গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
একটা সময় পর্যন্ত কেরোসিন মূলত ব্যবহার করা হত রান্নার কাজে। এ ছাড়াও বাড়িতে বাড়িতে আলো জ্বালানোর কাজও মিটত এই জ্বালানিতে। কিন্তু রান্নার গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় গোটা দেশেই কেরোসিনের ব্যবহার কমেছে। অথচ, বাংলায় তা কমার লক্ষণ নেই। কেন্দ্রের হিসাব বলছে, বিভিন্ন রাজ্যে পাঠানো মোট কেরোসিনের ৬৬.৩৮ বিক্রি হয় পশ্চিমবঙ্গেই!
কেন্দ্রীয় সরকার রান্না এবং আলো জ্বালানোর জন্যই ভর্তুকিযুক্ত কেরোসিন সরবরাহ করে, যা গণবন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে উপভোক্তাদের দেয় রাজ্য। বিদ্যুৎ সংযোগ বৃদ্ধি এবং তুলনায় বেশি বাড়িতে রান্নার জন্য এলপিজি গ্যাসের ব্যবহার শুরু হতেই দেশের অন্যান্য রাজ্য একটু একটু করে কেন্দ্রের কাছে কেরোসিনের চাহিদা কমিয়ে দেয়। কিন্তু বাংলায় তা কমেনি। এর পরে কেন্দ্রের তরফেই তা অনেকটা কমিয়ে দেওয়া হয়। এ নিয়ে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল কেরোসিন এজেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ আদালতেও যায়। অন্য দিকে, কেন্দ্রের অভিযোগ, বাংলায় পেট্রল, ডিজেলের মতো জ্বালানিতে ‘ভেজাল’ হিসাবে কেরোসিন ব্যবহার করা হয়। কেরোসিনের ‘অপব্যবহার’ বন্ধ করার জন্য গত জুন মাসেই পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক রাজ্য সরকারকে চিঠি দেয়।
পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের হিসাব অনুযায়ী ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষে কেন্দ্র ভর্তুকিযুক্ত কেরোসিন অন্য সব রাজ্যের তুলনায় বেশি পাঠিয়েছে বাংলায়। মোট পরিমাণ ৭,০৪,০১৬ কিলোলিটার। যা দেশের মোট কেরোসিনের ৬৬.৩৮ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে বিহার। তারা পেয়েছে ৬.০২ শতাংশ কেরোসিন। এর পরে ওড়িশা, অসম, মধ্যপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, ঝাড়খণ্ডের কেরোসিন প্রাপ্তির পরিমাণ ২ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে। উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, রাজস্থানের মতো কয়েকটি রাজ্যে এখন এক ফোঁটাও কেরোসিন ব্যবহার হয় না।
পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী সুরেশ গোপ সম্প্রতি সংসদে যে লিখিত বিবৃতি দিয়েছেন, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত অর্থবর্ষে দেশের সব রাজ্যে মিলিয়ে মোট ১০,৬০,৫২৪ কিলোলিটার তেল পাঠিয়েছে কেন্দ্র। তার মধ্যে সর্বাধিক এসেছে পশ্চিমবঙ্গে। পাঠানো সব কেরোসিনই নিয়মমাফিক যোগ্য উপভোক্তাদের বিলি করা হয়েছে বলে রাজ্য দাবি করেছে বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী। সুরেশ জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজ্যের খাদ্য দফতরের মাধ্যমে শুধুমাত্র রেশনকার্ড রয়েছে, এমন উপভোক্তাদেরই নির্দিষ্ট পরিমাণে কেরোসিন দেওয়া হয়। ‘অযোগ্যরা’ পাচ্ছেন কি না বা ‘অপব্যবহার’ হচ্ছে কি না, তা নিয়মিত যাচাই করে জেলা প্রশাসন এবং রাজ্য এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ।
সংসদে জমা দেওয়া বিবৃতিতে এ-ও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০১৬ সালের মে মাসে ভারত সরকার ‘প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা’ চালু করার পরে দেশের সব এলাকায় গরিব মহিলাদের নামে বিনামূল্যে রান্নার গ্যাসের সংযোগ দিয়েছে। এমন উপভোক্তার সংখ্যা ১০.৩৩ কোটি। দেশে মোট এলপিজি ব্যবহারকারী পরিবারের সংখ্যা ৩২.৮৩ কোটি। এ ছাড়াও নলবাহিত গ্যাসের সুবিধা পায় ১.৩৫ কোটি পরিবার। এর জন্য দেশে মোট রান্নার গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটারের সংখ্যা ২৫,৫৩২। কেন্দ্রের এমনও দাবি যে, পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের সর্বত্র প্রায় সব বাড়িতেই রান্নার গ্যাসের সংযোগ চালু হয়েছে। সে কারণে কেরোসিন ব্যবহারের প্রয়োজন একেবারেই কমে গিয়েছে। এর পরেও এই রাজ্যে এত পরিমাণ কেরোসিন প্রয়োজন হচ্ছে কেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই সুর চড়াতে শুরু করেছে রাজ্য বিজেপি। দলের রাজ্যসভা সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘বাংলা পিছিয়ে রয়েছে ভাবলে ভুল হবে। এখান থেকে বিপুল পরিমাণে কেন্দ্রের দেওয়া ভর্তুকিযুক্ত কেরোসিন বাংলাদেশে পাচার হয়। খোঁজ করলে এমন পরিবার পাবেন না, যারা বাড়িতে কেরোসিন ব্যবহার করে। অনেকে রেশন থেকে কেরোসিন নেনও না। তবু সবটাই বিক্রি হয়ে যায়!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy