Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Mamata Banerjee

সব পুজো কমিটিকে ৫০ হাজার করে দেওয়ার ঘোষণা মমতার

পুজো কমিটির প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা শুনে বৃহস্পতিবার তুমুল হর্ষধ্বনিতে ফেটে পড়ে নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়াম।

নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে পুরোহিত ভাতা তুলে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে পুরোহিত ভাতা তুলে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

নিজস্ব সংবাদদাতা 
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৫:০৬
Share: Save:

দুর্গাপুজো হচ্ছে। কলকাতায়, জেলাতেও।

তবে ভিড়ের কারণে সংক্রমণ যাতে না বাড়ে, তার জন্য এ বার বেশ কিছু নিয়ম, নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতে হবে বলে বৃহস্পতিবার জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি করোনার জন্য উদ্ভূত অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যাতে সুষ্ঠু ভাবে পুজো করা যায়, সে জন্য রাজ্যের প্রায় ৩৭ হাজার পুজো কমিটির প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন তিনি।

পুজো কমিটির প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা শুনে বৃহস্পতিবার তুমুল হর্ষধ্বনিতে ফেটে পড়ে নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়াম। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, করোনা-পরিস্থিতিতে অনেকেই স্পনসর পাচ্ছেন না। বিজ্ঞাপনও ঠিক করে পাবেন না। তাই, পুজো করার জন্য এই টাকা দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, পুজোর জন্য অন্যান্য বছর দমকল, পুর প্রশাসন বা পঞ্চায়েত যে ফি নেয়, এ বার সেটাও নেওয়া হবে না। পুজোয় বিদ্যুতের জন্যও বড় অঙ্কের খরচ হয়। সিইএসসি এবং রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম ৫০ শতাংশ ফি মকুব করে দেবে।

যদিও বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের প্রশ্ন, ‘‘কারা ওই টাকা পাবেন? কী ভাবে তারা নির্বাচিত হবেন?’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘ওই টাকায় আসলে ক্যাডারদের উন্নয়ন তহবিল গড়া হবে। যারা তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ তারাই ওই টাকা পাবে। ভোট আসতেই খয়রাতি রাজনীতি শুরু হয়েছে।’’

পুজোয় সুবিধা

• ৫০ হাজার টাকার সরকারি অনুদান

• বিদ্যুৎ বিলে ৫০ শতাংশ ছাড়

• দমকল-পুরসভা-পঞ্চায়েত ফি মকুব

• অনলাইনে পুজোর অনুমতি

করোনা-আবহে এ বার পুজো ঘিরে সংশয় তৈরি হয়েছিল। রাজ্য সরকার পুজোর অনুমতি দেবে না বলে ভুয়ো প্রচারও শুরু হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। যা নিয়ে আগেই পরোক্ষে বিজেপি-কে দুষেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিনও বিজেপির নাম না-করে তিনি বলেন, ‘‘যদি বলি পুজো হবে না, তখন চিৎকার করবে। আর পুজো করলে, সংক্রমণ বাড়লে ওরা তখন শকুনির মতো নাচবে। বলবে, ওই দেখো। পুজো করেছে বলে সংক্রমণ বেড়েছে। ইদ তো বন্ধ হয়নি। পুজোও বন্ধ হবে না।’’

যা শুনে বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহের মন্তব্য, ‘‘কোনও দিন এই সরকারের পুজো নিয়ে ইতিবাচক দিক দেখিনি। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে মনে হল বিজেপির ভয়ে তিনি কাঁটা হয়ে রয়েছেন। তাই প্রতিশ্রুতির বন্যা।’’

পুজোকে ছাড়পত্র দিলেও বেশ কিছু বিধিনিষেধ যে মেনে চলতে হবে, তা-ও এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়েছেন, রেড রোডের পুজো কার্নিভাল এ বার হবে না। তাঁর কথায়, ‘‘রেড রোডে এ বার ইদের নমাজও পড়তে দেওয়া হয়নি। পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে আমাদের অনেক এমন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।’’

পুজোয় করণীয়

• প্যান্ডেল হবে খোলামেলা

• ভিতরে গোল দাগ কেটে দূরত্ব রক্ষা

• শারীরিক দূরত্ব রাখার জন্য প্যান্ডেলে ক্রমাগত ঘোষণা

• ঢোকা ও বেরোনোর রাস্তা আলাদা

• স্যানিটাইজ়ার ও মাস্ক রাখতে হবে

• বেশি সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ

• স্বেচ্ছাসেবকদের ফেস শিল্ড

• অঞ্জলি ও সিঁদুর খেলা তিন দফায়

• সব ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ

• পুরস্কার-কমিটি আসবে দুপুরের মধ্যে

• তৃতীয়া থেকে একাদশী পর্যন্ত রাতে প্রতিমা দর্শন

• রেড রোডের কার্নিভাল বন্ধ

• বিভিন্ন দিনে এলাকা-ভিত্তিক বিসর্জন

মুখ্যমন্ত্রী এ দিন সকলকে মাস্ক পরে পুজো দেখতে যেতে অনুরোধ করেছেন। প্রতিটি পুজো কমিটিকে স্যানিটাইজ়ার, অতিরিক্ত মাস্ক সঙ্গে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক গরিব মানুষ আছেন, যাঁদের মাস্ক কেনার সামর্থ্য নেই। তাঁদের মণ্ডপে ঢোকার মুখে মাস্ক দিতে হবে।’’ সংক্রমণ কমাতে খোলামেলা প্যান্ডেল বানানোর জন্য অনুরোধ করেছেন তিনি। জানিয়েছেন, প্যান্ডেলের ছাদ যদি ঢাকতে হয় তা হলে যেন চারপাশ খোলা থাকে। আর চারপাশ ঢাকতে হলে মাথার উপরে খোলা রাখতে হবে।

মমতা বলেন, ‘‘লকডাউনের শুরুতে আমি বাজারে ঘুরে ঘুরে চক দিয়ে গোল গোল দাগ কেটে দিয়েছিলাম। সে ভাবেই প্যান্ডেলের মধ্যে চক দিয়ে গোল দাগ করে দিয়ে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। দূরত্ব রজায় রাখার জন্য দর্শকদের মাইকে ঘোষণা করে বার বার বোঝাতে হবে। প্যান্ডেলে ঢোকা ও বেরোনোর রাস্তা আলাদা করতে হবে।’’ ভিড় কমাতে এ বার তৃতীয়া থেকে একাদশী পর্যন্ত রাতে প্রতিমা দর্শনের সুবিধার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। পুলিশকেও তৃতীয়ার রাত থেকেই পথে নামার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, এ বার দর্শকদের সামলানোর জন্য বেশি স্বেচ্ছাসেবক রাখতে হবে এবং ক্লাবের সব কর্তা ও স্বেচ্ছাসেবকদের ফেস শিল্ড পরতে হবে। যাতে হুড়োহুড়ি না-হয়, সেই জন্য তিন দফায় অঞ্জলি ও সিঁদুর খেলার আয়োজন করতে হবে। এক জায়গায় বেশি জমায়েত আটকাতে এ বার পুজোয় সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

বিভিন্ন সংগঠন পুজো মণ্ডপ ঘুরে ঘুরে পুরস্কার দেয়। তাদের সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টের মধ্যে পরিদর্শন সেরে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। জানিয়েছেন, এ বার ভার্চুয়াল পুজো দেখেই পুরস্কার দেবে বিশ্ব বাংলা। বিভিন্ন এলাকার প্রতিমা বিসর্জন বিভিন্ন দিনে করার নির্দেশ দিয়ে মমতা জানান, প্রতিটি ঘাটে আরও বেশি করে আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। ঘাটগুলি স্যানিটাইজ়ও করা হবে। যাঁরা রাস্তায় নেমে ডিউটি করবেন, সেই সব পুলিশকর্মীদের কাছে তাঁর অনুরোধ, ‘‘আপনারা মাস্ক, গ্লাভস পরে একটু দূরে

দূরে দাঁড়িয়ে ডিউটি করবেন।’’ পুজোর সময়ে স্বাস্থ্য দফতরকেও স্বেচ্ছাসেবক বাড়াতে হবে বলে এ দিন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy