নীতীশ কুমার। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমারের রাজনৈতিক ‘ডিগবাজি’র পর অন্তত একটি কারণে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে বঙ্গ সিপিএম। গত ১৭ জানুয়ারি ছিল রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর প্রয়াণ দিবস। ওই দিনই নিউ টাউনে বসুর নামাঙ্কিত গবেষণাকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা ছিল নীতীশের। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য ‘জ্যোতি বসু সোশ্যাল স্টাডিজ় অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার’-এর তরফে নীতীশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েও শেষ পর্যন্ত ‘শারীরিক অসুস্থতা’র কথা জানিয়ে ওই দিন গরহাজির থাকেন বিরোধী জোট ত্যাগ করে ফের বিজেপির সঙ্গী হওয়া নীতীশ। বর্তমানে বিহার রাজনীতির টালমাটাল পরিস্থিতিতে নীতীশের ওই অনুপস্থিতির কারণেই স্বস্তির শ্বাস ফেলছে রাজ্যের সিপিএম নেতৃত্ব।
জল্পনাকে সত্যি করে রবিবার সকালেই মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়েছেন নীতীশ। লালুপ্রসাদ যাদবের আরজেডি এবং কংগ্রেসের সঙ্গ ত্যাগ করে আরও এক বার বিজেপির সমর্থন নিয়ে বিহারের মসনদে বসতে চলেছেন তিনি। এই আবহে রাজ্য সিপিএমের নেতারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি শুরু করেছেন যে, “ভাগ্যিস নীতীশ বারো-তেরো দিন আগে কলকাতায় আসেননি। না হলে আজকে পোড়ামুখে আরও কালি লাগত।” ঘরোয়া আলাপচারিতায় সিপিএমের অনেকেই স্বীকার করে নিচ্ছেন যে, অল্পের জন্য বড় বিড়ম্বনার হাত থেকে রেহাই পেয়েছে দল। কেউ কেউ মশকরা করে বিষয়টিকে ‘গোললাইন সেভ’ বা ‘অল্পের জন্য গোলরক্ষা’ও বলছেন।
নীতীশকে কেন ডাকা হল, তা নিয়ে সিপিএমের অন্দরেও একাধিক প্রশ্ন ছিল। কিছু ক্ষেত্রে তা দ্বন্দ্বের জায়গাতেও পৌঁছেছিল। দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রটি প্রস্তুত করেছিল নীতীশের সাম্প্রতিক বিজেপি-ঘনিষ্ঠতা। কারণ সিপিএমের অনেক শীর্ষনেতাই দলের অন্দরে জানিয়েছিলেন যে, গত আড়াই-তিন মাস ধরে নীতীশ বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। বার বার রাজনৈতিক অবস্থান বদলের জন্য বিহারের রাজনীতিতে তাঁকে যে ‘পাল্টি কুমার’ বলে ডাকা হয়, সে কথায় স্মরণ করিয়ে দেন ওই নেতারা।
এখন প্রশ্ন হল, নীতীশের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে এই প্রশ্ন থাকলেও কেন রাজ্য সিপিএম তাঁকেই বসুর নামাঙ্কিত গবেষণাকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে আমন্ত্রণ জানাল? এই প্রসঙ্গে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য কেরল থেকে আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, “দলের এক শীর্ষনেতা কার্যত পীড়াপীড়ি করেছিলেন, যাতে নীতীশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কারণ নীতীশ সমাজবাদী একটি দলের নেতা। সেই সময় আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের তরফে এই নিয়ে আপত্তিও জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেই শীর্ষনেতা নীতীশকে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়ে এমন আবেদন-নিবেদন করেন যে, রাজ্য সিপিএম নেতৃত্ব তা ফেলতে পারেনি।” প্রসঙ্গত, এখন কেরলে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক চলছে।
১৭ জানুয়ারির কর্মসূচিতে নীতীশ যোগ না দিলেও লিখিত একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন। সেই বার্তা পাঠ করাও হয়েছিল। পরের দিন সিপিএমের দলীয় মুখপত্রে ছাপার অক্ষরে নীতীশের সেই বার্তাও প্রকাশিতও হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, নীতীশ যে আসছেন, তা উল্লেখ করে সিপিএমের মুখপত্রে অন্তত পাঁচ দিন আগে থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু রবিবারের ঘটনাপ্রবাহ এবং নীতীশের ‘পাল্টিবাজি’র পর রাজ্য সিপিএমের নেতারা বলছেন, “একটুর জন্য বেঁচে গেলাম।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy