সোমবার নবান্নে ‘মা’ প্রকল্পের সূচনায় মুখ্যমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র
বানান বিপর্যয়ে একসময় হাসির খোরাক হয়ে উঠেছিল ‘ডিম্ভাত’। রাতারাতি নেটমাধ্যমে হুল্লোড় শুরু হয়েছিল তা নিয়ে। বছর দুয়েক আগে ‘হাসির খোরাক’ সেই ডিম আর ভাতই ভোটের আগে তৃণমূলের ‘তুরুপের তাস’ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন দলের একটা বড় অংশ। সোমবার ‘মা’ প্রকল্পের সূচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই প্রকল্পে কলকাতা পুর এলাকার দুঃস্থ মানুষদের জন্য মাত্র ৫ টাকায় পেটভরে ডিম-ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। তফাত শুধু বানানে। সেটি ছিল ‘ডিম্ভাত’। আর এটি ‘ডিম-ভাত’।
সোমবার নবান্ন থেকে ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠক চলাকালীন ‘মা’ প্রকল্পের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। আপাতত কলকাতার ১৬টি বরোর ১৪৪টি ওয়ার্ডে এই প্রকল্প শুরু হচ্ছে। মমতা জানান, প্রতিদিন দুপুর ১টা থেকে ২টো পর্যন্ত প্রত্যেক ওয়ার্ডে ৫০০ জনকে পেটভরে ভাত, ডাল, সবজি এবং ডিম দেওয়া হবে। সংক্ষেপে ডিম-ভাত। আপাতত প্রকল্পটি কলকাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও আগামী দিনে রাজ্যের সর্বত্র সেটি চালু করা হবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ডিম-ভাতের দায়িত্ব আপাতত আছে কলকাতা পুরসভার হাতে।
মমতার এই ঘোষণা বছর দুয়েক আগের ‘ডিম্ভাত’ স্মৃতি উস্কে দিয়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে ব্রিগেডে ২২টি বিরোধী দলকে নিয়ে বিশাল সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন মমতা। দূরদূরান্ত থেকে যাঁরা সমাবেশে যোগ দিতে আসবেন, তাঁদের পেট ভরে ডিমের ঝোল ও ভাত খেতে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছিল সমাবেশের আয়োজক তৃণমূল। সেই নিয়ে প্রচার চালাতে গিয়েই ঘটেছিল বানান-বিভ্রাট। একটি দেওয়াল লিখনে ডিম-ভাতের পরিবর্তে লেখা হয়েছিল ‘ডিম্ভাত’।
নেটমাধ্যমে সেই বানানের ছবি সামনে আসতেই ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ শুরু হয়ে যায়। বানান ভুল নিয়ে যেমন কটাক্ষ উড়ে আসে, তেমনই নিরন্ন মানুষকে ডিমের ঝোল-ভাত খাইয়ে তৃণমূল ব্রিগেড ভরাতে চাইছে বলেও অভিযোগ ওঠে। যদিও তার দু’সপ্তাহের মাথায় ব্রিগেডে বামেদের সমাবেশেও ডিমের ঝোলে ভাত মেখেই তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে দেখা যায় লালফৌজের সৈনিকদের। বাম শিবিরের নেতাদের অনেকে সাফাই দেন, এককালে ব্রিগেডে সমবেত সমর্থকদের মাছ-ভাত খাওয়ানো হলেও দলের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মেনু বদল হয়েছে। মাছের বদলে এসেছে ডিম।
বস্তুত, স্বল্প খরচে সুষম আহার বলতে এখনও বাংলার মানুষ ডিম-ভাতই বোঝেন। অর্থনৈতিক সঙ্কট, অতিমারির প্রকোপে এই মুহূর্তে দু’বেলার খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছেন রাজ্যের এক বড় অংশের মানুষ। কিন্তু পেট না ভরলেও ভোটবাক্স ভরতেই হবে। তার জন্য প্রচারে কোনও খামতি নেই রাজনৈতিক দলগুলির। তার জন্য এক দিনে পাঁচ জায়গায় সভা করতেও আপত্তি করছেন না বিভিন্ন দলের নেতারা। ক্ষমতায় এলে সরাসরি সাধারণের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকে যাবে, এমন প্রতিশ্রুতি দিতেও পিছপা হচ্ছেন না তাঁরা। কিন্তু পেটে কিল মেরে টাকার অপেক্ষা করা যে সাধারণের পক্ষে সম্ভব নয়, দক্ষ রাজনীতিক হিসেবে সে কথা বোঝা অসাধ্য নয় মমতার। তাই নাড়িনক্ষত্র মিলিয়ে সকলের আগে ভাতের ব্যবস্থাই করেছেন তিনি। সঙ্গে ডিম। ডিম-ভাত। বিনামূল্যে রেশনে চাল-ডালের পর মমতার এই পদক্ষেপকেও ভোটবাজারে তৃণমূলের পালে হাওয়া তোলার জন্য মমতার ‘মাস্টারস্ট্রোক’ বলে মনে করছেন শাসক শিবিরের নেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy