দান-ধ্যানের রাজনীতি বহাল রয়েছে। পরিকল্পনা বর্হিভূত খাতে খরচও তেমন নিয়ন্ত্রণে নেই। বাজার থেকে ধারের পরিমাণও ক্রমেই বেড়ে চলেছে। তার পরেও ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে রাজ্যের রাজস্ব ঘাটতি এবং রাজকোষ ঘাটতি উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। সদ্য শেষ হওয়া আর্থিক বছরের আয়-ব্যয়ের যে প্রাথমিক রিপোর্ট সিএজি সম্প্রতি প্রকাশ করেছে, তাতেই এই তথ্য সামনে এসেছে।
সিএজির তথ্য অনুযায়ী, খরচে তেমন নিয়ন্ত্রণ না-থাকার পরেও রাজস্ব ঘাটতি কমার অন্যতম কারণ জিএসটি খাতে রাজ্যের বিপুল আয়। ২০১৮-১৯ বাজেট প্রস্তাবে জিএসটি বাবদ ১৩ হাজার কোটি টাকা আয় ধরেছিল রাজ্য। চূড়ান্ত হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই খাতে আয় হয়েছে ২৭ হাজার কোটির বেশি।
এখন রাজ্য থেকে আদায় হওয়া কেন্দ্রীয় করের ৪২% টাকা ফেরত আসে। সদ্য শেষ হওয়া আর্থিক বছরে আয়কর, কর্পোরেট কর ইত্যাদি বাবদ ৫৬ হাজার কোটি টাকা দিল্লি থেকে এসেছে। সিএজির রিপোর্ট বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে কর বাবদ রাজ্যের আয় হয়েছে ১ লক্ষ ১৬ হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে জিএসটি এবং কেন্দ্রীয় করের প্রাপ্য থেকেই এসেছে ৮৩ হাজার কোটি। কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন প্রকল্পে অনুদান বাবদ দিয়েছে ২৫ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা।
এ বছর জিএসটির দু’বছর পূর্ণ হল। অর্থ কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ১৪% বৃদ্ধি ধরে ক্ষতিপূরণ বাবদ আরও তিন বছর জিএসটি খাতে মোটা টাকা মিলবে। নোট বাতিলের পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে করদাতার সংখ্যা অনেকটা বেড়েছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের। রাজ্যের আশা, সেই কারণে আগামী দিনেও কেন্দ্রীয় করের প্রাপ্য টাকার পরিমাণও বাড়তে থাকবে। ফলে রাজস্ব ঘাটতি দু’তিন বছর কমতে থাকবে বলেই আশা করছে অর্থ দফতর।
অর্থকর্তারা জানাচ্ছেন, গত তিন বছরে রাজ্য বাজেটে রাজস্ব ঘাটতি এবং রাজকোষ ঘাটতির যে হিসেব কষা হয়েছিল, আর্থিক বছর শেষে তা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ২০১৮-১৯-এর বাজেটে রাজস্ব ঘাটতি ১৭ হাজার ৭৩৯ কোটি ধরা হলেও বছর শেষে তা দাঁড়িয়েছে ৬৭৩৪ কোটি টাকায়। একই ভাবে বাজেটে ৪৫ হাজার কোটি রাজকোষ ঘাটতি ধরা হলেও বছর শেষে তা দাঁড়িয়েছে সাড়ে ২৮ হাজার কোটি।
অর্থকর্তাদের একাংশ অবশ্য এ জন্য কেন্দ্রকে কোনও কৃতিত্ব দিতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, পাঁচ বছরের জন্য জিএসটি ক্ষতিপূরণের টাকা অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে লড়াই করে আদায় করে নিয়েছিলেন। আর কেন্দ্রীয় করের অংশ ফেরত পাওয়া রাজ্যের সাংবিধানিক অধিকার। ফলে কেন্দ্র কোনও দয়া করেনি। অর্থ কমিশনই তা ঠিক করে দিয়েছে।
রাজ্যের কর্তাদের বক্তব্য, আর্থিক শৃঙ্খলা ফেরাতে রাজ্য ধারাবাহিক পদক্ষেপ করেছে। তার ফলে বাজেটে যে পরিমাণ রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছিল, বছর শেষে তার চেয়ে প্রায় ১২ হাজার কোটি কম খরচ হয়েছে। খরচের বড় অংশ বাজার থেকে নেওয়া সুদ গুনতেই চলে গিয়েছে। সিএজির হিসেব বলছে, ২০১৮-১৯ সালে কোপ পড়েছে মূলধনী ব্যয়ে। নবান্ন ২৯ হাজার কোটির মূলধনী ব্যয়ের প্রস্তাব রাখলেও শেষ পর্যন্ত সাড়ে ২২ হাজার কোটি খরচ হয়েছে। তবে এক শীর্ষ অর্থকর্তার বক্তব্য, ‘‘বামফ্রন্টের শেষ বছরে মূলধনী ব্যয় হয়েছিল দু’হাজার কোটি। তা ২২ হাজার কোটিতে পৌঁছন মোটেই সহজ ছিল না। এটি আর্থিক শৃঙ্খলার বড় উদাহরণ।’’
তবে জিএসটি ক্ষতিপূরণের জমানা শেষ হলে রাজ্যের আয় কোন খাতে বাড়ানো হবে তা নিয়ে চিন্তাও রয়েছে নবান্নের কর্তাদের। আগামী তিন বছর পর যদি এক ধাক্কায় জিএসটি বাবদ আয়ে ঠোক্কর খেতে হয়, তখন ফের রাজস্ব ঘাটতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটাই চিন্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy