ফাইল চিত্র।
সামনে পঞ্চায়েত ভোট। গ্রামীণ এলাকায় রাস্তার হাল না ফিরলে এবং আবাস যোজনায় যোগ্য উপভোক্তা বাড়ি না পেলে, জনমত শাসক দলের বিরুদ্ধে যেতে দেরি হবে না, এমন ধারণা অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের। গ্রামীণ সড়ক ও আবাস প্রকল্পের টাকা বন্ধ করার অভিযোগে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আগেই সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার দুর্গাপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি জানালেন, বর্তমানে যা পরিস্থিতি, তাতে রাজ্যের বিভিন্ন তহবিল থেকেই ওই সব প্রকল্পের আটকে থাকা কাজ করা হবে। বলেন, ‘‘যতটা পারছি, আমাদের টাকায় করার চেষ্টা করছি। তা-ও পুরোটা পারব না।’’ তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই ‘নিদানকে’ পঞ্চায়েত ভোটের ‘প্রচার’ বলা-সহ কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধীরা।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, পঞ্চদশ অর্থ কমিশন থেকে জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতি যে টাকা পায়, তার একটা অংশ রাস্তার কাজের জন্য নির্দিষ্ট থাকে। ওই তহবিলের অর্ধেক দিয়ে গ্রামীণ সড়ক যোজনায় তালিকাভুক্ত রাস্তাগুলি করতে হবে। সে প্রসঙ্গেই জেলা পরিষদ এবং পঞ্চায়েত সমিতিকে তাঁর পরামর্শ, ‘‘আমি বলব, আপনাদের অন্য কাজ করতে হবে না। আমরা সেগুলো দেখে নেব। সারা বাংলার জন্য এটাই নীতি হল।’’ জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতি কে, কোন রাস্তা করবে, তা নির্ধারণের জন্য তিনি জেলাশাসকদের জেলা সভাধিপতি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও পূর্ত দফতরকে নিয়ে বৈঠক করতে বলেন। তাঁর কথায়, ‘‘এক দিকের রাস্তা বন্ধ হলে, অন্য দিকের রাস্তা খুলতে হয়। এখন শুধু রাস্তার কাজ করুন। সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন আসছে, তখন রাস্তার কাজ করতে পারবেন না। গ্রামীণ রাস্তা খারাপ থাকলে, ভোট পাবেন না।’’
পরে, মুখ্য সচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী বলেন, ‘‘পঞ্চদশ অর্থ কমিশনে বছরে ১,৭০০ কোটি টাকা মেলে। গ্রাম পঞ্চায়েতও ‘আনটায়েড ফান্ড’-এ যা পায়, তার পুরোটাই রাস্তার কাজে লাগানো যায়। এ ছাড়া, আরআইডিএফ (রুরাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফান্ড) প্রকল্প থেকেও পঞ্চায়েতকে বাড়তি বাজেট দেওয়া যাবে।’’ শুনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘রাস্তার কাজে পঞ্চায়েতগুলিও যোগ দেবে।’’
বাংলা আবাস প্রকল্পেও টাকা আটকে দেওয়ার অভিযোগ তুলে মমতা বলেন, ‘‘নতুন করে ওই প্রকল্পে নাম তুলবেন না। কেন্দ্রীয় সরকার এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা দেয়নি। যে বাড়িগুলো আপনারা লিস্ট করেছিলেন, সেগুলোর ডেটা ওরা মুছে দিয়েছে। যাতে মানুষ না পান। এ ক্ষেত্রে আমি নিজেও এক বার দিল্লিতে গিয়ে কথা বলব।’’ মুখ্যসচিব জানান, আবাস প্রকল্পে প্রায় এক লক্ষ বাড়ির বিভিন্ন কিস্তির টাকা বাকি রয়েছে। তহবিলে ১,২০০ কোটি টাকা রয়েছে। শীঘ্র কিস্তির টাকা ছাড়া হবে। সমীক্ষায় আবাস প্লাস প্রকল্পে রাজ্যে ৫০ লক্ষের বেশি বাড়ি তৈরির লক্ষ্য রয়েছে।
মুখ্যসচিবের সঙ্গে আলোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতগুলিকে রাস্তার জন্য বছরে ৮০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়। তার সঙ্গে অন্য জায়গা থেকে টাকা একত্রিত করে আমরা বছরে ১০ লক্ষ করে বাড়ি তৈরি করব। পাঁচ বছরে ৫০ লক্ষ বাড়ি করব। চটপট করে দিন। না হলে পঞ্চায়েতে বসে ললিপপ খাবেন, নির্বাচন যে কোনও সময়ে ঘোষণা হয়ে যাবে।’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘রাজ্য দেনায় ডুবে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যা বলছেন, তাতে রাস্তা এবং বাড়ির সমস্যা আদৌ মিটবে না। পুরোটাই পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে নির্বাচনী প্রচার।’’ দলের আর এক কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য ‘‘বাম আমলে এই মুখ্যমন্ত্রীই দিল্লি যাতে টাকা না দেয়, সে ব্যবস্থা করেছেন। অনুরোধ করব, যদি টাকা থাকে, একশো দিনের কাজের টাকাটা দিন। বাংলার বাড়ির কায়দা-কানুন বন্ধ করুন। যুবকদের কাজের ব্যবস্থা করুন।’’ বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষের টিপ্পনী, ‘‘কেন্দ্র ১৬ লক্ষ বাড়ির জন্য টাকা দিয়েছে। সে বাড়ি রাজ্য সরকার এখনও তৈরি করতে পারেনি। তারা আবার বাড়ি তৈরি করে দেবে!’’
তৃণমূলের রাজ্যের অন্যতম মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাস্তা ও বাড়ি তৈরির চাহিদা বাড়বে। তাই কী-কী করতে হবে, মুখ্যমন্ত্রী তা আগাম জানিয়ে গেলেন। কেন্দ্র টাকা না দিলেও উন্নয়নের ইচ্ছা থাকলে যে তা করা যায়, তিনি তা বুঝিয়ে দিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy