Advertisement
E-Paper

নদী এবং পুকুরের কথা বলে কি অবস্থান বদলের ইঙ্গিত দিয়েছেন? জেলা নেতাদের কী উত্তর অধীরের?

লোকসভার সাম্প্রতিক অধিবেশনে অনাস্থা বিতর্কে অংশ নিয়ে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) হওয়ার পরে শনিবারই প্রথম কলকাতায় এসে দলের জেলা সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন অধীর।

Adhir Ranjan Chowdhury.

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৩ ০৬:০৭
Share
Save

পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেস আসন ছাড়াই (কোনও আসনে ভোটে না লড়ে) রাজনীতি করবে বলে অন্তত তাঁর জানা নেই বলে স্পষ্ট করে দিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।

শনিবার কলকাতায় বিধান ভবনে দলের জেলা সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে রাজ্যে তৃণমূলের সম্পর্কে তাঁদের অবস্থান বদল হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে অধীর বলেন, ‘‘আমরা আমাদের মতো লড়াই করছি। অবস্থান বদল হলে, তখন সকলেই দেখতে পাবেন।’’ আসন ভাগাভাগির প্রশ্নেও প্রদেশ সভাপতির মন্তব্য, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল দল চালান। নিজের দলের জন্য ৪২টি আসন চাইতে পারেন, ৪২০টিও চাইতে পারেন! কংগ্রেস বিভিন্ন রাজ্যে আসন ছাড়াই রাজনীতি করবে, এমন কিছু ঠিক হয়েছে বলে আমার জানা নেই।’’

বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র পটনা এবং বেঙ্গালুরুর বৈঠকে সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী-সহ কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে মমতার ‘রসায়ন’ চোখ টেনেছে রাজনৈতিক মহলের। তার পরে জাতীয় রাজনীতিকে ‘নদী’ এবং রাজ্যের রাজনীতিকে ‘পুকুরের’ সঙ্গে তুলনা করে সম্প্রতি লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরের বক্তব্য ছিল, এখন পুকুরের থেকে বেশি নদী নিয়েই ভাবতে হচ্ছে। আবার ১৪ অগস্ট, স্বাধীনতা দিবসের আগের দিনের এক অনুষ্ঠানে মমতা আহ্বান জানিয়েছেন এ রাজ্যে ‘ইন্ডিয়া’র প্রতিটি ভোট (অর্থাৎ, সমস্ত বিজেপি-বিরোধী ভোট) তৃণমূলকে দেওয়ার জন্য। এই অবস্থায় অধীরের এ দিনের মন্তব্যকে তাই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে।

আদতে অধীরের মন্তব্য সামনে আসার পর থেকে নদী এবং পুকুরের প্রশ্নে জলঘোলা হয়েই চলেছে বাংলার কংগ্রেসে! তাঁর ওই মন্তব্য বাংলায় তৃণমূলের প্রতি নরম অবস্থানের ইঙ্গিত কি না, এ দিন দলের বৈঠকে সেই প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেসের জেলার নেতারা। বৈঠকে উঠে এসেছে রাজ্যে কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের একাংশের মধ্যে ‘বিভ্রান্তি’র প্রসঙ্গও। অধীর অবশ্য ‘বিভ্রান্তি’র প্রশ্ন খারিজ করে দিয়েছেন। এআইসিসি নির্দিষ্ট কিছু বার্তা দেওয়ার আগে জেলা নেতৃত্বকে নিজেদের মতো করে কিছু ধরে না নেওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।

লোকসভার সাম্প্রতিক অধিবেশনে অনাস্থা বিতর্কে অংশ নিয়ে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) হওয়ার পরে শনিবারই প্রথম কলকাতায় এসে দলের জেলা সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন অধীর। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রমৃত্যুর প্রেক্ষিতে রাজ্যের সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র‌্যাগিং বন্ধ করার লক্ষ্যে আইন প্রণয়নের দাবি তুলে প্রস্তাব পাশ হয়েছে বৈঠকে। তবে সেই বৈঠকেই তৃণমূলের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন জেলার নেতারা।

সূত্রের খবর, একাধিক জেলা সভাপতি এ দিনের বৈঠকে জানতে চান, নদী ও পুকুরের কথা বলে প্রদেশ সভাপতি কি অবস্থান বদলের কোনও ইঙ্গিত দিয়েছেন? লোকসভা ভোট এবং ‘ইন্ডিয়া’র প্রেক্ষিতে বাংলা নিয়ে কি কংগ্রেস হাই কম্যান্ডের অন্য কোনও ভাবনা আছে? দলীয় সূত্রের বক্তব্য, ক্ষুব্ধ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বৈঠকে বলেন, এই প্রসঙ্গে আলোচনার সময় এখনও আসেনি। তার জন্য এই বৈঠক ডাকাও হয়নি। তা ছাড়া, তিনি বলতে চেয়েছেন, জাতীয় স্বার্থকে রাজ্যের ঊর্ধ্বে দেখতে হবে। তার জন্যই নদী-পুকুরের উদাহরণ টেনেছিলেন। পরিপ্রেক্ষিত না বুঝেই জেলা নেতারা এই সব কথা বলছেন বলে মন্তব্য করেন অধীর।

দলের বৈঠকে প্রদেশ সভাপতি আরও জানিয়েছেন, লোকসভা ভোটের জন্য রাজ্যওয়াড়ি কৌশল চূড়ান্ত করার আগে এআইসিসি সংশ্লিষ্ট রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করছে। বাংলার জন্য সেই আলোচনা এখনও হয়নি। তা নিয়ে এখনও তাঁকেও কেউ কোনও বার্তা দেয়নি। রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কংগ্রেসকে কেমন প্রাণপণ লড়তে হচ্ছে, কর্মীদের জেলে যেতে হচ্ছে, কয়েক দিন আগে নদিয়ার নাকাশিপাড়ায় কংগ্রেসের উপরে কী ভাবে গুলি চালিয়ে আক্রমণ হয়েছে— এ সবই তিনি প্রত্যক্ষ ভাবে জানেন এবং নিজেও লড়ছেন বলে উল্লেখ করেছেন অধীর। আর সেই সূত্রেই তিনি জানান যে, বিভিন্ন রাজ্যে কোনও আসনে না লড়ে কংগ্রেস রাজনীতি করবে বলে কিছু ঠিক হওয়ার কথা তাঁর অন্তত জানা নেই।

দলের এক জেলা সভাপতিও পরে বলেছেন, ‘‘ধূপগুড়ির উপনির্বাচনে আমরা তো সিপিএমকে সমর্থন করছি। সুতরাং, রাজ্যে অবস্থান বদলের প্রশ্ন এখনও নেই।’’ অধীরের সাক্ষাৎকারের পরে প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র ও আইনজীবী-নেতা কৌস্তভ বাগচী সমাজমাধ্যমে মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘পুকুর-নদী বুঝি না। আমাদের কাছে তৃণমূল চোর ছিল, আছে এবং থাকবে। জাতীয় রাজনীতির জন্য আর গিনিপিগ হতে রাজি নই।’’ সেই প্রসঙ্গও এ দিনের বৈঠকে উঠেছিল। কংগ্রেসের হয়ে ‘লড়াকু’ ভাবমূর্তি তুলে ধরে তার পরে সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো মুখপাত্রের বিজেপিতে চলে যাওয়ার দৃষ্টান্ত মনে করিয়ে জেলা নেতৃত্বের কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন, দলের কেন নির্দিষ্ট লাইন থাকবে না? যে কেউ কি যেমন খুশি মন্তব্য করে যেতে পারবেন? সূত্রের খবর, এর পর থেকে ‘লাইন’ লঙ্ঘন করলে দলীয় স্তরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রদেশ সভাপতি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Adhir Ranjan Chowdhury Congress

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}