নিজাম প্যালেসে সিবিআই জেরার মুখোমুখি হতে চলেছেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
এসএসসি দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করা হল প্রাক্তন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে। বৃহস্পতিবার সকালেই তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিল সিবিআই। নিজাম প্যালেসে ছ’ঘণ্টা টানা জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হয় কল্যাণময়কে। সন্ধ্যায় তাঁকে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সংক্ষিপ্ত মেডিক্যাল পরীক্ষার পর তাঁকে আবার নিজাম প্যালেসে ফিরিয়ে এনেছে সিবিআই। সেখানে তাঁকে আবার জেরা করা শুরু হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রের খবর। শুক্রবার তাঁকে আদালতে হাজির করাবে সিবিআই।
ঘটনাচক্রে, কল্যাণময়কে গ্রেফতার করার কাছাকাছি সময়েই পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে হেফাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন করে সিবিআই। ফলে জল্পনা শুরু হয়েছে, কল্যাণময়-পার্থকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হবে কি না, তা নিয়ে। যদি আদালত শুক্রবার পার্থকে সিবিআই হেফাজতে পাঠায়, তা হলে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে রাজ্যের মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতির মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
গ্রেফতার করার পর যখন কল্যাণময়কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে তিনি শুধু কোনও মতে বলেন, ‘‘যেটা বলেছি, সেটাই সত্যি।’’ কিন্তু কী বলেছিলেন তিনি? একটি সূত্রের দাবি, কল্য়াণময় বলেছিলেন, ‘‘পর্ষদ কলঙ্কমুক্ত হবে।’’ তবে তিনি নিজে ওই বিষয়টিই বলতে চেয়েছেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই যে, কল্যাণময় নিজেই নিয়োগপত্র দিতেন। গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি নিয়োগের ক্ষেত্রেও তাঁর সক্রিয় ভূমিকা থাকত।
এসএসসি দুর্নীতির মামলায় ভুয়ো নিয়োগপত্রে সই করার অভিযোগ রয়েছে কল্যাণময়ের বিরুদ্ধে। এর আগে তাঁকে জেরা করেছিল ইডি। বৃহস্পতিবার তাঁকে সিবিআই বেশ কিছু নথিপত্র সঙ্গে নিয়ে নিজাম প্যালেসে তলব করেছিল। কেন্দ্রীয় সংস্থার তলব পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে সময়ের আগেই সিবিআইয়ের দফতরে পৌঁছে যান কল্যাণময়। তবে সূত্রের খবর তিনি, তদন্তকারীদের চাওয়া সমস্ত নথি জমা দিতে পারেননি। কিছু নথি হারিয়ে গিয়েছে বলেও জানান তিনি। দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত টানা জেরা করা হয় মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতিকে।
স্কুলে শিক্ষক ও কর্মী নিয়োগ মামলায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে কল্যাণময়েরর বিরুদ্ধে। তাঁর নির্দেশে বেআইনি নিয়োগপত্র তৈরি হয়েছিল বলে জানায় কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে তৈরি প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের কমিটি। এই মামলায় কল্যাণময়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। তার পরও পর্ষদের সভাপতি পদে তিনি থাকায় প্রশ্ন ওঠে বিভিন্ন মহলে। গত ২৩ জুন কল্যাণকে সরিয়ে দেয় নবান্ন। ওই পদে আসেন রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়।
প্রায় ১০ বছর মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি ছিলেন কল্যাণময়। ২০১২ সাল থেকে ওই পদে রয়েছেন তিনি। সিবিআই সূত্রে খবর, তাঁর আমলে এসএসসির নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল কল্যাণময়কে। নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনও সুপারিশ আসত কি না, এলে তা কোথা থেকে আসত, কারা সেই নির্দেশ দিতেন, এ নিয়েও প্রশ্ন করা হয় কল্যাণময়কে। তবে তিনি সেই সব প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি বলেই সিবিআই সূত্রের দাবি। সিবিআই সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার বেলা ৪টে নাগাদ কল্যাণময়কে গ্রেফতার করার সিদ্ধান্ত নেয় সিবিআই। ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁর থেকে যে সমস্ত জবাব পাওয়া গিয়েছিল, তা দিল্লিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দিল্লির অফিসারদের পরামর্শ অনুযায়ীই কল্য়াণময়কে গ্রেফতার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিকেল ৪টের কিছু পরেই তাঁকে গ্রেফতার করে সিবিআই। তার পরে সন্ধ্যায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে মেডিক্যাল টেস্টের জন্য। তবে সেখানে সিবিআই অফিসারেরা বেশি সময় ব্যয় করেননি। মিনিট পাঁচেক বড়জোর। তার পরেই আবার কল্যাণময়কে নিজাম প্যালেসে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে আবার জেরা করতে শুরু করেছেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা। শুক্রবার কল্যাণময়কে আদালতে হাজির করাবে সিবিআই। তাঁকে সিবিআই হেফাজতে নেওয়ারই আবেদন জানানো হবে আদালতে।
এসএসসি দুর্নীতি মামলায় বেআইনি ভাবে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে বারবার উঠে এসেছে কল্যাণময়ের নাম। রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যাকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার মামলাতেও তাঁর নাম প্রকাশ্যে আসে। কিছু দিন আগে এসএসসি দুর্নীতির তদন্তে কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকরা কল্যাণময়ের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশিও চালায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy