কলকাতা হাইকোর্ট। —ফাইল চিত্র।
সরকারি ক্ষেত্রে কর্মরত চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষা নিয়ে টানাপড়েনে আপাতত জিতল রাজ্য সরকার। চিকিৎসকদের ‘বন্ড’ নিয়ে রাজ্য সরকারের নিয়মই বহাল রাখল কলকাতা হাইকোর্ট। শুক্রবার আপিল মামলার রায়ে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, বন্ড নিয়ে রাজ্য ও চিকিৎসকদের চুক্তিতে হস্তক্ষেপ করা উচিত হয়নি আদালতের।
এমডি-এমএস ডিগ্রিধারী এবং পিজি ডিপ্লোমাধারী চিকিৎসকদের এ রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে এক বছর পরিষেবা দিতে হবে বলে জুলাইয়ে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন, কোনও চিকিৎসক ওই পরিষেবা না-দিলে বন্ড অনুযায়ী পাঁচ কিস্তিতে রাজ্যকে ১০ লক্ষ টাকা দিতে বাধ্য থাকবেন। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করে রাজ্য সরকার।
সরকারি কৌঁসুলি অমিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের নিয়ম হল, এমডি-এমএস ডিগ্রিধারী এবং পিজি ডিপ্লোমাধারীদের যথাক্রমে তিন এবং দু’বছর চিকিৎসা করতে হবে সরকারি হাসপাতালে। নইলে বন্ড অনুযায়ী এমডি-এমএস ডিগ্রিধারীদের ৩০ লক্ষ টাকা, পিজি ডিপ্লোমাধারীদের ২০ লক্ষ টাকা দিতে হবে।
এক স্বাস্থ্যকর্তা জানান, ২০১৩-য় বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়, যে-সব চিকিৎসক স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা বা ডিগ্রি পেয়েছেন, তাঁদের এক বছর রাজ্যের কোনও হাসপাতালে কাজ করতে হবে। অন্যথায় বন্ড অনুযায়ী পাঁচ কিস্তিতে দিতে হবে ১০ লক্ষ টাকা। পরের বছর ফের বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়, পিজি ডিপ্লোমাধারীদের দু’বছর কাজ করতে হবে। নইলে দিতে হবে বন্ডের ২০ লক্ষ টাকা। এমডি-এমএস ডিগ্রিধারীদের তিন বছর কাজ করতে হবে। না-করলে বন্ড অনুযায়ী দিতে হবে ৩০ লক্ষ টাকা।
সেই বিজ্ঞপ্তির বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে যান ১৩৯ জন চিকিৎসক। সর্বভারতীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তাঁরা রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে এমডি-এমএস বা পিজি ডিপ্লোমা পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁদের কৌঁসুলি প্রতীক ধর জানান, আইন পাশ না-করে নিছক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চিকিৎসকদের কাজ করতে বাধ্য করানো যায় না। কারণ, মামলাকারীদের অনেকেই বন্ডের টাকা মিটিয়ে আরও উচ্চতর শিক্ষা চান। সুপ্রিম কোর্টও জানিয়েছে, সর্বভারতীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চিকিৎসক-পড়ুয়াদের কাছ থেকে বন্ড নেওয়া উচিত নয়। সেই মামলার শুনানিতে বিচারপতি মুখোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকার যে-বন্ড দিতে বলছে, তা আসলে ‘বন্ডেজ’ (বন্দিদশা)। বন্ড অসাংবিধানিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy