উত্তরপ্রদেশে বিজেপি সুবিধাভোগী শ্রেণির সঙ্গে যোগাযোগের কাজ শুরু করে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই। ২৫ কোটি সুবিধাভোগীর একটা বড় অংশ স্বাভাবিক ভাবেই দেশের বৃহত্তম রাজ্য উত্তরপ্রদেশের। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি তথ্য নিয়ে লাভার্থী শাখা সুবিধাভোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। দলের লক্ষ্য ছিল, এক এক জন সুবিধাভোগী ধরে সেই পরিবারে সকলের ভোট বিজেপি-র ঝুলিতে আনা।
যোগী রাজ্য থেকে শিখতে চান বঙ্গ বিজেপি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
চার রাজ্যে ভাল ফল দেখে শুধু উজ্জীবনের আশাই দেখছেন না বঙ্গ বিজেপি-র নেতারা, দেখে শিখতেও চাইছেন। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের ফল বিশ্লেষণ করে যোগী রাজ্যের সাংগঠনিক অনুকরণের লক্ষ্য নেওয়ার ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় বিজেপি-র নির্দেশে ইতিমধ্যেই বাংলায় দলের ‘লাভার্থী শাখা’ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যে শাখা যুব মোর্চার অধীনে কাজ করবে। এখন সেই কাজ কী ভাবে করলে ভাল ‘ডিভিডেন্ড’ মিলবে তা বুঝতে উত্তরপ্রদেশের নেতাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার ভাবনাচিন্তাও শুরু হয়েছে। এমন পরিকল্পনার কথা স্বীকার করে রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘ভাল কিছু শেখায় কোনও হীনমন্যতা রাখতে নেই। এটা তো মানতেই হবে, উত্তরপ্রদেশে আমাদের সাংগঠনিক শক্তি বাংলার তুলনায় বেশি। তাই সেই রাজ্যের থেকে আমরা কাজের পদ্ধতি শিখতে চাই। কর্মীদের প্রশিক্ষিত করতে চাই।’’
নির্বাচনে সাফল্য পাওয়ার জন্য পাঁচ রাজ্যের ভোটের আগেই ‘লাভার্থী শাখা’ তৈরির উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় বিজেপি। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই শাখার উপরে নির্বাচনী প্রচারে সব থেকে বেশি জোর দেওয়া হয় উত্তরপ্রদেশে। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা (লাভ) যাঁরা পান তাঁদের ভোট সংগঠিত করাই ‘লাভার্থী শাখা’র কাজ। আলাদা করে নাম না দেওয়া হলেও ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের ভোট টানার উদ্যোগ নেয় বিজেপি। দলের হিসেব বলছে, ২০১৪ সালে বিজেপি দেশে ১৭.১ কোটি ভোট পেয়েছিল। মোদী সরকারের প্রথম পাঁচ বছরে দেশে ২৫ কোটি মানুষ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা পায়। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-র হিসেবে দল ভোট পায় ২২.৯ কোটি। গেরুয়া শিবিরের হিসেবে পাঁচ বছরে ৫.৮ কোটি ভোট বৃদ্ধির পিছনে সুবিধাভোগীদের (লাভার্থী) অবদান ছিল।
এই হিসেব থেকেই উত্তরপ্রদেশে বিজেপি সুবিধাভোগী শ্রেণির সঙ্গে যোগাযোগের কাজ শুরু করে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ২৫ কোটি সুবিধাভোগীর একটা বড় অংশ স্বাভাবিক ভাবেই দেশের বৃহত্তম রাজ্য উত্তরপ্রদেশের। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি তথ্য নিয়ে লাভার্থী শাখা সুবিধাভোগদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। দলের লক্ষ্য ছিল, এক এক জন সুবিধাভোগী ধরে সেই পরিবারে সকলের ভোট বিজেপি-র ঝুলিতে আনা। সেই উদ্দেশ্যে যে সব পরিবার সদস্য প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, রান্নার গ্যাস সংযোগ দেওয়ার উজ্জ্বলা যোজনা, কিষাণ নিথি, জীবন সুরক্ষা যোজনা, মুদ্রা লোন, আয়ুষ্মান ভারতের সুবিধা যাঁরা পেয়েছেন তাঁদের তালিকা তৈরি করা হয়। তার পর তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে উত্তরপ্রদেশ বিজেপি-র লাভার্থী শাখা। সঙ্গে বলা হয় এই সব প্রকল্প রূপায়নে যোগী আদিত্যনাথের সরকারের ভূমিকার কথাও উল্লেখ করে। বিশেষ করে এই সব পরিবারের মহিলা ভোট দলের ঝুলিতে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। জানা গিয়েছে, যোগীর রাজ্যে প্রচার পর্বে সর্বত্র ‘মহিলা লাভার্থী সম্মেলন’ করে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের দাবি, উত্তরপ্রদেশে এ বার বড় সংখ্যায় মহিলা ভোট পেয়েছে বিজেপি। ফল ঘোষণার দিন সন্ধ্যায় সে কথা জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও।
পশ্চিমবঙ্গে গত বিধানসভা নির্বাচনেও কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের ভোট নিজেদের সমর্থনে ইভিএম-বন্দি করার উদ্যোগ নিয়েছিল বিজেপি। এ নিয়ে রাজ্যে প্রচারও চালানো হয়। কিন্তু দলের সংগঠন সে ভাবে মজবুত না থাকায় তা কার্যকর হয়নি বলেই মনে করছেন বিজেপি-র বর্তমান রাজ্য নেতৃত্ব। এ বার তাই আলাদা করে লাভার্থী শাখা গঠন এবং তাতে জোর দেওয়ার পরিকল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়েও রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করতে ছাড়েননি সুকান্ত। তিনি বলেন, ‘‘এই রাজ্যেও কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধাভোগীর সংখ্যা অনেক। কিন্তু অনেকেই তা জানেন না। তৃণমূল সরকার অনেক প্রকল্প কেন্দ্রের টাকায় চালালেও নিজেদের আলাদা নাম দিয়ে দিয়েছে। তাই অনেক মানুষ বুঝতে পারেন না। আমরা এ বার সেই বোঝানোটায় জোর দেব। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রী কিষাণ নিধি, আয়ুষ্মান ভারতের মতো প্রকল্প রাজ্যে চালুই করেনি সরকার। আমরা এ নিয়ে মানুষের কাছে যাব।’’
শুধুই কি রাজ্য সরকারের দোষ না কি বিজেপি-র সাংগঠনিক শক্তিরও অভাব রয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে সুকান্ত বলেন, ‘‘সাংগঠনিক দুর্বলতা বলব না তবে প্রক্রিয়াগত ত্রুটি থাকতে পারে। দরকারে আমরা অন্যদের থেকে শিখব। আমি চেষ্টা করব যাতে উত্তরপ্রদেশে এই কাজ যাঁরা সফল ভাবে করেছেন তাঁরা বাংলায় এসে প্রশিক্ষণ দিন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy