ছাত্র-যুবদের আন্দোলনে তরুণদের তেজ দেখা গেলেও দলীয় কাঠামোর মধ্যে কেন তরুণেরা আসছেন না, বাংলার সিপিএমের উদ্দেশে সেই প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন প্রকাশ কারাট। ডানকুনিতে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে সিপিএমের ২৭তম রাজ্য সম্মেলন। চলবে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত। উদ্বোধনী বক্তৃতায় দলের পলিটব্যুরোর ‘সমন্বয়ক’ কারাট যে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলার নেতৃত্বের দিকে, তাতে ফের এক বার রাজ্য সিপিএমে প্রজন্মের ফাঁক ধরা পড়েছে।
সিপিএম সূত্রের খবর, কারাট বলেছেন, ছাত্র-যুবদের আন্দোলনে তরুণদের উপস্থিতি থাকলেও দলীয় সদস্যপদে তারুণ্যের সে ভাবে কোনও বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে না। যা ‘উদ্বেগজনক’। সিপিএম সূত্রে এ-ও জানা গিয়েছে যে, প্রকাশ এই প্রসঙ্গে কেরলের উদাহরণ দিয়েছেন। উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ঈশ্বরের আপন দেশে’ সিপিএমের ১০০ জন পার্টি সদস্য থাকলে তাঁদের মধ্যে ২২ জনের বয়স ৩১ বছরের কম।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার পর গত তিন বছরে মহম্মদ সেলিম তরুণদের সামনে আনার বিষয়ে কিছুটা ‘আগ্রাসী’ ভূমিকাই নিয়েছেন। কিন্তু রাজ্য স্তরে তা হলেও গলদ যে বিসমিল্লায়, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন কারাট। সিপিএমের কাঠামো অনুযায়ী, সদস্যপদ দেওয়া হয় শাখা স্তর থেকে। অর্থাৎ, এলাকার সংগঠনের দুর্বলতার প্রতিই কারাট ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও কেরলের উদাহরণ টেনে আনাকে অমূলক বলে মনে করছেন সিপিএমের অনেক নেতা। দক্ষিণবঙ্গের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘‘কেরলের পার্টি কখনও সরকারে থেকেছে। কখনও বিরোধী আসনে থেকেছে। তাদের অগ্রগতি হয়েছে অন্য ভাবে। আর এখানে প্রায় সাড়ে তিন দশক সরকারে ছিলাম আমরা। দুটো পরিস্থিতি এক নয়।’’
আরও পড়ুন:
অনেক দিন ধরেই রাজ্য সিপিএমে এই আলোচনা রয়েছে যে, দল এখন শহুরেদের পার্টি হয়ে গিয়েছে। গ্রামের যে অংশ আগে সঙ্গে ছিল, তারা আর নেই। ‘তোবড়ানো গাল, ভেঙে যাওয়া মুখ’-এর পরিবর্তে কেবল চকচকে মুখের আধিক্য। উদ্বোধনী বক্তৃতায় সে ব্যাপারেও আলোকপাত করেছেন কারাট। সিপিএম সূত্রের খবর, কারাট তাঁর বক্তৃতায় পার্টির অভিমুখকে গ্রামের দিকে করার কথা বলেছেন। যা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।
উল্লেখ্য, রাজ্য সম্পাদক সেলিম যে প্রতিবেদন পেশ করেছেন, তাতেও শ্রমিক, কৃষক, ক্ষেতমজুর অংশের সঙ্গে দলের দূরত্ব এবং সামাজিক গোষ্ঠীর সঙ্গে বিচ্ছিন্নতার উল্লেখ রয়েছে। সিপিএম সরকার থেকে চলে যাওয়ার পরে এই নিয়ে পঞ্চম সম্মেলন হচ্ছে। প্রতি বার ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বলেও ব্যর্থ হয়েছে তারা। ক্ষয়ে ক্ষয়ে আপাতত নির্বাচনী রাজনীতিতে প্রান্তিক শক্তি সেই সিপিএম। আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট। এই সম্মেলন থেকেই সেই সংক্রান্ত রূপরেখা চূড়ান্ত হবে। তবে প্রশ্ন একটাই, সিপিএম কি আদৌ ভোটের বাক্সে দৃশ্যমান হতে পারবে?