রাজ্যের পদাধিকারীরা বাদে এই বৈঠকে ডাকা হয়েছে সব সাংগঠনিক জেলার সভাপতি, আহ্বায়ক এবং বিভাগ স্তরের নেতাদের। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সব মিলিয়ে আমন্ত্রিত দু’শো জনের মতো। বিধায়কদের না ডাকা না হলেও থাকবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বিধানসভায় মুখ্যসচেতক মনোজ টিগ্গা।
শনিবারের বৈঠকের আগে মেনুতে থাকতে পারে মাছের ঝোল। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
পুরভোট মিটে গিয়েছে। বিধানসভার মতো এ বারেও হতাশ করেছে ফলাফল। তবে সে সব পিছনে ফেলে আগামীর পরিকল্পনা করতে শনিবার ‘বিশেষ’ বৈঠক ডেকেছে রাজ্য বিজেপি। বৈঠক হবে কলকাতায়, জাতীয় গ্রন্থাগারের একটি সভাকক্ষে। ডাকা হয়েছে গোটা রাজ্যের সাংগঠনিক পদাধিকারীদের। গেরুয়া শিবির এই সমাবেশের নামই দিয়েছে, ‘বিশেষ সাংগঠনিক বৈঠক’। দলের দাবি, পুরভোটে পর্যুদস্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা যাতে পঞ্চায়েত নির্বাচনেও না হয় এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বেহাল সংগঠনের প্রভাব না পড়ে— সেই লক্ষ্যেই এটা প্রথম বিশেষ বৈঠক। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী দিনেও গোটা রাজ্যের সব নেতাকে একত্রিত করে এমন ‘বিশেষ’ বৈঠক মাঝেমাঝেই করতে চান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তবে শনিবারের বৈঠকে যে সমালোচনার স্বর উচ্চগ্রামে উঠতে পারে এমন আশঙ্কাও রয়েছে রাজ্য বিজেপি-র নেতাদের মধ্যে। যদিও সুকান্ত বলছেন, ‘‘এমন কোনও চিন্তা নেই। আমাদের মধ্যে কারও কারও মতান্তর থাকলেও মনান্তর নেই। সকলে মিলে সংগঠন মজবুত করাই আমাদের লক্ষ্য।’’
সুকান্ত নতুন রাজ্য কমিটি গঠন করার পর থেকেই দলের ভিতরে নানা বিরোধী স্বর মাথাচাড়া দেয়। বিধায়ক, সাংসদদের কয়েক জন সেই বিদ্রোহী স্বরে কেউ প্রকাশ্যে, কেউ আড়ালে গলা মিলিয়েছেন। রাজ্য কমিটি থেকে বাদ যাওয়া জয়প্রকাশ মজুমদার, রীতেশ তিওয়ারিরা বেশি সরব হওয়ায় তাঁদের সাময়িক বরখাস্ত করেছে রাজ্য নেতৃত্ব। কিন্তু রাজ্য নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন এমন অনেকেই আড়ালে নতুন কমিটির সমালোচনা করে চলেছেন। তাঁদের মধ্যে যাঁকে নিয়ে জল্পনা বেশি, তিনি হুগলির সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপি-র অন্যতম সাধারণ সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায়। দীর্ঘ দিন রাজ্যের বাইরে থাকার পরে শুক্রবারই তিনি বাংলায় কোনও কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। হুগলিতে ইউক্রেন থেকে ফেরা কয়েক জন বাঙালি পড়ুয়ার বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁকে নিয়ে প্রভূত জল্পনা রয়েছে গেরুয়া শিবিরে। কারণ, উত্তরাখণ্ডে ভোট প্রচারের মধ্যেই তিনি বনগাঁর মতুয়া সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে বৈঠক করেন। শান্তনু আবার বিদ্রোহী শিবিরের অন্যতম মুখ। এর পাশাপাশি দিল্লিতে লকেট-রীতেশ বৈঠক হয় সম্প্রতি। পরে পুরভোটের ফল ঘোষণার দিনে দলের ভিতরে ‘আত্মবিশ্লেষণ’ চেয়ে টুইট করেছেন লকেট। শনিবারের বৈঠকে সেই লকেট কি সরব হবেন? বিভিন্ন জেলা থেকে আসা প্রতিনিধিদের কেউ কেউ কি বর্তমান রাজ্য কমিটির কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন? এমন প্রশ্ন রয়েছে বিজেপি-র অন্দরে। তবে জাতীয় গ্রন্থাগারে হতে চলা বৈঠকের কর্মসূচি যে ভাবে সাজানো হয়েছে তাতে লকেটরা চাইলে সেই সুযোগ পাবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
রাজ্যের পদাধিকারীরা বাদে এই বৈঠকে ডাকা হয়েছে সব সাংগঠনিক জেলার সভাপতি, আহ্বায়ক এবং বিভাগ স্তরের নেতাদের। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সব মিলিয়ে আমন্ত্রিত দু’শো জনের মতো। বিধায়কদের ডাকা না হলেও পদাধিকারবলে থাকবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বিধানসভায় দলের মুখ্যসচেতক মনোজ টিগ্গা।
আমন্ত্রিতদের কাছে যে চিঠি রাজ্য দফতর থেকে পাঠানো হয়েছে, সেখানে বলে দেওয়া হয়েছে, শনিবারের ‘বিশেষ সাংগঠনিক বৈঠক’-এ কখন কী হবে। সেখানে আলাদা করে দেড় ঘণ্টা সময় রাখা হয়েছে খাওয়া দাওয়ার জন্য। বলা হয়েছে, সকলকে ১২টার সময়ে এসে নাম নথিভুক্ত করতে হবে। সাড়ে ১২টা থেকে ভোজন শুরু। আর বৈঠক শুরুর সময় দুপুর ২টো। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, আমন্ত্রিত নেতাদের খাওয়াদাওয়ার জন্য ডাল, ভাত, তরকারি, চাটনির সঙ্গে থাকতে পারে পোনা মাছের ঝোল। মাছে-ভাতে ভোজ সারার পরে শুরু হবে বৈঠক। দুপুর ২টো থেকে বৈঠক শুরুর কথা থাকলেও জানা গিয়েছে, তা পিছিয়ে হবে বেলা ৩টেয়। প্রথম এক ঘণ্টা পুরভোটে জয়ী দলের ৬৩ জন কাউন্সিলরকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে রাজ্য কমিটির পক্ষে। এর পরে তাঁরা থাকতে পারবেন না সভাকক্ষে। ৩টে থেকে ৫টা— দু’ঘণ্টা চলবে রুদ্ধদ্বার বৈঠক।
ওই বৈঠকেও কারা বক্তব্য রাখার সুযোগ পাবেন তাঁদের তালিকাও তৈরি করে রেখেছে রাজ্য কমিটি। শুরুতেই বলবেন সুকান্ত। এ ছাড়াও বক্তার তালিকায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয়, সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারী। একেবারে শেষে বক্তব্য রাখতে পারেন রাজ্য সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী। কী ভাবে আসন্ন সাংগঠনিক নির্বাচন পর্যন্ত রাজ্য থেকে বুথ স্তরে কাজ করতে হবে তার সবিস্তার নির্দেশ দিতে পারেন তিনি।
শুধুই বক্তব্য, পুরভোটে কেন এমন বিপর্যয় তার পর্যালোচনা হবে না? এমন প্রশ্নের জবাবে সুকান্ত বলেন, ‘‘এটা পুরভোটের পর্যালোচনা বৈঠক নয়, একেবারেই সাংগঠনিক বৈঠক। সেখানে সব কিছুই আলোচনা হবে। তাতে পুরভোটের কথাও উঠে আসতে পারে। তবে এমনটা ঠিক নয় যে, পুরভোটের ফল দেখার পরে এই বৈঠক ডাকা হয়েছে। অনেক আগে থেকেই এটা ঠিক করা ছিল।’’
ওই বৈঠকে রাজ্য কমিটির বিরুদ্ধে কোনও সমালোচনার ভয় পাচ্ছেন কি? না কি, কাউকে মুখ খুলতেই দেওয়া হবে না? সুকান্ত বলেন, ‘‘এমন কোনও ব্যাপার নেই। বৈঠকে সকলেই কথা বলতে পারবেন। কারও কিছু বলার থাকলে তা অবশ্যই শোনা হবে। তবে আবারও বলছি, এটা সাংগঠনিক বৈঠক, ভোটের পর্যালোচনা বৈঠক নয়। বিজেপি শুধুই ভোট নির্ভর রাজনীতি করে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy