রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। ফাইল ছবি।
দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাৎ পর্ব শেষ হল রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের। বাইরে বেরিয়ে তিনি বললেন, ‘‘ভোরের ঠিক আগের মুহূর্তটাই সবচেয়ে অন্ধকার সময়।’’ তবে সেই অন্ধকারের উৎস থেকেই আলো উৎসারিত হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন বাংলার রাজ্যপাল। তিনি বলেছেন, ‘‘এই অন্ধকার টানেলের শেষ প্রান্তে আলো থাকবে।’’
রবিবারই কলকাতা থেকে দিল্লি রওনা হয়েছিলেন রাজ্যপাল বোস। রাজভবন সূত্রে রবিবারই জানা গিয়েছিল, দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শাহের সঙ্গে দেখা করতে পারেন রাজ্যপাল। এ-ও জানা গিয়েছিল, বাংলার পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে রিপোর্ট দিতে পারেন তিনি। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ নয়াদিল্লিতে সংসদ ভবনের নর্থ ব্লকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দফতরে ঢোকেন রাজ্যপাল বোস। বেরিয়ে আসেন ৭টা নাগাদ। অর্থাৎ শাহের সঙ্গে রাজ্যপালের বৈঠক হয় প্রায় আধ ঘণ্টা। তবে এই অল্প সময়ের সাক্ষাতে বাংলার পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে কী কথা হল শাহ-বোস সাক্ষাতে, তার বিশদ জানাননি রাজ্যপাল। শাহের সঙ্গে তাঁর কী কথা হল জানতে চাওয়া হলে, রাজ্যপাল কিছুটা সাঙ্কেতিক বার্তা দেন। তিনি বলেন, ‘‘ভোরের ঠিক আগের মুহূর্তটাই সবচেয়ে অন্ধকার সময়। তবে টানেলের শেষপ্রান্তে আলো থাকবে। আজ আমি এই বার্তাটুকুই পেয়েছি যে, কনকনে শীত যদি এসেই থাকে, তবে বুঝতে হবে বসন্তও বেশি দূরে নেই। আগামী দিন ভাল হবে।’’
তবে অন্ধকার সময় বলতে রাজ্যপাল বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথাই বোঝাতে চেয়েছেন কি না, তা স্পষ্ট করে বলেননি। তবে যেহেতু গত কয়েকদিন ধরেই তিনি বাংলার পঞ্চায়েত ভোট পরিস্থিতি নিয়ে ক্রমাগত অসন্তোষ প্রকাশ করে এসেছেন, তাই রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন, রাজ্যপাল অন্ধকার বলতে বাংলার ভোট পরিস্থিতির কথাই বোঝাতে চেয়েছেন। তবে সেক্ষেত্রে ‘বসন্ত আসবে’ এই বার্তা দিয়ে রাজ্যপাল কী বোঝাতে চেয়েছেন? বাংলার কোনও রাজনৈতিক পরিবর্তনের কথা বলতে চেয়েছেন, তা নিয়েই শুরু হয়েছে জল্পনা।
#WATCH | "The darkest hour is just before dawn. There will be light at the end of the tunnel. The only message I could get today is -if winter comes can spring be far behind? Good will happen in the days to come," says West Bengal Governor CV Ananda Bose after his meeting with… pic.twitter.com/m4GEaEQnKS
— ANI (@ANI) July 10, 2023
পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের বিভিন্ন পর্যায়ে হিংসার জন্য ইতিমধ্য়েই বার বার রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে প্রকাশ্যে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন রাজ্যপাল। তাঁর নিয়োগ করা নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহের উদাসীনতার সমালোচনা করে রাজ্যপাল বোস এ কথাও বলেছিলেন যে রাজীব বাংলার মানুষকে হতাশ করেছেন। ম্যাকবেথের সংলাপ টেনে এনে রাজ্যপাল বলেছিলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনারের হাতে এত রক্ত লেগে রয়েছে যে পবিত্র গঙ্গা জলে ধুলেও সেই রক্তের দাগ মুছবে না।’’
পঞ্চায়েত ভোট প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই বাংলায় যে সন্ত্রাসের ছবি দেখা গিয়েছিল, তা নিয়ে বার বার অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে রাজ্যপালকে। এমনকি, তিনি নিজে বার বার সমস্যাদীর্ণ এলাকাগুলিতে ছুটে গিয়েছেন জেলায় জেলায়। রাজ ভবনে খুলেছেন পিসরুম। শনিবার পঞ্চায়েত ভোটের দিনও সকাল থেকে পথে নেমেছিলেন রাজ্যপাল। গাড়িতে একের পর এক বুথ পরিদর্শন করেছেন তিনি। সরেজমিনে দেখেছেন ভোট পরিস্থিতি। শুনেছেন ভোটারদের অভিযোগ, এমনকি, ভোটকর্মী এবং রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের কথাও। ভোট শেষের পর রাজ্যপাল বলেছিলেন, ‘‘ভোট বুলেটে নয়, ব্যালটে হওয়া উচিত।’’ এ ব্যাপারে তিনি কি কোনও পদক্ষেপ করতে চান কি না জানতে চাওয়া হলেও রাজ্যপাল বলেছিলেন, ‘‘একজন রাজ্যপালের যা করণীয়, তা-ই করব।’’
যদিও রাজ্যপালের এই বক্তব্যের পাল্টা বাংলার শাসক দল তৃণমূল বলেছিল, রাজ্যপাল আদতে এই সব করছেন কেন্দ্রের আদেশে। এবং রাজনৈতিক ফয়দা তোলার জন্য। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘দিল্লি থেকে যে ভাবে আদেশ আসছে, রাজ্যপাল তাঁর সীমিত ক্ষমতা ও এক্তিয়ার অনুযায়ী, তা পালন করার চেষ্টা করছেন।’’ এই তরজার মধ্যেই রবিবার দিল্লি যান রাজ্যপাল। সোমবার সেখান থেকেই ‘ঋতু’ পরিবর্তনের বার্তা দিলেন বাংলার রাজ্যপাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy