আগামী শনিবার বিদেশ সফরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পর্বে রাজ্য প্রশাসনে নজরদারির কাজ মন্ত্রী, সচিব এবং পুলিশ আধিকারিকদের মধ্যে ভাগ করে দিলেন তিনি। একটি টাস্ক ফোর্স গড়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাতে রেখেছেন ভূমি দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব বিবেক কুমার, অর্থসচিব প্রভাত মিশ্র, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী, ডিজি রাজীব কুমার এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মাকে। পাঁচ জন মন্ত্রীকে সমন্বয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন মমতা। তাঁরা হলেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শশী পাঁজা, সুজিত বসু, অরূপ বিশ্বাস এবং ফিরহাদ হাকিম। বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মমতা জানিয়েছেন, কোনও কিছু ঘটলে তাঁর সঙ্গে কথা বলে নিয়েই কাজ করবে এই টাস্ক ফোর্স।
ব্রিটেনে সাত দিনের সফরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তাঁর একাধিক কর্মসূচি রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী মুখ্যসচিব মনোজ পন্থও। সেই সফরের আগে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁর গড়ে দেওয়া টাস্ক ফোর্স নিয়মিত বৈঠক করবে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ রাখবে। প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রী-মুখ্যসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করবে টাস্ক ফোর্স।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কোনও ঘটনা ঘটলে বা কোনও নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঙ্গে টাস্ক ফোর্স কো-অর্ডিনেট করবে। আমরা ২২ তারিখ যাচ্ছি। ২৪ তারিখ ওখানে ভারতীয় হাইকমিশনে অনুষ্ঠান, ২৫ তারিখ বাণিজ্য সম্মেলন, ২৬ তারিখ শিল্প নিয়ে সরকারি স্তরে বৈঠক, ২৭ তারিখ অক্সফোর্ডে ভাষণ দেওয়া, ২৮ তারিখ লন্ডন থেকে রওনা দিয়ে দেশে ফিরব। খুব সংক্ষিপ্ত সফর। ব্রিটেন তো আমাদের সঙ্গী, ওদের সঙ্গে বাণিজ্য সংক্রান্ত যোগ আছে। তাই আমন্ত্রণ পেয়ে যাচ্ছি। এটা সরকারের ব্যাপার।’’ মুখ্যমন্ত্রী এ-ও জানিয়েছেন, ব্রিটেনের পাশাপাশিই তাঁর আরও একটি দেশে আমন্ত্রণ ছিল। কিন্তু তিনি সফর সংক্ষিপ্ত করেছেন। তার কারণ হিসাবে মমতা বলেন, ‘‘সামনে ইদ, বাসন্তী পুজোও আছে। ওই সময় আমি এখানেই থাকতে চাই। তাই ওখানের সব কাজ সেরেই ফিরে আসব।’’ তাঁর অনুপস্থিতিতে দলের দায়িত্ব কারা সামলাবেন, তা-ও জানিয়ে দিয়েছেন মমতা। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর অনুপস্থিতিতে দল সামলাবেন রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থাৎ, প্রবীণ-নবীনের যুগলবন্দিতেই যে দল চলবে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী।

মমতার লন্ডন সফর নিয়ে শোরগোল তৈরি হয়েছে বাংলার রাজনৈতিক মহলে। মুখ্যমন্ত্রীকে লাগাতার কটাক্ষ করছে বিরোধী শিবির। বৃহস্পতিবার তাদের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় গণশত্রু আছে। হোয়াট্সঅ্যাপে খারাপ কথা লেখা হচ্ছে। ইমেল পাঠানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, আমরা খারাপ। আমরা কিন্তু সেই ইমেলগুলো পেয়েছি। বাংলাকে অপমান করা হচ্ছে। আমাকে অপমান করুন, বাংলাকে অপমান করবেন না। আমাদের কোনও নেতা বিদেশে গিয়ে দেশের বদনাম করে না।’’
ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবারই তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এক্স হ্যান্ডলে একটি পোস্টে দাবি করেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর লন্ডন সফরে বিক্ষোভের নামে বিশৃঙ্খলা করে বাংলা সম্পর্কে মিথ্যা প্রচারের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। নবান্নের সাংবাদিক সম্মেলনে এই সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কেউ বিক্ষোভ করতে চাইলে করবে। এতে আমারই ভাল। আমিই প্রচার পাব।’’
এক্স হ্যান্ডলের পোস্টে কুণাল দাবি করেছেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীদের’ কিছু ইমেল তাঁদেরও হাতে এসেছে। বাংলাকে বদনাম করতেই এই চক্রান্ত বলেই মনে দাবি করেছেন তিনি। কুণালের নিশানায় যাঁরা ছিলেন, তাঁদের ‘গণশত্রু’ বলেই কটাক্ষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘বিদেশ থেকেই সেই মেলগুলো পেয়েছি। গণশত্রুরা কী ভাবেন? আমাদের কি কেউ পরিচিত নেই সেখানে? ঈর্ষার কোনও ওষুধ নেই।’’
মুখ্যমন্ত্রীর নিশানায় যে বামপন্থীরাই ছিলেন, তা-ও স্পষ্ট। মমতা বলেন, ‘‘যারা শূন্য, তারাই চিৎকার করছে। চোরের মায়ের বড় গলা! বাম, উগ্র বাম, সাম্প্রদায়িক দলগুলোর মধ্যে কোনও ভেদ নেই।’’ প্রধান বিরোধী দল বিজেপিকেও বিঁধতে ছাড়েননি মমতা। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারই আমাকে বিদেশ সফরের ছাড়পত্র দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই নীতি আয়োগের বৈঠকে বলেছিলেন, ‘আপনারা বিদেশ যান, বিনিয়োগ নিয়ে আসুন।’ ওঁর কথাকে সম্মান জানিয়েই তো বিদেশ সফর।’’
স্পিভাককে ধন্যবাদ মমতার
সাংবাদিক বৈঠকে চিন্তাবিদ গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাককেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা গায়ত্রী। সেই চিঠি প্রকাশ্যে এসেছে। দেখা যাচ্ছে, চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীর ঢালাও প্রশংসা করেছেন গায়ত্রী। সম্প্রতি তিনি যে সম্মান পেয়েছেন বার্গন বিশ্ববিদ্যালয় এবং নরওয়ে সরকারের কাছে থেকে, তা মমতা এক্স হ্যান্ডলের পোস্টে উল্লেখ করায় তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, দারিদ্র দূরীকরণেও মুখ্যমন্ত্রীর প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন। বৃহস্পতিবার মমতাও গায়ত্রীর প্রশংসা করেছেন।