Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
health

হিমোফিলিয়া কর্মসূচিতে রাজ্যে কম বরাদ্দের নালিশ

স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, এর ফলে কর্মসূচি রূপায়ণ করতে গিয়ে পদে পদে ঠোক্কর খেতে হচ্ছে। এমনকি, হিমোফিলিয়া রোগীদের জন্য রক্তের প্রয়োজনীয় উপাদান ‘ফ্যাক্টর-৮’ ও ফ্যাক্টর-৯’ যথেষ্ট পরিমাণে জোগানো যাচ্ছে না।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২০ ০৫:৩৪
Share: Save:

‘জাতীয় হিমোফিলিয়া কর্মসূচি’ ঘিরে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগ তুলল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।

গত বছর এই কর্মসূচি ঘোষণার পর এই খাতে কত টাকা লাগবে, তা সব রাজ্যের কাছে জানতে চেয়েছিল কেন্দ্র। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানান, রাজ্য ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের জন্য ৪৫ কোটি টাকা চাইলেও কেন্দ্র মাত্র ২২ কোটি টাকা অনুমোদন করে পাঠিয়েছে। স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, এর ফলে কর্মসূচি রূপায়ণ করতে গিয়ে পদে পদে ঠোক্কর খেতে হচ্ছে। এমনকি, হিমোফিলিয়া রোগীদের জন্য রক্তের প্রয়োজনীয় উপাদান ‘ফ্যাক্টর-৮’ ও ফ্যাক্টর-৯’ যথেষ্ট পরিমাণে জোগানো যাচ্ছে না।

হিমোফিলিয়া রোগীদের বড় অংশ জানাচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গে মোট ৩৪টি সরকারি হাসপাতালে হিমোফিলিয়া চিকিৎসা কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। কিন্তু ওই ৩৪টি কেন্দ্রের বাইরেও অনেক সরকারি হাসপাতালে প্রচুর হিমোফিলিয়া রোগী চিকিৎসা এবং ফ্যাক্টর-৮ বা ফ্যাক্টর-৯ পেতেন। তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে আচমকা। ওই রোগীদের সংশ্লিষ্ট জেলার নির্ধারিত হিমোফিলিয়া চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে বলা হচ্ছে। কিন্তু সেটা হয়তো কোথাও ২০ কিলোমিটার আবার কোথাও ৪০ কিলোমিটার দূরে!

যেমন, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের হিমোফিলিয়া রোগীদের প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে খড়্গপুর সাব ডিভিশনাল হাসপাতালে যেতে বলা হয়েছে। কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালের হিমোফিলিয়া রোগীদের এ বার থেকে চিকিৎসার জন্য যেতে বলা হয়েছে রানাঘাট ও কৃষ্ণনগর হাসপাতালে।

রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের হিমোফিলিয়া রোগীদের পাঠানো হচ্ছে আসানসোলে। হাওড়া জেলা হাসপাতালের রোগীদের পাঠানো হচ্ছে উলুবেড়িয়ায়। আরামবাগ হাসপাতালের রোগীদের চিকিৎসা নিতে বলা হয়েছে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে। এর ফলে তাঁদের চূড়ান্ত ভোগান্তি হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্য ভবনে চিঠি দিয়েছেন একাধিক রোগী। তাঁরা যে দোকান থেকে ফ্যাক্টর-৮ বা ৯ কিনে নেবেন, তা-ও প্রায় অসম্ভব। কারণ, খোলা বাজারে এগুলি বিক্রি হয় না বললেই চলে আর কোথাও বিক্রি হলেও তার দাম প্রচুর (এক ইউনিটের দাম প্রায় ৭-১১ হাজার টাকা)।

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলেছেন, ‘‘৪৫ কোটির মধ্যে কেন্দ্র অনুমোদন করে পাঠিয়েছে মাত্র ২২ কোটি। বাকিটা দেবে না বলে দিয়েছে। অর্থাৎ বাকিটা আমাদের দিতে হবে। ফ্যাক্টর-৮ বা ফ্যাক্টর-৯ এর মতো দামি রক্তের উপাদান বিপুল পরিমাণে কেনা সম্ভব নয় বা এখনই সব জায়গা থেকে দেওয়া সম্ভব নয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে।’’

কেন পশ্চিমবঙ্গের প্রয়োজন অনুযায়ী টাকা দেয়নি কেন্দ্র? নীতি আয়োগের এক কর্তার দাবি, ‘‘রাজ্য যখন কোনও কর্মসূচি বা প্রকল্পের আনুমানিক খরচ পাঠায়, তখন কোন খাতে কী খরচ তার বিস্তারিত হিসাব পাঠাতে হয়। পশ্চিমবঙ্গ যে রিপোর্ট পাঠিয়েছে, তাতে আমরা অত টাকা দেওয়ার যৌক্তিকতা খুঁজে পাইনি। হয়তো সেখানকার স্বাস্থ্যকর্তারা বিষয়টি গুছিয়ে লিখতে পারেননি।’’

রাজ্য স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, কেন্দ্র যা টাকা দিচ্ছে তাতে হিমোফিলিয়া রোগী-পিছু মাসে ২ হাজার ইউনিটের বেশি ফ্যাক্টর-৮ দেওয়া যাবে না। অথচ, বেশির ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক রোগীর প্রতি মাসে ৩-৪ হাজার ইউনিট ফ্যাক্টর-৮ দরকার। টাকার অভাবে অনেক হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে রোগীকে ফ্যাক্টর-৮ এর পাশাপাশি প্লাজমা দিতে বাধ্য হচ্ছেন চিকিৎসকেরা। অথচ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ রয়েছে, কারও ফ্যাক্টর-৮ লাগলে শুধু সেটাই দিতে হবে। বিকল্প হিসাবে প্লাজমা ব্যবহার নিষিদ্ধ।
হিমোফিলিয়া রোগীরা দাবি করেছেন, বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে কার্যত ফ্যাক্টর-৮ এর ‘রেশনিং’ শুরু হয়েছে। যেমন শিয়ালদহ ইএসআই হাসপাতালে দীর্ঘদিন পর্যন্ত হিমোফিলিয়ার রোগীরা ১ সপ্তাহের ফ্যাক্টর-৮ একসঙ্গে নিয়ে যেতেন। তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন রোগীদের যখন প্রয়োজন হচ্ছে, তখন হাসপাতালে এসে তা নিতে হচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Health Haemophilia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy