জাতীয় পরিবেশ আদালতে ‘গেল’-এর দাবি খারিজ করল রাজ্য সরকার।
পরিবেশবান্ধব জ্বালানি (সিএনজি) কলকাতায় আনতে পাইপলাইন বসানোর জন্য কী কী অসুবিধা হচ্ছে, জাতীয় পরিবেশ আদালতের কাছে তা লিখিত ভাবে জানিয়েছিল ‘গেল’ (ইন্ডিয়া) লিমিটেড। ওই সংস্থা জানিয়েছিল, পাইপলাইন বসানোর জন্য রাজ্য সরকারের তরফে জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন। সেই কাজ ত্বরাণ্বিত করতে একাধিকবার রাজ্যকে চিঠি দেওয়া হলেও কাজে গতি আসেনি। ফলে প্রকল্পের কাজ ক্রমশ পিছোচ্ছে। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার এই দাবিকেই সরাসরি ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে জানিয়ে নাকচ করে দিল রাজ্য সরকার!
কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার দাবিকে রাজ্য সরকারের এ ভাবে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলাটা সাম্প্রতিক সময়ে নজিরবিহীন বলেই জানাচ্ছে ওয়াকিবহাল মহল। ফলে সিএনজি আনার জন্য পাইপলাইন বসানোর প্রক্রিয়ার হাল-হদিস জানার বিষয়টি দিনের শেষে হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্য ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার পারস্পরিক চাপানউতোর। অথচ তথ্য বলছে, দেশের বিভিন্ন শহরে সিএনজি আনার জন্য ২০০৭ সালে ‘গেল’ পাঁচটি প্রকল্প গ্রহণ করেছিল। বাকি প্রকল্পগুলি পুরোদস্তুর চালু হয়ে গেলেও এ রাজ্যের ক্ষেত্রেই সে কাজ ক্রমশ পিছোতে থাকে। এ দিকে বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়লেও তার পরিপ্রেক্ষিতে কেন সিএনজি আনতে দেরি হচ্ছে, তা নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালত দফায় দফায় জানতে চায় রাজ্য ও ‘গেল’-এর কাছে। দু’বছর আগে গণপরিবহণে সিএনজি ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট নীতি তৈরির জন্যেও রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। কিন্তু তার পরেও কাজ এগোয়নি।
সিএনজির পাইপলাইন বসাতে দেরির কারণ ব্যাখ্যা করে ‘গেল’ জানায়, জমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পূর্ণ হলেই পাইপলাইন বসানো সম্ভব। কারণ অধিগ্রহণের পরেই সংস্থা তা ব্যবহারের অধিকার (রাইট অব ইউজ়ার বা আরওইউ) পাবে। ফলে তিন বছর ধরে সংস্থা তো বটেই, এমনকি কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের মাধ্যমেও রাজ্যকে একাধিক বার চিঠি দেওয়া হয়েছে, দফায় দফায় বৈঠক করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও কাজ এগোয়নি। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার এক কর্তার কথায়, ‘‘জমি অধিগ্রহণ পুরোপুরি রাজ্যের বিষয়। সেটা তাড়াতাড়ি না হলে কী ভাবে পাইপলাইন বসানো যাবে!’’
কিন্তু জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত ‘গেল’-এর যাবতীয় দাবি কার্যত নাকচ করে রাজ্য জানিয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পাইপলাইনের রুটের জন্য যে সমস্ত জায়গা চিহ্নিত করেছে, সেখানে জমি অধিগ্রহণ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। প্রথম দফার প্রক্রিয়া আগামী মাসে শেষ হওয়ার কথা। বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ভাল করেই জানা রয়েছে। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘তারা এটাও জানে, এই পাইপলাইন বসানোর জন্য সরকার কতটা আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করছে। তবে স্থানীয় সমস্যার সমাধান করেই জমি অধিগ্রহণ করা হবে, সে কারণে কিছুটা দেরি হচ্ছে। ফলে সংস্থার দাবির কোনও অর্থ নেই।’’
যদিও ওয়াকিবহাল মহলের মতে, রাজ্য সরকারের তরফে কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার হলফনামাকে ভিত্তিহীন বলাটা সাম্প্রতিক অতীতে ঘটেনি। এক পরিবেশকর্মীর বক্তব্য, ‘‘একটা কথা মাথায় রাখা প্রয়োজন যে, এখানে কিন্তু মৌখিক বাদানুবাদ হচ্ছে না। পুরোটাই লিখিত আকারে হচ্ছে। ফলে সেখানে এক পক্ষের দাবিকে পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে ঘটেনি।’’ আর এক পরিবেশকর্মীর বক্তব্য, ‘‘দুই পক্ষের সমীকরণের নিরিখে এই ঘটনা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।’’ পরিবেশবান্ধব জ্বালানি নিয়ে পরিবেশ আদালতে মামলা করেছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্য সরকার হলফনামা জমা দিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের অধীনস্থ কোনও সংস্থার দাবিকে বিভ্রান্তিকর বলছে, এমনটা কখনও দেখা যায়নি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy