ভাগ আয়ুর্বেদিক ওষুধ কিনেছে রাজ্য। এগুলির মধ্যে রয়েছে কেরল সরকারের নিজস্ব ফার্মেসি, কর্নাটক সরকার ও কেন্দ্রের যুগ্ম অংশীদারিতে চলা ফার্মেসি, গোয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের ফার্মেসি, উত্তরাখণ্ড স্টেট কো অপারেটিভ ফেডারেশন লিমিটেড এবং বেশ কিছু বেসরকারি ওষুধ সংস্থা।

প্রশ্ন উঠছে, একাধিক রাজ্য যদি নিজস্ব প্রয়োজন মিটিয়ে অন্য রাজ্যে ওষুধ বিক্রি করতে পারে, পশ্চিমবঙ্গ কেন পারছে না? আয়ুষের টাকার ৬০ শতাংশ দেয় কেন্দ্র। বাকি ৪০ শতাংশ রাজ্যের ভাগ। কেন্দ্রের আয়ুষ মন্ত্রকের যুগ্ম উপদেষ্টা ডিসি কাটোচ ফোনে বলেন, ‘‘রাজ্যের ওষুধের চাহিদা সেই রাজ্যের সরকারি ফার্মেসি থেকে মেটানোই আদর্শ অবস্থা। কিন্তু তা না হলে কী করা যাবে। স্বাস্থ্য হল রাজ্যের বিষয়।’’ আয়ুষ মন্ত্রকের যুগ্ম উপদেষ্টা এ রঘু-র কথাতেও, ‘‘২০১৯-২০ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যের পাওনা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বার সেই টাকা রাজ্য আয়ুষের ওষুধ কিনতে ব্যয় করবে, না কি ফার্মেসির মানোন্নয়ন করবে, সেটা তাদের ব্যাপার।’’

রাজ্যের আয়ুষ দফতরের এক প্রবীণ অফিসারের কথায়, ‘‘প্রথমে আয়ুষে রাজ্যের তেমন নজর ছিল না। এখন কেন্দ্র আয়ুষে জোর দিচ্ছে। দেশবিদেশে এর চাহিদা বাড়ছে। তা দেখে রাজ্য কিছুটা নড়েচড়ে বসলেও অগ্রাধিকারে সম্ভবত গণ্ডগোল করে ফেলছে। তারা মেদিনীপুরে ৫০ শয্যার সুসংহত আয়ুষ হাসপাতাল তৈরি করছে, আয়ুষ দিবস পালন করছে। অথচ আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হতে
ব্যর্থ হচ্ছে।’’

রাজ্য বাজেটে কল্যাণীর ফার্মেসির জন্য ২০১৮-১৯ সালে বরাদ্দ ছিল প্রায় ৩৪ লক্ষ টাকা। ১৯-২০ তে তা ৩৮ লক্ষ করা হয়। ২০২০-২১ এ তা মাত্র ২ লক্ষ টাকা বাড়িয়ে ৪০ লক্ষ টাকা হয়েছে। ওষুধের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির জন্য ২০১৯-২০ তে বরাদ্দ ২৩ লক্ষ টাকা থেকে ২০২০-২১ তে বরাদ্দ মাত্র ২ লক্ষ টাকা বেড়েছে। দফতরের অনেকেই মনে করছেন, এমন নামমাত্র অর্থ বাড়ালে ফার্মেসির পরিকাঠামো সংস্কার সম্ভব নয়। ২০১৭-২০২০ সাল পর্যন্ত কল্যাণীর ড্রাগ ল্যাবরেটরির জন্য কেন্দ্র ৫০ লক্ষ টাকা অনুমোদন করেছে।

কল্যাণীর ফার্মেসির উৎপাদন ইউনিটে কর্মীসংখ্যা কমতে-কমতে ১৬-১৭তে এসে ঠেকেছে। যন্ত্রপাতি এতটাই পুরনো যে, ফার্মেসির এক প্রবীণ অফিসারের বক্তব্য, ‘‘উৎপাদন সামান্য বাড়ালেই যন্ত্র খারাপ হয়ে যাচ্ছে। অনেক বার
স্বাস্থ্যভবনে জানানো হয়েছে। ড্রাগ ল্যাবরেটরিতে মাত্র দু’জন অ্যানালিস্ট কাজ সামলাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে গোটা রাজ্যের চাহিদা মেটানো অসম্ভব।’’

রাজ্যর আয়ুষ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের যুক্তি, ‘‘রাজ্যে আয়ুর্বেদিক ওষুধের চাহিদা যতটা বাড়ছে, তার পুরোটা মেটাতে পারছে না কল্যাণীর সরকারি ফার্মেসি। তাই আমাদের দরপত্র ডেকে বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। কল্যাণীর ফার্মেসি ও ল্যাবরেটরির পরিকাঠামো উন্নত করার সব চেষ্টা চলছে। তার পরও এই ফার্মেসি রাজ্যে ওষুধের সম্পূর্ণ চাহিদা মেটাতে পারবে কি না সন্দেহ রয়েছে। তখনও বিকল্প খুঁজতে হতে পারে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Ayurveda Medicine Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy