টাউনশিপের জন্য চিহ্নিত জমি ঘুরে দেখছেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মুখ্য সচিব দেবাশিস সেন। পাশে ডিএম। —নিজস্ব চিত্র
প্রায় দেড় দশক কেটে গেলেও শিল্পের জন্য অধিগৃহীত শিবপুর মৌজায় কোনও শিল্প আসেনি। তৃণমূল সরকার সেই জমির একটা বড় অংশে ‘স্মার্টসিটি’র ধাঁচে ‘গীতবিতান টাউনশিপ’ গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেছিল দু’বছর আগে। তার পরে একাধিক বেসরকারি সংস্থাকে বিভিন্ন সময়ে জমি দেখালেও সেই টাউনশিপে লগ্নি করতে কেউ আগ্রহ দেখায়নি। শেষমেশ সরকারি উদ্যোগেই গোটা টাউনশিপটি গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় বারের জন্য বোলপুরের শিবপুর মৌজা পরিদর্শনে এসে এ কথা জানালেন পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মুখ্য সচিব দেবাশিস সেন। সেই সঙ্গে ‘গীতবিতান’-এ প্লট কিনলে ‘বিল্ডিং প্ল্যান’-এর অনুমোদন নিখরচায় দেওয়ার কথাও তিনি ঘোষণা করলেন। দেবাশিসবাবু বলেন, “সরকারই এখানে টাউনশিপ করবে। এই ধরনের টাউনশিপ যে আমরাও গড়তে পারি, তা সরকার করে দেখিয়ে দেবে।’’
ঘটনা হল, শিবপুরে শিল্পতালুকের জন্য ২০০১ সালে প্রায় ৩০০ একর জমি নেয় সরকার। কিন্তু রাজ্য শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমের ওই জমিতে কেউ শিল্প গড়তে আসেনি। শিল্পস্থাপন এবং জমির বর্ধিত দামের দাবিতে বাম আমলে শুরু হয় আন্দোলন। জমির সীমানায় সিমেন্টের খুঁটি উপড়ে দেন চাষিরা। তৃণমূলের নেতৃত্বে ‘শ্রীনিকেতন শান্তিনিকেতন কৃষিজমি বাঁচাও কমিটি’ ২০০৯ সালে পুলিশের সামনেই ওই জমিতে ধান পুঁতে দিয়েছিল। রাজ্যে নতুন সরকার আসার পরে ২০১২ সালের মার্চে জমি পরিদর্শনে গিয়ে জমিদাতাদের ক্ষোভের আঁচ পেয়ে কমিটির নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করে দাবিদাওয়া বিবেচনার আশ্বাস দেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ওই বছরই জুলাই মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বীরভূমে গিয়ে সেই অধিগৃহীত জমিতে তথ্য-প্রযুক্তি বা আইটি হাবের শিলান্যাস করে ‘শিল্পনিকেতন’ গড়ার ডাক দেন। ২০১৩ সালে শিল্পমন্ত্রী শিবপুরে অধিগৃহীত জমি বিভিন্ন সরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। বর্তমানে ওই জমির একাংশে আইটি হাবের ভবন গড়ে উঠছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, রাজ্যে ৬টি ‘স্মার্টসিটি’ করার কথা আগেই ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মধ্যে ‘গীতবিতান’ স্মার্টসিটিকে সম্পূর্ণ সরকারি উদ্যোগে বানানো হচ্ছে। ১৩১ একর জমিতে গড়ে উঠবে এই ‘স্মার্টসিটি’। শান্তিনিকেতনের পরিবেশের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে এই শহরের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ দিন সেই কর্মকাণ্ডেরই অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে এলাকায় পৌঁছন দেবাশিসবাবু। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার, টাউন প্ল্যানার, আর্কিটেক্ট, রোড, জল ও বিদ্যুৎ দফতরের কর্মকর্তারাও। ছিলেন জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী এবং জেলার অন্যান্য কর্তারা। দেবাশিসবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো রাজ্য সরকার ‘গীতবিতান’ থিমসিটি গড়ে তুলছে। এই ধরনের ছ’টি থিম শহর বাছাই করেছে সরকার। যেখানে নতুন ও আধুনিক গ্রিন টাউনশিপ হবে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ৬টির মধ্যে একটি সরকারি প্রচেষ্টায় হবে। এবং তা বোলপুরের এই ‘গীতবিতান’ই।”
দেবাশিসবাবু এ দিন আরও জানান, এই টাউনশিপে চার কাঠা, ছ’ কাঠা করে আলাদা আলদা প্লট দেওয়া হবে। প্লটের সঙ্গেই অনুমোদিত প্ল্যান দেওয়া হবে। অর্থাৎ যিনি চার কাঠা প্লট কিনবেন, তিনি বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদিত অবস্থাতেই তা পেয়ে যাবেন। দেবাশিসবাবুর দাবি, ‘‘এ ফলে দু’টি বিরাট সুবিধা হবে বাসিন্দাদের। প্ল্যানের জন্য সময় এবং শ্রম খরচ করতে হচ্ছে না। আবার শান্তিনিকেতনের পাশে ওই পরিবেশের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে থাকবে স্থাপত্য, দরজা এবং অন্যান্য ব্যবস্থাপনা। সব ঠিক থাকলে আগামী ডিসেম্বর মধ্যে ওয়ার্কঅর্ডার দিয়ে কাজ শুরু হয়ে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy