বিধানসভায় বাজেট পেশের আগে অমিত মিত্র ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
আগামী বছরেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেটে একগুচ্ছ প্রকল্প ও ছাড়ের কথা ঘোষণা করে রাজ্যবাসীর মন পাওয়ার চেষ্টা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাঁর মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ মাসুলে ছাড়, মোটর ভেহিক্যালসের সমস্ত রকম জরিমানা মকুব, চা-বাগানগুলিতে কৃষি আয়কর মকুবের মতো একাধিক উল্লেখ। যা দেখে অনেকেই দিল্লির অরবিন্দ কেজরীবাল সরকারের মডেলের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। তাঁদের মতে, একেবারে নির্বাচনমুখী বাজেটই পেশ করেছে রাজ্য। দিল্লি সরকার বিদ্যুতের মাসুলে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত ছাড় দিয়েছিল। একই রকম ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বিদ্যুতে ৭৫ ইউনিট ছাড়ের কথা ঘোষণা করেছে। এই সরকারও আসলে কেজরীবালের পথে হাঁটার চেষ্টা করছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ।
সোমবার রাজ্য বিধানসভায় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। এই বাজেটে এক দিকে যেমন আদিবাসীদের পেনশন-সহ একগুচ্ছ প্রকল্প রাখা হয়েছে। অন্য দিকে, চা শ্রমিক, অসংগঠিত শ্রমিক এবং কৃষকদের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু ঘোষণা করেছে মমতার সরকার। রাজনৈতিক শিবিরের ধারণা, গত লোকসভা নির্বাচনে যে সব অঞ্চলগুলোয় তৃণমূল জোর ধাক্কা খেয়েছিল, সেই সব এলাকার মানুষের মন পেতেই এই বাজেটকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন তৃণমূল নেত্রী।
আদিবাসীদের জন্য যেমন ‘জয় জোহর’ পেনশন প্রকল্প চালু করার কথা বলা হয়েছে, তেমনই গৃহহীন চা শ্রমিকদের জন্য ‘চা-সুন্দরী’ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, চা বাগানগুলোতে কৃষি আয়কর মকুব করা হবে বলেও জানিয়েছেন মমতা। দীর্ঘ দিন ধরেই চা শ্রমিকদের নানা অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে হেরেছে তৃণমূল। এই বাজেটে চা শ্রমিকদের উপর জোর দেওয়ার অন্যতম কারণ সেটাই।
শিক্ষা ক্ষেত্রেও বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্যে ৪২টি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে বাজেটে। এ ছাড়া রাজ্যের ছেলেমেয়েরা যাতে সিভিল সার্ভিসে আরও ভাল ফল করতে পারে, তার জন্য কলকাতা, শিলিগুড়ি ও দুর্গাপুরে ট্রেনিং অ্যাকাডেমি খোলা হবে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী। তবে, এ বারের বাজেটে কিন্তু রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ বা শিক্ষকদের বেতন সংক্রান্ত সমস্যার কোনও উল্লেখ ছিল না।
পরে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বেকারদের দিশা দেখানোর চেষ্টা হয়েছে এই বাজেটে। কর্মসাথী প্রকল্পের আওতায় প্রতি বছর এক লক্ষ ছেলেমেয়ের চাকরি হবে বলে জানান মমতা। শুধু তাই নয়, বেকারদের এই প্রকল্পের অধীনে ২ লক্ষ টাকা করে ঋণও দেওয়া হবে। স্বাস্থ্যসাথী, রূপশ্রী, কন্যাশ্রী প্রকল্পের প্রসঙ্গ টেনে এনে মমতা বলেন, “সাড়ে ৭ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছেছে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প। ৬৬ লক্ষ কন্যাশ্রী আছে, যারা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। রূপশ্রী প্রকল্পে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।” অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে বাজেটে। তাঁদের জন্য বিনামূল্যে পেনশন প্রকল্প চালু করা হবে বলেও জানিয়েছেন মমতা।
We have presented a people's Budget without having to sell any of the state PSUs. Simultaneously, we've spread smiles across communities.
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) February 10, 2020
The Centre can, for a change, help make these smiles broader by working with the States.
We'll let the people decide which Budget is better.
রাজ্য বাজেট প্রসঙ্গে মমতা টুইট করে বলেন, “আমরা জনগণের বাজেট করেছি। এবং সেটা করা হয়েছে রাজ্যের কোনও সরকারি সংস্থাকে বিক্রি না করেই। পাশাপাশি, এই বাজেটের মধ্য দিয়ে সব সম্প্রদায়ের মুখে হাসি আনার চেষ্টা করেছি। রাজ্যগুলোর সঙ্গে কাজ করে এই হাসিটাকে আরও চওড়া করতে পারে কেন্দ্র। তিনি আরও বলেন, “কোন বাজেট ভাল হয়েছে, বিষয়টা জনগণের উপর ছেড়ে দিচ্ছি আমরা।”
আরও পড়ুন: টেলিপাড়ার ভোটে ধাক্কা ‘বিশ্বাস ভাইদের’, হারল বিজেপি-ও
আরও পড়ুন: ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী শ্রীরামপুরের তৃণমূল কাউন্সিলর
বিরোধীরা বলছেন, রাজ্য সরকার যে সব প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছে তা আগে থেকেই ছিল। কিন্তু কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি তারা এটাও বলছেন, এতগুলো প্রকল্পের কথা ঘোষণা করলেন ঠিকই, কিন্তু এর অর্থ সংস্থান কোথা থেকে হবে বাজেটে তার স্পষ্ট কোনও দিশা নেই। বাজেটে ব্যয় বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আয় বা রাজস্ব বাড়ানোর কোনও সুনির্দিষ্ট পথ দেখানো হয়নি।
এই বাজেটকে প্রতারণার বাজেট বলে উল্লেখ করেছে সিপিএম-কংগ্রেস। সিপিএমের পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “বিধানসভা নির্বাচনের আগে সাধারণ মানুষের মন জয় করার ব্যর্থ চেষ্টা এই বাজেট। অন্য দিকে, কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, “অসত্য তথ্য পরিবেশন করেছে সরকার।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy