শ্যামবাজারে বুধবার শুরু হওয়া বিজেপির ধর্না মঞ্চ। —নিজস্ব চিত্র।
গত শুক্রবারই শ্যামবাজারে ধর্নায় বসতে চেয়েছিল বিজেপি। পুলিশের বাধায় সেই সময় পিছু হটতে হয়। তার পর কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ নিয়ে বুধবার শুরু হল ধর্না। শ্যামবাজার মেট্রো স্টেশন থেকে বার হতেই ভূপেন বসু অ্যাভিনিউয়ের উপরে মঞ্চ। আর সেই মঞ্চের সামনে পা ঝুলিয়ে বসা বিজেপি নেতারা দেখালেন ঐক্যের ছবি। ডান ও বাঁ দিকে দলের দুই মহিলা রাজ্য সাধারণ সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং অগ্নিমিত্রা পাল। আর মাঝে দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদার, সুভাষ সরকার এবং শুভেন্দু অধিকারী পাশাপাশি। অনেক দিন পরে ঐক্যের ছবি দেখা গেল রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের মধ্যে। আরজি কর-কাণ্ডের জেরে পাশাপাশি বসলেন দিলীপ, সুকান্ত, শুভেন্দুরা। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষও গত লোকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়ায় হেরে যাওয়ার পরে রাজ্য স্তরের কোনও কর্মসূচিতে এই প্রথম বার।
তবে এমন ঐক্যের ছবিতেও পোশাকে আলাদা হয়ে রইলেন দিলীপ। বাকিরা সাদা পোশাকে থাকলেও ঘোষের পরনে ছিল খয়েরি পাঞ্জাবি। সঙ্গে বাটিক ছাপ উত্তরীয়। ধর্নামঞ্চের সামনে ভিড়ে মিশে থাকা রাজ্য বিজেপির এক নেতা বলেই ফেললেন, ‘‘দিলীপদা যে সবার চেয়ে আলাদা, সেটা দেখুন।’’ তিনি অবশ্য পোশাকের জন্য নয়, দেখালেন সমাবেশে আসা কর্মীদের অনেকেই মাঝে মাঝে দিলীপের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে যাচ্ছেন।
এই ধর্না পাঁচ দিন চলার কথা। প্রথম দিনেই দলের প্রধান নেতারা এসে গিয়েছেন। বাকি দিনে কী হবে? প্রশ্নের জবাবে এই ধর্না আয়োজনের দায়িত্বে থাকা বিজেপির রাজ্য সম্পাদক দীপাঞ্জন গুহ বললেন, ‘‘রোজই সবাইকে পাবেন। নতুন নতুন কিছুও দেখা যাবে।’’ প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাজ্য বিজেপি স্বাস্থ্য ভবন অভিযানের ডাক দিয়েছে। দলের ভাবনা, ওই অভিযানের সময়ে শ্যামবাজারের মঞ্চে প্রবীণ নেতারাই শুরুতে থাকবেন। বাকিরা মিছিলে হাঁটবেন। যা শুরু হবে উল্টোডাঙার হাডকো মোড় থেকে। সেই সময়ে আবার শ্যামবাজারের মঞ্চে লাগানো জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হবে স্বাস্থ্য ভবন অভিযানের গতিপ্রকৃতি।
রাজ্য বিজেপি চাইছে বুধবারের মতো বৃহস্পতিবারও যাতে এমন ‘ঐক্য’ দেখানো যায়। ‘‘লোকসভা নির্বাচনের পরে এই প্রথম বার বিজেপির এত জন সাংসদ কলকাতায় কোনও প্রকাশ্য কর্মসূচিতে। সংসদে ছিলেন। কিন্তু মঞ্চে দেখেছেন আগে,’’— প্রশ্ন উত্তর কলকাতার এক বিজেপি নেতার। কর গুণে বললেন, ‘‘লোকসভার সাত আর রাজ্যসভার এক মিলিয়ে আট জন সাংসদ একসঙ্গে।’’ প্রসঙ্গত, বুধবার সুকান্ত ছাড়াও উত্তরবঙ্গের চার সাংসদ হাজির ছিলেন। আলিপুরদুয়ারের মনোজ টিগ্গা, জলপাইগুড়ির জয়ন্ত রায়, মালদহ উত্তরের খগেন মুর্মু এবং রায়গঞ্জের কার্তিক পাল। বিধায়কদের মধ্যেও অনেকেই হাজির ছিলেন। তাঁরা সকলে বৃহস্পতিবারের কর্মসূচিতেও থাকবেন বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্য ভবন অভিযান পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো।
বুধবার সকলেই যে বেলা ১২টা থেকে হাজির ছিলেন তা নয়। তবে পরে এলেও অনেকে সন্ধ্যা পেরিয়েও ছিলেন মঞ্চে কিংবা আশপাশে। তুলনামূলক ভাবে সমাবেশে কম সময় ছিলেন বিরোধী দলনেতা। শুভেন্দু আসেন দুপুর ৩টে নাগাদ। বক্তৃতা করার পরে খুব বেশি সময় ছিলেনও না। বিকেল সাড়ে ৪টের আগে আগে মঞ্চ ছাড়েন। রাজ্য বিজেপিরই এক নেতার কথায়, ‘‘তিনি ‘বুড়িছোঁয়া’ হিসাবে হলেও যে এলেন, তাতে দলের মান বাঁচল। কারণ, শুভেন্দুদা না-এলে এটা নিয়েই সব চেয়ে বেশি আলোচনা হত।’’ শ্যামবাজার থেকে শুভেন্দু যান ধর্মতলায় বিজেপি প্রভাবিত সংগঠন ‘খোলা হাওয়া’র উদ্যোগে হওয়া অন্য একটি মিছিলে হাঁটতে। সেখানে বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত ছাড়াও ছিলেন ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ ছবির পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী।
তবে শ্যামবাজারের মঞ্চে থাকা শুভেন্দু আর মঞ্চ থেকে নামার পরের তিনি ছিলেন একেবারেই আলাদা। বিকেল সওয়া ৪টে নাগাদ মঞ্চে আসেন কাঁথির সাংসদ তথা শুভেন্দুর ছোট ভাই সৌমেন্দু অধিকারী। আর তার পরে পরেই মঞ্চ ছাড়ার সময়ে সুকান্তের উদ্দেশে রসিকতার সুরে শুভেন্দু বলেন, ‘‘একটা অধিকারীকে রেখে গেলাম।’’ আর মঞ্চ থেকে নেমে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে হুঁশিয়ারির সুরে তিনি বলেন, ‘‘সোমবারের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ না করলে মঙ্গলবার যদি পুলিশের গুলিতে কারও মৃত্যু হয় তার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দায়ী থাকবেন।’’ কোন কর্মসূচির জন্য গুলি চালানোর প্রসঙ্গ তুললেন, তা উল্লেখ না করলেও মঙ্গলবারই শুভেন্দু জানিয়েছিলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর ডাকে ‘নবান্ন চলো’ কর্মসূচিতে তিনি যোগ দিতে পারেন। যা আগামী মঙ্গলবার দুপুরে হতে চলেছে বলে সমাজমাধ্যমে প্রচার চলছে। এর জবাবও দেওয়া হয়েছে শাসকদল তৃণমূলের পক্ষে। দলের নেতা কুণাল ঘোষ সমাজমাধ্যমে এর সমালোচনা করে সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘‘যে বা যাঁরা গুলির কথা বলে প্ররোচনা দিচ্ছেন, তাঁদের গৃহবন্দি করুক পুলিশ।’’
বুধবার ঐক্য দেখা গেলেও একই চেহারায় শ্যামবাজারের ধর্না চালিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং স্বাস্থ্য ভবন অভিযান সফল করা নিয়ে চিন্তা থাকছেই পদ্ম-শিবিরে। কারণ, ধর্নার গোটা সময়ে মঞ্চের সামনে পর্যাপ্ত কর্মী হাজির রাখার নির্দেশ দেওয়া হলেও সেটা দেখা যায়নি বুধবার। নেতারা না-মানতে চাইলেও বৃহস্পতিবার উল্লেখযোগ্য জমায়েত হবে কি না তা নিয়েও চিন্তা রয়েছে দলের মধ্যে। সাংসদ, বিধায়ক, নেতারা বুধে ধর্নায় হাজির থাকলে বৃহস্পতিবারের অভিযানে কর্মী টানা যাবে কি না সেই চিন্তার পাশাপাশি টানা ধর্না চালিয়ে যাওয়া নিয়েও বেশ চাপে রাজ্য বিজেপি। পাড়ায় পাড়ায় সাধারণ মানুষের মিছিলের ‘অসংগঠিত’ ভিড়ের কাছে প্রধান বিরোধী দলের ‘সংগঠিত’ জমায়েত হেরে যাবে না তো! উঠছে সেই প্রশ্নও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy